
‘ভাবী দেখেন, বিছানার চাদরটা কতো সুন্দর। দামও বেশ কম। কিনবেন নাকি? আমি নিচ্ছি।’ পাশেই একজন হকার হাঁক দিয়ে বলে উঠছেন, ‘যা নিবেন ১০০ টাকা, বাইচ্ছা লন ১০০ টাকা, দেইখ্যা লন ১০০ টাকা।’ অন্য পাশে মেয়েদের পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন রাসেল। তিনি ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বলে উঠলেন-‘রঙিন রঙিন পোশাক। কমদামে লয়ে যান।’
এটা কোনও বাজারের দৃশ্য নয়। রাজধানীর বেইলী রোডের ভিকারুন্নেসা স্কুল এন্ড কলেজের দুই, তিন ও চার নম্বর গেটের সামনের দৃশ্য এটি। এখানে স্কুল চলাকালীন রীতিমতো ভ্রাম্যমাণ বাজারে পরিণত হয়। এ সময় এই সড়কে চলাচলে বেগ পেতে হয় পথচারীদের। এমনকি যানজটের কারণে এই সড়কে চলাচলকারী পথচারী, শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এটা যেন দেখার কেউ নেই।
ভ্যানে করে হাঁড়ি-পাতিলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন রুবেল। তিনি আরটিভি অনলাইনকে বলেন- ‘প্রতিদিন সকালবেলা এখানে পসরা সাজিয়ে বসি। এখানে বেচাকেনা ভালো হয়। বাচ্চাদেরকে নিয়ে আসার সময় অভিভাবকরা তাদের সংসারের টুকিটাকি জিনিস কিনে নিয়ে যান। হাতের কাছে কম দামে জিনিস কিনতে পান। তাই সবাই তার প্রয়োজন অনুযায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনেন।’
তিনি আরও বলেন- ‘সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কেনাবেচা করলে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লাভ হয়। আর এখানে কোনও চাঁদা দিতে হয় না। তবে স্কুল বন্ধ থাকলে কপালে হাত দিয়ে বসতে হয়। সে কয়দিন ফেরি করে জিনিস বেচি। তখন ব্যবসা কিছুটা মন্দা যায়।’
ভিকারুন্নেসা স্কুলের শিক্ষার্থী ফারিহার মা ফাহিমা খাতুন আরটিভি অনলাইনকে বলেন-‘প্রতিদিন সকালে ফারিহাকে নিয়ে স্কুলে আসি। সকালবেলা এতো তাড়াহুড়োর মধ্যে থাকি যে বাজার করা হয় না। এখানে সব ধরনের সবজি পাওয়া যায়। মাছ পাওয়া যায়। হাতের কাছে এতো বড় সুযোগ কে হাতছাড়া করে। তাই এখান থেকে সংসারের টুকিটাকি জিনিস কিনি।’
এই ব্যাপারে আরটিভি অনলাইনকে ভিকারুন্নেসা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস বলেন-‘স্কুলের সামনে হকার উচ্ছেদের বহুবার চেষ্টা করা হয়েছে। জোনাল ট্রাফিক পুলিশ এবং সিটি করপোরেশনকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে তাদের উচ্ছেদ করা হয়। কিছুদিন স্কুলের সামনে কোনও হকার থাকে না। আবার তারা বসে।’
হকার উচ্ছেদের বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্পদ বিভাগের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন-‘আমরা যখন কোনও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অভিযোগ পাই তখন আমরা পদক্ষেপ নিই। সেখানে উচ্ছেদ করা হয়।’