Friday, March 22

মুশফিকের ডাবলে জয় দেখছে বাংলাদেশ

শেষ ৫ ম্যাচে কোনো ইনিংসে দলীয় ৩’শ রানের দেখা মেলেনি। এমনকি ব্যক্তিগত কোনো সেঞ্চুরিও ছিল না টাইগারদের। ৬ ম্যাচে টানা হার। এর মধ্যে টেস্টে নবাগত আফগানিস্তানের বিপক্ষেও লজ্জার হার যেন উপহাস করছিলো। সব মিলিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকার অবস্থা বাংলাদেশ টেস্ট দলের। টাইগারদের ব্যাটিং শক্তির ডানা যেন কেউ বেঁধে রেখেছিলো। তবে মুশফিকুর রহীম ও মুমিনুল হক সৌরভের ব্যাটে উড়লো বাংলাদেশ। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ব্যাট করতে নেমে গতকাল ৬ উইকেট হারিয়ে ৫৬০ রানে ইনিংস ঘোষণা করে দল।

যেখানে মুশফিক অপরাজিত ছিলেন নিজের তৃতীয় ও দেশের পঞ্চম টেস্ট ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে। মুুমিনুল আউট হন ১৩২ রান করে। তবে দু’জনের ২২২ রানের জুটিতে হয়েছে রেকর্ডও। টানা ব্যাটিং ব্যর্থতার পর এক ইনিংসে এসেছে দু’জনের জোড়া সেঞ্চুরি। যা শেষ পর্যন্ত স্কোর বোর্ডে তৃতীয় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রেহের জায়গাও করে নিয়েছে। ২০১৭তে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েলিংটন টেস্টে ৫৯৫/৮ দ্বিতীয় ও ২০১৩ তে শ্রীলঙ্কার গলে ৬৩৮ রয়েছে শীর্ষে। এটি বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে ৯ম দলীয় ৫’শ ছাড়ানো ইনিংস। এমন ঘুরে দাঁড়ানো ম্যাচে মুশফিক খেলেছেন ৩১৮ বল। ২৮ চারের মারে করেছেন অপরাজিত ২০৩ রান। বাংলাদেশের লিড ২৯৫ রানের। শেষ বিকালে জবাব দিতে নেমে দ্রুত ২ উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। এখন তারা পিছয়ে আছে ২৮৬ রানে। আজ তাদের সামনে ইনিংস হার এড়ানোর লড়াই। হাতে আছে ৮ উইকেট। তরুণ অফস্পিনার নাঈমের আঘাতে পরপর দুই বলে আউট জন মাসভাউরে ও টিরিপানো কোন রান যোগ না করেই। হ্যাটট্রিকের সুযোগ ছিলো। কিন্তু ক্রিজে এসে অভিজ্ঞ টেইলর তা ঠেকিয়ে দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ১ রান করে টিকে আছেন। কাসুজা ৮ রান করে তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন। জিততে হলে বাংলাদের প্রয়োজন আর ৮টি উইকেট।
এর আগে দ্বিতীয় দিনের প্রায় পুরোটাই দখলে ছিল মুমিনুল ও মুশফিকের। জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংসে করে ২৬৫ রান। জবাব দিতে নেমে ৩ উইকেট হারিয়ে ২৪০ রান তুলে মাঠ ছেড়েছিল টাইগাররা। ৭৯ রানে মুমিনুল ও ৩২ রানে মুশফিক ছিলেন অপরাজিত। ২৫ রানে পিছিয়ে থেকে তৃতীয় দিন শুরু করেছিলেন দলের দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। শুরুতেই টেস্ট ক্যারিয়ারে নিজের ৯ম সেঞ্চুরি তুলে নেন টাইগার অধিনায়ক। এতদিন এই রেকর্ড শুধু ছিল তামিমের ইকবালের দখলে। এই টেস্টে কথা দিয়েছিলেন তিনি তিন অংকের রান করার। সেই কথাটাই তিনিই আগে রাখলেন। ২৩৪ বলে ১৪ বাউন্ডারি হাঁকিয়ে করেন ১৩২ রান। তখন বেরিয়ে এসে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে ওড়াতে চেয়েছিলেন মুমিনুল। তবে দারুণ ক্যাচ মুঠোয় জমিয়ে তাকে চমকে দিলেন আইন্সলে এনডিলোভু। টেস্টে এটাই এই স্পিনারের প্রথম উইকেট। তাতেই ভাঙে ২২২ রানের জুটি। বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে সবচেয়ে বেশি দুইশ ছোঁয়া জুটির রেকর্ড এখন মুশফিক ও মুমিনুলের। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের তৃতীয় দিন সোমবার এই অর্জনে নাম লিখিয়েছেন তারা। দুজনের জুটির ডাবল সেঞ্চুরি হলো এই নিয়ে তিনটি। ছাড়িয়ে গেছেন তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েসের করা দুটি জুটিকে।
বাকি সময়টা বলা চলে শুধুই মুশফিকের। নিজের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরিতে পৌছালেন বাউন্ডারি হাঁকিয়ে। মুশফিকের ব্যাট থেকেই বাংলাদেশের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি এসেছিল ২০১৩তে শ্রীলঙ্কার গলে। এরপর সবশেষ ২০১৮ তে এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ভারতের বিপক্ষে ২০১৭র ফেব্রুয়ারিতে ১২৭ রানের ইনিংসটা ছিল তার শেষ সেঞ্চুরি। এরপর ২৩ ইনিংস আর কোন সেঞ্চুরির দেখা পাননি। তবে ২০১৮এর নভেম্বরে মিরপুর মাঠেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে রানে ফিরেন। এরপর আরো ১০ ইনিংসে নেই কোন সেঞ্চুিরর দেখা। তবে গতকাল তৃতীয় ডাবল হাঁকালেন তিনি। এই সেঞ্চুরিটি অবশ্য শুধুই ব্যাটসম্যান হিসেবে। কারণ এর আগে তার ব্যাট থেকে সেঞ্চুরি এসেছে উইকেটকিপার অধিনায়ক হিসেবে। এক ব্যাটে মুশফিক এদিন গড়েছেন অনেক রেকর্ড। লিখেছেন অনেক আক্ষেপ মেটানো গল্প। বাংলাদেশের টেস্টে সর্বাধিক রানও তার দখলে তামিমকে ছাড়িয়ে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুর টেস্ট শুরুর আগে দুই জনের মধ্যে ব্যবধান ছিল বেশ। ম্যাচ শুরুর আগে মুশফিকের চেয়ে ১৫৪ রানে এগিয়ে ছিলেন তামিম। টেস্টের দ্বিতীয় দিনে এই ওপেনার আউট হন ৪১ রানে। মুশফিক উইকেটে যান পাঁচ নম্বরে। গতকাল ১৩০ ইনিংসে তার সংগ্রহ এখন ৪৪১৩। তামিম ১১৫ ইনিংস খেলে করেছেন ৪৪০৪ রান।

Leave a Reply