Friday, April 19

মেলা থেকে বই নিয়েই ফিরছেন দর্শনার্থীরা

এখন মেলা সরগরম। দর্শনার্থীদের ভিড় প্রচুর। বিকিকিনিও হচ্ছে বেশ। মেলায় আগত দর্শনার্থীরা বই নিয়েই গ্রন্থমেলা ত্যাগ করছেন। হাতে হাতে বইয়ের ব্যাগ এ এক পড়–য়া জাতির পরিচয় বহন করছে। মাসব্যাপী চলা অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বরাবরই শেষার্ধ্বে বইপ্রেমীদের ভিড় বাড়ে। এসময়কে টার্গেট করে প্রকাশকরাও। কারণ শেষ সময়ে যারা মেলায় আসেন তারা যাচাই বাছাই নয়, টার্গেট করা বই কিনতেই মেলায় আসেন।

এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গত কয়েকদিন থেকেই গ্রন্থমেলায় ভিড় বেড়েছে। গতকাল ছিল অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২৩তম দিন। এদিন বিকাল ৩টায় গ্রন্থমেলার দ্বার খোলার পর দর্শনার্থীদের ঢল নামে। নিরাপত্তা গেইট পেরিয়ে সকলে ছুটে যাচ্ছেন পছন্দের বইয়ের খোঁজে। আর কিনে নিচ্ছেন সেটি। বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যায় মেলা আরো বেশি জমজমাট। লেখক-প্রকাশক ও পাঠকের মিলনমেলায় পরিণত হচ্ছে মেলা প্রাঙ্গণে। জানতে চাইলে ঐতিহ্য প্রকাশনীর কর্ণধার আরিফুর রহমান নাঈম বলেন, বেচাবিক্রি ভালো হচ্ছে। কারণ এখন যারা মেলায় আসছেন তাদের অধিকাংশই বই কিনতে আসেন। বরাবরই মেলায় এ চিত্র দেখা যায় যে, শেষ সময়ে মেলায় বিক্রি বাড়ে। অন্য প্রকাশের সামনে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফসিন জাহানের সঙ্গে। তিনি বলেন, মেলার এখন শেষ সময়। সব ধরনের নতুন বই-ই এখন পাওয়া যাচ্ছে। এ সময়কে বই কেনার জন্য উপযুক্ত মনে হয়। কারণ যেসব বই আসার কথা তার প্রায় সবক’টিই মেলায় চলে আসে এর মধ্যে। এদিকে গতকাল বিকাল সোয়া ৪টার দিকে মেলার দুই প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের প্রস্থান গেইট দিয়ে যারাই বের হচ্ছেন তাদের অধিকাংশের হাতেই বই রয়েছে। কথা হয়, পান্থপথের বাসিন্দা রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। বলেন, এর আগে একদিন মেলায় আসলেও বই কেনা হয়নি। আজ এসে দু’টি বই কিনেছি। একটি রাইফেল রোটি আওরাত, অন্যটি আমার দেখা নয়াচীন। শামীমা রহমান নামে আরেক দর্শনার্থী বলেন, বন্ধুদের নিয়ে মেলায় এসেছি। একে অপরকে বই উপহার দিয়েছি। এটা আমাদের প্রতি মেলার চিত্র। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বই উপহার দিয়েছি, নিয়েছি। আবার নিজেরাও নিজেদের জন্য বই কিনেছি। কথা প্রকাশের বিক্রয়কর্মী জাফিরুল ইসলাম বলেন, এখন বেচাবিক্রি ভালো হচ্ছে। যারাই মেলায় আসছেন বই কিনছেন। অন্য প্রকাশের জনসংযোগ কর্মকর্তা আলাউদ্দিন টিপু বলেন, পুরো মাসই দর্শনার্থীরা বই কিনছেন। তবে শেষ সময়ে এর মাত্রা বেড়েছে। আশা করি মেলার শেষ অবধি বিক্রি আরো বাড়বে। এদিকে গত পরশু গ্রন্থমেলায় নতুন বই এসেছে ১৫৪টি। মেলায় এসেছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নিয়ে বাংলা ভাষায় প্রথম দার্শনিক গ্রন্থ ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লব: দার্শনিক ভাবনা’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মো. নূরুজ্জামানের লেখা এই বই চিন্তার জগৎকে আরো প্রসারিত করবে বলে ধারণা করছেন পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীরা। এর আগে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বাংলা ভাষায় হাতেগোনা দুয়েকটি বই পাওয়া গেলেও দার্শনিক প্রেক্ষাপটে লেখা বাংলা ভাষার প্রথম বই এটি। এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নিয়ে লেখা এ মৌলিক গ্রন্থটি। বইমেলার ৩০১-৩০৩ নম্বর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। এর আগেও বিজ্ঞানের দর্শন এবং সমাজ চিন্তা নিয়ে বেশ কয়েকটি মৌলিক গ্রন্থ লিখেছেন এই অধ্যাপক।
বইমেলায় প্রকাশিত নতুন বই: এবারের বইমেলায় প্রতিদিনই প্রকাশিত হচ্ছে বই। অসংখ্য বইয়ের ভিড়ে বেশ কিছু ভালো বইয়ের পরিচিতি তুলে ধরা হলোÑ
গুজবের অর্থনীতি: কেন হঠাৎ করে বাজারে লবণ উধাও হয়ে যায়? গুজব কেন ছড়ায়? আর এতে কারা লাভবান হন? কারা হন ক্ষতিগ্রস্ত? কেনই বা হঠাৎ লাইন পড়ে যায় দোকানে দোকানেÑ তা নিয়ে এবারের বইমেলায় একেবারেই ভিন্নস্বাদের একটি বই লিখেছেন সিনিয়র সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত। বইটি সময় প্রকাশনে (স্টল ২৭) পাওয়া যাবে মেলায়।
হো চি মিনে হোঁচট: কথাসাহিত্যিক ও খ্যাতনামা ভ্রমণ লেখক মিতালী হোসেনের ভিয়েতনাম ভ্রমণ নিয়ে লেখা ‘হো চি মিনে হোঁচট’ প্রকাশিত হয়েছে পারিজাত প্রকাশনী থেকে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ভিয়েতনামের ঘুরে দাঁড়ানোর নানা অভিজ্ঞতা লেখক এই বইতে তুলে ধরেছেন। এটি লেখকের ৩৮তম প্রকাশনা। মিতালী হোসেনের সকল বই পাওয়া যাবে অমর একুশে গ্রন্থমেলার পারিজাত প্রকাশনীর স্টলে (স্টল ৩৫২)।
রবিশঙ্কর মৈত্রীর তিন বই: এবারের মেলায় কথাশিল্পী, আবৃত্তিকার ও ভাষাবিদ রবিশঙ্কর মৈত্রীর তিনটি ভিন্ন স্বাদের গ্রন্থ মেলায় এসেছে। ‘ক্রিয়াপদ অভিধান’ প্রকাশ করেছে শব্দশৈলী (স্টল: ২৫৬-৫৯)। এর প্রচ্ছদ করেছেন হিমেল হক। কবিতার বই ‘প্রাণবিক পৃথিবীর জন্য প্রার্থনা’ প্রকাশিত হয়েছে বিভাস প্রকাশন (স্টল ৩৮২-৩৮৩) থেকে। প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ। ‘কথামাধুরী’ প্রকাশ করেছে আলোকায়ন (স্টল ৫৬৬)। প্রচ্ছদ এঁকেছেন মোস্তাফিজ কারিগর।
সুভাষ সিংহ রায়ের বই: এবারের মেলায় রাজনৈতিক বিশ্লেষক, দৈনিক বাংলা সময়, সাপ্তাহিক বাংলা বিচিত্রা ও জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবিনিউজ২৪.কম এর প্রধান সম্পাদক সুভাষ সিংহ রায়ের বই ‘ঞযব ঐড়হড়ঁৎধনষব চৎরসব গরহরংঃবৎ ঝঐঊওকঐ ঐঅঝওঘঅ রহ টহরঃবফ ঘধঃরড়হং’ প্রকাশিত হয়েছে। বইটি প্রকাশিত হয়েছে অনন্যা প্রকাশনী থেকে। গত রোববার বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে মোমেন।
আফসানা: বইমেলায় এসেছে চলচ্চিত্র গবেষক, লেখক বিধান রিবেরুর গল্পগ্রন্থ ‘আফসানা’। বইটিতে লেখক বলতে চেয়েছেন, বিপন্ন সময়ের গল্প। প্রেমের আকালে ভালোবাসার গল্প। বিকট পরিস্থিতিতে ব্যাজস্তুতিপূর্ণ গল্প। সারল্যমাখা প্রহসনের আমলে তির্যক গল্প। বইটি মেলায় কথা প্রকাশের প্যাভিলিয়নে পাওয়া যাবে।
খোকা থেকে মুজিব: গবেষক ও লেখক আব্দুল্লাহ আল মোহনের দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘খোকা থেকে মুজিব: বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা’ মেলায় এসেছে। এটি প্রকাশিত হয়েছে অন্যধারা (স্টল নং:৫৯৯-৬০২) প্রকাশনী থেকে।
চাঁদের আলোয় যাযাবর গান: তরুণ অনুবাদক ও কবি অনন্ত উজ্জ্বলের নতুন অনুবাদ গ্রন্থ ‘চাঁদের আলোয় যাযাবর গান’ মেলায় এসেছে। এটি মঙ্গোলিয়ান কবি হাদা সেন্দো’র অনুবাদকৃত কবিতার বই। বইটি পাওয়া যাবে বাতিঘরের ৪৪৩-৪৪৫ নং স্টলে। এর প্রচ্ছদ করেছেন মামুন হোসাইন।
পড়ন্ত বয়সের ভাবনা: জীবনের মৌলিক কিছু বিষয়কে উপজীব্য করে জগদীশ চন্দ্র বিশ^াস লিখেছেন পড়ন্ত বয়সের ভাবনা। বইটিকে শেষ বিকেলের দালিলিক কথন বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। বইটি ২০১৯-এ প্রকাশিত হলেও ইতিমধ্যেই এটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে মেলায়। বইটি প্রকাশ করেছে চর্চা গ্রন্থ প্রকাশ।
রাশিয়ার পরিব্রাজক: ভ্রমণ সবাই পছন্দ করে। এমন কি কাজের চাপ কম হলে কিংবা ক্লাসের ফাঁকে ছোটখাটো ভ্রমণ করে সবাই। আবার লম্বা কোনো ভ্রমণ করতে হলে অনেক পরিকল্পনা করতে হয়। দেশের বাইরে পৃথিবীর যে রূপ রয়েছে সেই রূপ অবলোকন করার অদম্য ইচ্ছে রয়েছে সবার মাঝেই। কিন্তু সবার সে ইচ্ছে সবসময় পূরণ হয় না। বইয়ের পাতার বর্ণনার সঙ্গে সঙ্গে কোনো স্থানের সঙ্গে নিজের একাত্মতার সন্ধান পাওয়া এক অমূল্য অভিজ্ঞতা। এই চমৎকার এবং অপূর্ব অভিজ্ঞতা নিয়েই প্রকাশিত হয়েছে ‘রাশিয়ার পরিব্রাজক’। এটি লেখক প্রসূন রায়ের প্রথম বই। প্রকাশিত হয়েছে সময় প্রকাশনী থেকে।

Leave a Reply