Friday, April 26

পাসপোর্ট কর্মকর্তার বিয়ে বিয়ে খেলা, বিচার চাইলেন রিনা

খোরশেদ আলম নামের এক পাসপোর্ট কর্মকর্তার প্রতারণার বিয়ের ফাঁদে পড়েছেন বগুড়ার উপ-শহর কাঁচা বাজার এলাকার রিনা পারভীন। প্রতারক খোরশেদ এর বিচার দাবীতে আদালতে মামলা দায়ের করে উল্টো বিপাকে পড়েছেন রিনা। মামলা তদন্তের নামে বাদীকে হয়রানী ও তালবাহানা করার অভিযোগ তুলে রবিবার বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন প্রতারণার শিকার ওই নারী। বগুড়ার সাবেক পাসপোর্ট কর্মকর্তা (এডি) খোরশেদ আলম বর্তমানে শেরপুর জেলায় কর্মরত। পরিচয় গোপন করে তৃতীয় বিয়ের পর যৌতুক দাবিতে মারপিটসহ হত্যা চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগ করেন খোরশেদ আলমের তৃতীয় স্ত্রী রিনা। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত পাসপোর্ট কর্মকর্তা খোরশেদ আলম ব্যস্ত আছেন বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রিনা পারভীন বলেন, আমি নিরুপায় হয়ে আপনাদের দারস্ত হয়েছি। আমি স্বামী পরিত্যক্তা এক অসহায় নারী। আমার এক মেয়ে কলেজে পড়াশুনা করে এবং ছেলে বিদেশে পড়াশুনা করছে। ছেলের পাসপোর্ট সংক্রান্তে গত ২০১৬ সালে জানুয়ারি মাসে বগুড়া পাসপোর্ট অফিসে যাওয়া আসার একপর্যায়ে তৎকালিন পাসপোর্ট কর্মকর্তা (এডি) খোরশেদ আলম আমাকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, আমার স্ত্রী-সন্তান নেই। দুইবার পবিত্র হজ্ব পালন করেছি। তোমার ছেলে-মেয়েকে নিজের সন্তানের মতোই আগলে রাখব। অসহায় ছিলাম, তাই সন্তানদের ভবিশ্যত ভেবে আমি ওই পাসর্পোট কর্মকর্তার প্রস্তাবে রাজী হই। পরে আমার ছেলে-মেয়ে এবং পরিবারের সাথে কথা বলে ২০১৬ সালের ২ জুন তারিখে বগুড়া সদর উপজেলার গোকুল ঘাটেরপার (বালুপাড়া) তেলীহারা এলাকার কাজী শফিকুল ইসলাম শফিকের মাধ্যমে কাবিননামা ও রেজিষ্ট্রি করে পাসপোর্ট কর্মকর্তা খোরশেদ আলমকে বিয়ে করি। আমার দুই সন্তান সহ বগুড়া শহরের সুত্রাপুর গোহাইল রোডের লাভলু সাহেবের ভাড়া বাড়িতে ঘর সংসার করি। একপর্যায়ে আমি গর্ভবতী হলে স্বামী খোরশেদ আমার গর্ভপাত ঘটায়। এরপর আমার স্বামী আমাকে না জানিয়ে কর্মস্থল বগুড়া থেকে বদলি হয়ে মাগুরা জেলায় দ্বায়িত্বে থাকাকালেও খোরশেদ ১৫ দিন পর পর বগুড়া আসে। এরপর চলতি বছরের প্রথম দিকে হঠাৎ করে সে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। আমি অসহায় হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছিলাম।

প্রতারণার শিকার ওই নারী বলেন, আমার স্বামী খোরশেদ আলমের খোঁজে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি আমি মাগুরা জেলার পাসপোর্ট অফিসে যাই। সেখানে গিয়ে খোরশেদ এর সাথে দেখা হওয়া মাত্রই সে আমার কাছে যোৗতুক হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবী করে। সেই টাকা দিতে আমি অস্বীকৃতি জানালে খোরশেদ আমাকে বেধরক মারধর করে পাসপোর্ট অফিস থেকে বের করে দেয়। বিষয়টি নিয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক আগারগাও ঢাকা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করি। এতে খোরশেদ ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে হত্যার হুমকি দেয়। এঘটনায় গত ৭ মার্চ বগুড়া সদর থানায় সাধারণ ডায়েরী করি। এমতাবস্থায় গত ৬ এপ্রিল খোরশেদ আমার বাসায় এসে যৌতুকের দাবীকৃত ১০ লাখ টাকা আবারো দাবী করে। কেন সে এমন করছে জানতে চাইলে, খোরশেদ আমাকে হত্যার চেষ্টা করে। পরিবারের লোকজন আমাকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করে। খোরশেদ এর তালবাহানা আর যৌতুকের কারণ খুঁজতে গিয়ে আমি জানতে পারি, খোরশেদ আমার সাথে প্রতারণা করে বিয়ে করেছে। আমার পূর্বেও সে আরো দুটি বিয়ে করেছে। তাদের সন্তান রয়েছে। খোরশেদ ভুয়া ঠিকানা আর পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আমাকে বিয়ে করেছে। খোজ নিয়ে জেনেছি, ঢাকার মধ্য পেয়ারাবাগ, শান্তিনগর এলাকায় খোরশেদ আলম বসবাস করে। তার পিতার নাম মৃত মফিজুল হক। খোরশেদ বর্তমানে শেরপুর জেলায় পাসপোর্ট কর্মকর্তা (এডি) হিসেবে কর্মরত। এঘটনায় ন্যায় বিচারের জন্য জেলা বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নং (১) আদালতে চলতি বছরের ২৩ মে একটি মামলা দায়ের করি। মামলাটি তদন্তের জন্য বগুড়া পিবিআই অফিসে প্রেরণ করেন বিজ্ঞ আদালত। এরপর মামলাটির তদন্তভার গ্রহন করেন পিবিআই এর এসআই মনিরুজ্জামান। সংবাদ সম্মেলনে রিনা পারভীন অভিযোগ করেন, মামলা করায় প্রতারক খোরশেদ আমার বিদেশ পড়–য়া ছেলের পাসপোর্ট আটকিয়ে দেশে ফেরা বন্ধ করা সহ আমার মেয়ের ক্ষতি করবে বলে হুমকি দিচ্ছে। মামলাটি তদন্তের নামে আমাকেই উল্টো হয়রানী করা হচ্ছে। আমি চরম বিপাকে পড়েছি। তদন্ত কর্মকর্তা তালবাহানা করছেন। আমি প্রতারক খোরশেদ আলমের বিচার চাই। সুষ্ঠু তদন্তের দাবী করছি। প্রশাসনের উর্ধতন কতৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এপ্রসঙ্গে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই বগুড়ার এসআই মনিরুজ্জামান জানান, তদন্তে অভিযুক্ত পাসপোর্ট অফিসের এডির বিরুদ্ধে আনা ওই গৃহবধূর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে আদালতে রিপোর্ট দাখিল করবেন বলে জানান তিনি।

এম নজরুল ইসলাম
বগুড়া

Leave a Reply