Monday, December 15

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড: চিঠি দিয়ে চা-নাস্তার টাকা আদায়

এইচএসসির ফল প্রস্তুত করে দেওয়ার জন্য দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কাছ থেকে আপ্যায়ন বাবদ চিঠি দিয়ে তিন লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়েছেন রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সচিবসহ তিন কর্মকর্তা।

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আজাহার আলীর ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে সম্প্রতি এ টাকা নেওয়া হয়। তবে ব্যতিক্রমী বিষয়টি হলো- রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের এসব কর্মকর্তা কৌশলে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অফিসিয়াল প্যাডে তাদেরই চিঠি পাঠিয়ে টাকা আদায় করেছেন।

এই চিঠিটি যুগান্তরের হাতে এসেছে। রাজশাহী বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেছেন তারা চা-নাস্তা খাওয়ার জন্যই এ টাকা নিয়েছেন।

উল্লেখ্য, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের আইসিটি শাখার সেবাসমূহ রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড থেকে আন্ত:শিক্ষা বোর্ড সহযোগিতার আওতায় দিনাজপুর বোর্ডকে দেওয়া হয়ে থাকে। কারণ দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে এখনো পূর্ণাঙ্গ আইটি শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অনলাইনে নিবন্ধন থেকে পরীক্ষার ফলাফল প্রস্তুত ও প্রকাশও রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের আইটি শাখা থেকে সম্পাদন হয়ে থাকে।

এদিকে দিনাজপুরের কর্মকর্তারা বলছেন, এভাবে টাকা নেওয়া নিয়ম-বিধির লঙ্ঘন। ফলাফল প্রস্তুত করে নেওয়ার জন্য রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডকে আলাদাভাবে তারা নির্ধারিত পরিমাণ টাকা দিয়ে থাকেন।

অভিযোগ উঠেছে, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সচিব হুমায়ূন কবীর জুয়েল, সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট (চলতি দায়িত্ব) শফিকুল ইসলাম ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা আজাহার আলীসহ তিন কর্মকর্তা এই টাকা পকেটে ভরেছেন। ঘটনা জানাজানির পর রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর হাবিবুর রহমান বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তিনি মঙ্গলবার বিকেলে বলেছেন, এমন কোন চিঠির বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। এই ধরনের চিঠি পাঠাতে হলে তার পূর্বানুমোদন লাগে। বিষয়টি তিনি দেখছেন।

রাজশাহী ও দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৭ সালে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড থেকে আলাদা করে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড গঠন করা হয়। কিন্তু এখনো দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের পূর্ণাঙ্গ আইটি সেন্টার নেই। নিবন্ধন ও পরীক্ষা সংক্রান্ত অধিকাংশ কাজই রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড থেকে সম্পাদন করা হয়। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও অনুমোদন রয়েছে।

জানা গেছে, ফলাফল প্রক্রিয়াকরণের জন্য দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের সাতজন কর্মকর্তা রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের আইটি শাখায় সাময়িকভাবে কাজ করেন। রাজশাহী বোর্ডের কর্মকর্তারা তাদের কাজে সহায়তা করে থাকেন। আর এ জন্যই আপ্যায়ন বাবদ টাকা নিয়েছেন রাজশাহীর কর্মকর্তারা। আর টাকা নেওয়ার এ প্রক্রিয়া জানতেও পারেননি বোর্ড চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান।

এ সংক্রান্ত চিঠিটির বক্তব্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ২৪ জানুয়ারি দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অফিসিয়াল প্যাডে টাকা চেয়ে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের কাছেই এ চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সচিব হুমায়ূন কবীর জুয়েল, সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট (চলতি দায়িত্ব) শফিকুল ইসলাম ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা আজাহার আলী। চিঠির প্রাপক দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের সচিব।

চিঠিতে আপ্যায়ন বাবদ তিন লাখ ৭০ হাজার টাকা আজাহার আলীর নামে অগ্রিম পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়। ফল প্রকাশের সাত দিন আগে দিনাজপুর বোর্ড থেকে রাজশাহী বোর্ডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আজাহার আলীর ব্যাংক হিসাবে এ টাকা পরিশোধ করেন।

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের সচিব জহির উদ্দিন বলেন, চা-নাস্তা খাওয়ার জন্য এক বোর্ড আরেক বোর্ডের কাছে টাকা নেবে, এটা আমার কাছে অযৌক্তিক মনে হয়। এখন টাকা না দিলে তো রাজশাহী বোর্ডের আইটি সেন্টারের কর্মকর্তারা আমাদের কর্মকর্তাদের সহায়তা করবেন না। সে কারণেই টাকা দিতে হয়েছে।

তবে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আজাহার আলী জানিয়েছেন, এইচএসসির ফল প্রকাশের সপ্তাহ খানেক আগে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের তার ব্যক্তিগত হিসাবে টাকা এসেছে দিনাজপুর বোর্ড থেকে।

তিনি আরও বলেন, দিনাজপুরের ফল প্রস্তুত করে দিতে রাত জেগে আমাদের কর্মীদের কাজ করতে হয়। সে কারণেই আপ্যায়ন বাবদ টাকা নেওয়া হয়েছে।

টাকা চেয়ে চিঠি দেওয়ার আগে বোর্ড চেয়ারম্যানের অনুমোদন ও মতামত নেওয়া হয়েছিল কিনা- এ বিষয়ে কিছু বলতে অস্বীকার করেন তিনি।

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সচিব হুমায়ূন কবীর বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই দিনাজপুর বোর্ডের ফল প্রস্তুত করে দিতে হয় আমাদের। একেক পরীক্ষার ফল প্রস্তুত করে দিতে প্রায় এক মাস সময় লাগে। দিনাজপুরের সাতজন কর্মকর্তা রাজশাহী বোর্ডে থাকলেও তারা ফলাফল তৈরি করতে পারেন না। আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাত জেগে বাড়তি কাজ করতে হয়। সে জন্যই তাদের আপ্যায়নের জন্য কিছু টাকা নেওয়া হয়েছে। তবে এ টাকাটা রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের আইটি সেন্টারের কর্মকর্তা কর্মচারী সবাই পেয়েছেন কিনা-সেটা তিনি বলতে পারেননি।

Leave a Reply