ভারতের তামিলনাড়ু অঙ্গরাজ্যের শাসক দলের প্রধান শশিকলা নাটরাজনকে দুর্নীতির দায়ে ৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। ফলে সম্প্রতি মৃত্যুবরণ করা মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার উত্তরসূরি হতে তার তুমুল চেষ্টা পণ্ড হয়ে গেছে। জয়ললিতা জীবিত থাকার সময় তিনি দলের বা সরকারের কোন পদে ছিলেন না। তবে জয়ললিতার বান্ধবী ও সহযোগী হিসেবে তাকে তুমুল প্রভাবশালী ভাবা হতো। জয়ললিতার মৃত্যুর পর শাসক এআইএডিএমকে দলের প্রধান হিসেবে মনোনীত হন তিনি। গত সপ্তাহে দল থেকে বলা হয়েছিল, তিনিই হবেন রাজ্যের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত মুখ্যমন্ত্রী ও পানিরসেলভাম শশিকলার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার পর রাজ্যের পরিস্থিতি অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ভারতের আইনানুযায়ী দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হলে সাজা শেষের পরবর্তী ৬ বছর কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট থেকে শশিকলার বিরুদ্ধে ৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার অর্থ হলো আগামী ১০ বছর তিনি কোন সরকারী পদে প্রার্থী হতে পারবেন না।
১৯৯৬ সালের এই দুর্নীতি মামলার বিষয়বস্তু হলো শশিকলার জ্ঞাত আয়ের উৎসের তুলনায় তার সম্পত্তির পরিমাণ আনুপাতিক হারে অনেক বেশি। এই মামলার মূল অভিযুক্ত ছিলেন জয়ললিতা নিজে। প্রতিবেশী কর্ণাটক রাজ্যে এ মামলার বিচার হয়। ২০১৪ সালে এ মামলায় আসামী জয়ললিতা ও শশিকলা দোষী সাব্যস্ত হন। পরে তারা আপিলে মুক্তি পান। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট আবারও তাদের দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দিয়েছে।
ভারতের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও বর্ণাঢ্য রাজনীতিকদের একজন জয়ললিতা গত বছরের ডিসেম্বরে মারা যান। তার মৃত্যুর পর সুপ্রিম কোর্ট এই রায় দিলেন। আদালত শশিকলাকে অনতিবিলম্বে কর্ণাটকের কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পন করার নির্দেশ দিয়েছে। এই রাজ্যেই তাকে কারাভোগ করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের এই সাজা শশিকলার মুখ্যমন্ত্রী বনার স্বপ্নে বিশাল আঘাত। এতদিন ধরে তিনি তামিলনাড়ুর আইনজীবীদের বেশিরভাগের সমর্থন সংগ্রহ করার চেষ্টা করছিলেন। বর্তমানে তিনি শতাধিক আইনপ্রণেতা সহ একটি বিলাসবহুল রিসোর্টে অবস্থান করছেন। এখান থেকেই নিজের সমর্থন পোক্ত করার চেষ্টা করছেন তিনি। ভারতীয় গণমাধ্যমের রিপোর্টে বলা হয়েছে, পুলিশ শশিকলাকে আটক করতে ওই রিসোর্টে প্রবেশ করেছে।
এদিকে ভারপ্রাপ্ত মুখ্যমন্ত্রী ও পানিরসেলভাম অভিযোগ করেছিলেন যে, শশিকলার পথ পরিষ্কার করতে তাকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। তার আরও অভিযোগ ছিল, আইনপ্রণেতাদের জোর করে আটক রেখে তাদের সমর্থন নেওয়ার চেষ্টা করছেন শশিকলা। কিন্তু বর্তমানে শশিকলার পথ রুদ্ধ হওয়ায় পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার প্রধান দাবিদার পানিরসেলভাম।
তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাই থেকে বিভিন্ন ছবিতে দেখা যাচ্ছে পানিরসেলভামের সমর্থকরা এ রায়ে উল্লাশ প্রকাশ করছেন। আবার দল থেকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শশিকলার মনোনয়নও অনেককে ক্ষুদ্ধ করছিল। জয়ললিতা বেঁচে থাকার সময় তিনি শশিকলাকে দলের বা রাজ্য সরকারের কোন আনুষ্ঠানিক পদে দেননি। শশিকলার ভ’মিকা সবসময় ছিল জয়ললিতার সহযোগী হিসেবে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতা বলয়ের একেবারে কাছে থাকায় তিনি ও তার বিশাল পরিবার দল ও সরকারের বিপুল ক্ষমতার অধিকারী হয়েছে। জয়ললিতার ওপর শশিকলার প্রভাব ভারতের গণমাধ্যমে তীব্র আগ্রহের বিষয়। এ নিয়ে জন্ম হয়েছে অনেক ট্যাবলয়েড গুঞ্জনও।