Friday, March 22

মুসলিম নিষেধাজ্ঞা ইস্যু: ট্রাম্পের বিরুদ্ধে হাভার্ড, ইয়েল, স্ট্যানফোর্ডসহ ১৭ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনি চ্যালেঞ্জ

53614_pg26harvardমুসলিম নিষেধাজ্ঞা’ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আইনী চ্যালেঞ্জে নেমেছে হাভার্ড, ইয়েল, স্ট্যানফোর্ড সহ অভিজাত ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়। সোমবার নিউ ইয়র্কের ফেডারেল কোর্টে এ বিষয়ে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বলেছে, সাতটি মুসলিম দেশের শরণার্থী ও নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কারণে শিক্ষা ব্যবস্থায় গুরুত্বর ও হিমশীতল এক প্রভাব পড়েছে। শুধু তা-ই নয়, একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষাবিদদের আকৃষ্ট করায় তাদের যে সক্ষমতা তা হুমকিতে পড়েছে। এতে বিশ্বজুড়ে আগামী দিনের যোগ্য নেতা তৈরির যে লক্ষ্য তাদের রয়েছে তা ব্যাহত হচ্ছে। এ খবর দিয়েছে লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। এতে বলা হয়েছে, গত ২৭শে জানুয়ারি ইরান, ইরাক, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে নির্বাহী আদেশ দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী গ্রহণ ১২০দিন পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। তবে সিরিয়ার শরণার্থীদের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত বলবৎ বলে ঘোষণা দেয়া হয়। এ নির্দেশের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা, বিক্ষোভ হলে সরকার গ্রিন কার্ডধারীদের প্রবেশের অনুমতি দিয়ে নির্বাহী আদেশ সংশোধন করে। এখন অভিযোগকারী ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয় যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তভাবে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধের ফলে শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সবচেয়ে মেধাবীদের বের করে আনার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে সক্ষমতা তাও নষ্ট হচ্ছে। মুক্ত চিন্তা বিনিময়ও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার ইউএস নবম সার্কিট কোর্ট অব আপিল নি¤œ আদালতের রায় বহাল রাখে। এর আগে নি¤œ আদালত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মুসলিম বিরোধী নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল। ওই আদেশের পর পর ট্রাম্প প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, তারা এ রায়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে। আপিলে সরকার হেরে যাওয়ার পর জানানো হয়েছে, শিগগিরই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার মতো আরও একটি পদক্ষেপ নেবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ওদিকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আদালতের রায় থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বলেছে, এরই মধ্যে ওই নির্দেশের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তাতে অব্যাহতভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে তারা। মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট জন হপকিনস তার সমর্থকদের প্রতি একটি বার্তা দিয়েছেন। তাতে তিনি বলেছেন, নির্বাহী ওই আদেশ নিরাপত্তা হুমকির ওপর ভিত্তি করে নয়। বস্তুত এটা ধর্মের ওপর ভিত্তি করে দেয়া হয়েছে। এতে দেশের সুনির্ধারিত পথে চলার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিনের যে মূল্যবোধ ও আদর্শ রয়েছে এ নির্বাহী আদেশ তার বিরোধী। ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হয়েছেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ১০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের শতকরা ১০ ভাগ শিক্ষার্থী বিদেশী। পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা করছেন যারা তাদের শতকরা প্রায় ৬৫ ভাগ বিদেশী। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে অনেকগুলো আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন শিক্ষাবিদ, পন্ডিতজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আদালতে যে অভিযোগ দেয়া হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, ৬২ জন নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত, সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্টসের ৮১৩ জন ন্যাশনাল একাডেমির সদস্য সহ ৪২ হাজারের বেশি পন্ডিত ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে তাদের মত দিয়েছেন।

Leave a Reply