ফেসবুকে প্রেম, বিয়ে। অতঃপর প্রতারণা। ক্রিকেটার আরাফাত সানির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনে মামলা করেছেন এক তরুণী। আপত্তিকর ছবি প্রকাশের অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তারের পর সানিকে একদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। তরুণীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল ভোরে সাভারের কাঁচাবাজার এলাকা থেকে সানিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দুপুরে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ আরাফাত সানিকে ঢাকা মহানগর আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। পরে আদালত তাকে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ওসি জালাল উদ্দিন মীর , গত ৫ই জানুয়ারি এক তরুণী মোহাম্মদপুর থানায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর-১১। ৫ই জানুয়ারি মামলা হলেও সানিকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশের এতো দেরি হলো কেন- এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, যেহেতু সানি জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্য। অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা বিষয়টি অনেক গভীরভাবে যাচাই-বাছাই করে দেখেছি। ওই তরুণী অভিযোগ করেছেন যে, সানির মোবাইলফোন থেকে শুধু তার ফেসবুকে নয় তার আরো কয়েকজন বান্ধবীর ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে পাঠিয়েছেন। ওই অভিযোগগুলো তদন্ত করা হয়েছে। এছাড়াও সানির গত ১০ দিন ধরে মোবাইলফোন বন্ধ ছিল। গ্রেপ্তারের ভয়ে সানি পলাতক ছিলেন। তার অবস্থান চিহ্নিত করা যায়নি। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের একটি দল সাভারের কাঁচাবাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ ও মামলার এজাহার থেকে জানা যায় নাসরিন রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
সূত্র জানায়, অনেক আগে থেকেই থেকেই সানি ও ওই তরুণীর মধ্যে মোবাইলফোনে কথা হতো। এরমধ্যে তাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। দেশের বিভিন্ন স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ম্যাচ, বিপিএল এবং প্রথম শ্রেণির ম্যাচগুলোতে আরাফাত সানি অংশ নিলে ওই ম্যাচগুলো দেখার জন্য মাঠের গ্যালারিতে উপস্থিত থাকতেন নাসরিন।
এজাহারে ওই তরুণী অভিযোগ করেছেন, সাত বছর আগে সানির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা হয়। পরিবারকে না জানিয়ে ২০১৪ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর তারা বিয়ে করেন। তরুণীর দাবি, বিয়ের বিষয়টি পরিবারকে জানিয়ে তাকে তুলে নেয়ার জন্য আরাফাত সানিকে বারবার বললেও সানি তাতে কর্ণপাত করেননি। বিয়ের জন্য তরুণীর ওপর পরিবারের চাপ ছিল। এক পর্যায়ে ওই তরুণী সানিকে বলেন, হয় তাকে তুলে নিতে না হয় সম্পর্ক ছেদ করতে। কিন্তু সানি কোন পদক্ষেপ নেননি। এরপর গত ১২ জুন রাত ১টা ৩৫ মিনিটে সানি একটি ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ডট খোলেন এবং ওই আইডি দিয়ে তরুণী অ্যাকাউন্টে তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু ছবি ও একক ছবি মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে নানা রকম হুমকি দিতে থাকেন।
গতকাল দুপুরে মোহাম্মদপুর থানাধীন কাটাসুরের ১১০ নম্বর বাড়িতে বাসায় গিয়ে দেখা যায়, পাঁচতলা বাড়ির তৃতীয় তলায় পরিবারের সঙ্গে থাকেন নাসরিন। ওই বাড়ির কোনো নিরাপত্তারক্ষী এবং কেয়ারটেকারকে দেখা যায়নি। ভেতর থেকে গেটে তালা লাগানো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বাড়ির এক ভাড়াটিয়া জানান, নাসরিন তার পরিবারকে নিয়ে ঢাকার মাজিস্ট্রেট কোর্টে গেছেন।
এদিকে, গতকাল দুপুর ৩টার দিকে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ সানিকে ঢাকা মহানগর হাকিম প্রণব কুমারের আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এসময় আদালত কক্ষে উভয় পরিবারের সদস্যরা এবং সানি ও নাসরিনের বন্ধুরা উপস্থিত ছিলেন। আদালতে মামলার শুনানিতে বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম দাবি করে বলেন, সানি নাসরিনকে গত বছরের ১২ই জুন বিয়ে করেন। নাসরিন তাকে শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিলে সানি বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে গড়িমসি করতে থাকে। একপর্যায়ে সানি তাদের দুইজনের বিয়ের পর কিছু অন্তরঙ্গ ছবি নাসরিনের ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে পাঠায়। আরো ছবি প্রকাশের হুমকি দেন। এতে বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি আদালতের কাছে দাবি জানান, কি উদ্দেশ্যে আসামি ওই ছবিগুলো পাঠিয়েছিল এ জন্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে।
অন্যদিকে রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিনের আবেদন করে সানির আইনজীবী অ্যাডভোকেট জুয়েল আহমেদ আদালতকে জানান, তার মক্কেল একজন স্বনামখ্যাত ক্রিকেটার। তার সুনামকে নষ্ট করার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে ওই অভিযোগ তোলা হয়েছে। এদিকে আদালতে শুনানি হওয়ার আগে সানি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তবে শুনানির সময় তিনি কোনো কথা বলেননি।