Saturday, April 20

চাঞ্চল্যকর স্বাধীন হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন

নীলফামারীর ডোমারে চাঞ্চল্যকর বিদ্যুৎ অফিসের গাড়িচালক স্বাধীন হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে ডোমার থানা পুলিশ। চুরির অপবাদ সইতে না পেরে তাকে খুন করেছে অর্পন।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর নীলফামারী সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতের বিচারক সামিউল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তীমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন অর্পন। টাকা চুরির অপবাদ সইতে না পেরে ক্ষোভে ঘুমের ঘোরে সবজি কাটার কাটারি (চাকু) দিয়ে গলা কেটে বন্ধু স্বাধীনকে হত্যা করেছে ডাঙ্গাপাড়া এলাকার রফিকুল ইসলাম ওরফে লীগবাবুর ছেলে অর্পন ইসলাম (২৪)।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই গোলাম মোস্তফা জানান, নেসকো বিদ্যুৎ ও বিতরণ ডোমার কেন্দ্রে আবু সাঈদ স্বাধীন নির্বাহী প্রকৌশলীর গাড়ি চালক। অর্পন ইসলাম মিটার রিডার। তাদের মধ্যে গড়ে উঠে বন্ধুত্বের সম্পর্ক। এ সুবাদে তারা দুইজন আড্ডা, খাওয়া-দাওয়াসহ একসঙ্গে সময় কাটাতো। ঘটনার কয়েক দিন আগে স্বাধীনের চার হাজার টাকা তার শয়ন কক্ষ থেকে হারিয়ে গেলে সে অর্পনকে টাকা হারানো কথা বলে। অর্পন টাকা নেয়নি মর্মে অস্বীকার করে। কিন্তু স্বাধীন তা বিশ্বাস না করে অফিসের সবাইকে বিষয়টি জানায়। এতে অর্পন ক্ষিপ্ত হয় স্বাধীনের ওপর। কিন্তু স্বাধীনকে তা বুঝতে না দিয়ে ঘটনার দিন গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাত ১১টার ডোমার উপজেলা পরিষদ মাঠ সংলগ্ন আনসার ভিডিপি ব্যাংকের দ্বিতল ভবনের উপর তলায় স্বাধীনের ভাড়া নেওয়া ঘরে যায় অর্পন। ওই ঘরে তারা দুজন দেড় ঘণ্টা একসঙ্গে থাকার পর অর্পন চলে যায় উপজেলা মোড়ে। সেখান থেকে আবার রাত ২.৩০ মিনিটে অর্পন আসে স্বাধীনের ঘরে। স্বাধীন ঘুমিয়ে গেলে দরজায় ধাক্কা দিয়ে তার ঘুম ভাঙ্গায় অর্পন। স্বাধীন দরজা খুলে দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ে বিছানায়।

অর্পনও তার সঙ্গে আধাঘণ্টা ঘুমানোর ভান করে। স্বাধীন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হলে, অর্পন স্বাধীনের একটি শার্ট পরে। এর পর স্বাধীনের ঘরে রাখা সবজি কাটার কাটারি (চাকু) নিয়ে স্বাধীনকে জবাই করে অর্পন। স্বাধীনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর অর্পন স্বাধীনের সেই শার্টটি খুলে ও একটি গামছা দিয়ে তার গলা ঢেকে দেয়। বাথরুমে গিয়ে পরিস্কার হয়ে ঘরের বাইরে একটি তালা দিয়ে অর্পন চলে যায় তার নিজ বাড়িতে। নিজের শরীরে যেন রক্ত না লাগে সে জন্য সে স্বাধীনের শার্টটি পরেছিল বলে স্বীকারোক্তিতে জানায়। অর্পন আরো স্বীকার করে যে, বাড়ি গিয়ে তার কোনোভাবেই ঘুম আসছিল না। সে সকালের অপেক্ষায় ছিল।

পরদিন ১৮ সেপ্টম্বর সকাল, দুপুর ও বিকালে স্বাধীনের মৃত্যুর খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ ব্যাপারে নিহত আবু সাঈদ স্বাধীনের মা সুলতানা রাজিয়া বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করে। যার নম্বর নং-১২, তারিখ-১৮.০৯.২০১৮ইং।

ডোমার থানার অফিসার ইনচার্জ মোকছেদ আলী বেপারী জানান, জেলা পুলিশ সুপার আমাদের এ মামলা রহস্য উৎঘাটনের জন্য দুই সপ্তাহ সময় বেঁধে দেয়। ডোমার সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জয়ব্রত পালের নেতৃত্বে অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমরা এক সপ্তাহের মধ্যে হত্যার প্রকৃত ঘটনা সামনে এনেছি। এজন্য সন্দেহভাজন হিসাবে প্রায় আট জনকে জিজ্ঞাসা ও অর্পনকে চার দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের প্রেক্ষিতে মামলার মূল আসামিসহ রহস্য উদঘাটনে সক্ষম হই।

উল্লেখ্য, আবু সাঈদ স্বাধীন (২৩) রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের লালবাগ এলাকার মৃত বাবু ইসলামের পুত্র বলে জানা গেছে।

Leave a Reply