জন্মসূত্রে বা যে কোনভাবে অভিবাসনসূত্রে কোন দেশের নাগরিক হওয়ার কথা সবার জানা আছে। কিন্তু উড়ন্ত অবস্থায় বিমানে যখন কোন শিশুর জন্ম হয়, তখন সে কোন দেশের নাগরিক হবে-এমন প্রশ্ন আসলে অনেকেই গোলকধাঁধায় পড়ে যেতে পারেন। এ প্রসঙ্গে মাস দু’য়েক আগের একটি ঘটনার কথা জানা যাক। সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি বিমান নিউ ইয়র্ক যাওয়ার পথে জরুরী ভিত্তিতে লন্ডনের দিকে ঘুরে যায় এবং সেখানেই অবতরণ করে। কারণ, ঐ বিমানে একজন সন্তানসম্ভবা নারী ছিলেন এবং আকাশেই শিশুটির জন্ম হয়। সৌদি এয়ারলাইন্স সূত্রে জানা যায়, নিউ ইয়র্কের পথে বিমানটি যখন আয়ারল্যান্ডের আকাশসীমায় ছিল, তখন ক্রু’দের সহযোগিতায় এক কন্যা শিশুর জন্ম হয়। তখন সদ্যভুমিষ্ঠ শিশু আর তার মায়ের যত্ন নেয়ার জন্য দ্রুত লন্ডনে অবতরণ করে বিমানটি।
এখন কথা হচ্ছে, শিশুটি কোন দেশের নাগরিক হবে? বিমানে জন্ম নেয়া কোন শিশুর জাতীয়তা নির্ধারণ করা একটু সমস্যাই হয়ে যায়। তখন সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিতে হয়। যেমন গন্তব্য, আকাশসীমা ইত্যাদি। একেক দেশের জাতীয়তার আইন একেক রকম। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযাযী- এর স্থল, জল বা আকাশসীমায় জন্ম নেয়া প্রতিটি শিশুই মার্কিন নাগরিকত্ব পায়। পৃথিবীর অনেক দেশেই যুক্তরাষ্ট্রের মতো ভূমি আইন অনুসরণ করা হয়। তবে যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশ আবার এমন নিয়মের অনুসারী নয়। তাই এসব দেশের সীমানায় জন্ম নিলেও জাতীয়তা পাবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে, যে দেশের আকাশসীমায় শিশু জন্ম নেবে শিশুটি সেই দেশেরই নাগরিকত্ব পাবে। আন্তর্জাতিক আরেকটি নিয়ম আছে এক্ষেত্রে। সেটি হলো, সন্তানসম্ভবা নারী যে দেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিল, শিশু সেই দেশের নাগরিক হবে।
কিন্তু বিমানে এমন ঘটনা খুব কমই ঘটে। কারণ, কোন সন্তানসম্ভবা নারীর ভ্রমণের ক্ষেত্রে তার শারীরিক অবস্থা এবং সময়ের বিধিনিষেধ আছে। কিছু কিছু এয়ারলাইন্সের নিয়মানুসারে কোন প্রসূতির সন্তান জন্মের জন্য ২৪ সপ্তাহ বাকি থাকলে, তাহলেই তাকে বিমানে চড়ার অনুমতি প্রদান করা হয়ে থাকে। তবে এসব নিয়মকানুন মেনে চলার পরও বিমানে শিশুর জন্ম নেয়াটা খুব বিরলও নয়। এই যেমন সৌদি এয়ারলাইন্সে জন্ম নেয়া শিশুটির কথা আপনারা একটু আগেই জেনেছেন। ঐ সময়ের আরো ২ মাস পর শিশুটির জন্মের কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের বেশ আগেই ভূমিষ্ঠ হলো শিশুটি। বিমানে এমন পরিস্থিতি হলে, নিয়ম হলো- জরুরী ভিত্তিতে ল্যান্ডিং করতে হবে। কোন কোন ক্ষেত্রে আবার যে দেশে জরুরী ল্যান্ডিং করা হয় শিশু সেই দেশের নাগরিকত্ব পেয়ে যায়।
বিমানে জন্ম নেয়া শিশু ক্ষেত্রবিশেষে একটা বিশেষ সুবিধাও পেয়ে থাকে। কোন কোন এয়ারলাইন্স তাদের বিমানে জন্ম নেয়া শিশুকে সারা জীবন বিনামূল্যে ভ্রমণের সুবিধা দিয়ে থাকে। এ তালিকায় থাই এয়ারওয়েজ, এশিয়া প্যাসিফিক এয়ারলাইন্স, এয়ার এশিয়া ও পোলার এয়ারলাইনসসহ হাতে গোনা কয়েকটি বিমান সংস্থা আছে। এছাড়া ভার্জিন আটলান্টিকসহ কয়েকটি বিমান সংস্থা তাদের বিমানে জন্ম নেয়া শিশুকে দু-একবার বিনামূল্যে বিমান ভ্রমণের সুযোগ দেয়।