নাটক এবং সিনেমা দুই মাধ্যমেই বিচরণ থাকলেও এই সময়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী অপর্ণা ঘোষের পুরো ভাবনা ঘিরে রয়েছে বড় পর্দা। কারণ আজই মুক্তি পাচ্ছে তার অভিনীত নতুন ছবি ‘ভুবন মাঝি’। ফাখরুল আরেফিন পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্পের এ ছবিতে অপর্ণার বিপরীতে রয়েছেন কলকাতার অভিনেতা পরমব্রত। এছাড়া টিভি নাটকের জনপ্রিয় অভিনেতা মাজনুন মিজানও রয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে। বুধবার সন্ধ্যায় ‘ভুবন মাঝির’ প্রিমিয়ার হয়ে গেল। নতুন এ চলচ্চিত্র প্রসঙ্গে অপর্ণা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের দেশে নিয়মিত চলচ্চিত্র হচ্ছে, এটা অবশ্যই ভালো। তবে আমার মনে হয় প্রচারের অভাবে মুক্তিযুদ্ধের ছবিগুলো পিছিয়ে থাকছে। এমন চিন্তা থেকেই তরুণদের কাছে যাচ্ছি আমরা। আমরা চাই তারা হলে এসে ছবিটি দেখে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়টি সম্পর্কে জানুক। এরই মধ্যে ‘ভুবন মাঝি’র প্রচারণায় দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচারণা চালিয়েছেন অপর্ণা ও চলচ্চিত্রের অন্য শিল্পী-কলাকুশলীরা। বিশেষ করে, মঙ্গলবার ছবির প্রচারণায় নিজ শহর চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন এ অভিনেত্রী। অপর্ণা জানিয়েছেন ১০টিরও বেশি সিনেমা হলে মুক্তি দেয়া হচ্ছে ‘ভুবন মাঝি’। এতে ফরিদা নামের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। এদিকে তার অভিনীত মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে আরো একটি চলচ্চিত্র। সেটি হচ্ছে ইফতেখার আহমেদ ফাহমির ‘টু বি কন্টিনিউড’। অন্যদিকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি টিভি নাটকেও নিয়মিত অভিনয় করছেন অপর্ণা। আলভী আহমেদের নির্দেশনায় একটি নতুন ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন তিনি। পাশাপাশি তার অভিনীত গোলাম সোহরাব দোদুল পরিচালিত ‘সংসার’, মিলন ভট্টর ‘ইনডিসিপ্লিন’ এবং আর বি প্রীতমের ‘কমিউনিটি’ নামের তিনটি ধারাবাহিক নাটক নিয়মিতভাবে তিনটি ভিন্ন চ্যানেলে প্রচার হচ্ছে। চলচ্চিত্র, নাট্য পরিচালক কিংবা দর্শক অনায়াসেই এখন বলেন, অভিনয়ে বেশ পরিপক্ব অপর্ণা। চট্টগ্রামের এই মেয়ে অভিনয়ে নিজেকে খুব অল্প সময়ে এমন একটি শক্ত অবস্থানে নিয়ে গেছেন। যে কারণে তাকে দিয়ে চ্যালেঞ্জিং চরিত্রগুলো করাতে বেশ আগ্রহ পোষণ করেন নির্মাতারা। এভাবেই একটু একটু করে অনেক পরিচালকের নির্ভরতার ভাবনায় ঠাঁই পেয়েছেন তিনি। তাদের নির্দেশনায় কাজ করতে করতে এখন অপর্ণা বেশ দক্ষ অভিনেত্রী। সর্বশেষ তার অভিনয়ে মুক্তি পায় প্রসূণ রহমান পরিচালিত ‘সূতপার ঠিকানা’ চলচ্চিত্রটি। এতে অনবদ্য অভিনয়ে প্রশংসিত হন এ অভিনেত্রী। মেয়েদের জীবনের নানা বাঁকের গল্প নিয়েই ছিল ছবিটি। ২০১৫ সালের চলচ্চিত্রের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের বিবেচনায় ‘সূতপার ঠিকানা’ যখন দাঁড়াবে তখন হয়তো বিচারকদের সুদৃষ্টি থাকলে অপর্ণা এ ছবিতে অভিনয়ের জন্য আবারও পেয়ে যেতে পারেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। কারণ এ ছবিটিতে তিনি তার দুর্দান্ত অভিনয় দিয়ে মুগ্ধ করেছেন সবাইকে। যেমনটা মুগ্ধ করেছিলেন ২০১৩ সালে গাজী রাকায়েত পরিচালিত ‘মৃত্তিকা মায়া’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে। এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেই অপর্ণা প্রথমবারের মতো অর্জন করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ২০০৬ সালে লাক্স তারকা খ্যাতি পাওয়ার সুবাদে টিভি মিডিয়ায় পথচলা শুরু হয় অপর্ণার। ‘তবুও ভালোবাসি’ নাটকের মধ্য দিয়ে অভিষেক হয় এই অভিনেত্রীর। ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে যে মেয়েটি থিয়েটারে যেত সেই মেয়েটি প্রথম অভিনয় করেন ‘তবুও ভালোবাসি’ নাটকে। এরপর একের পর এক নাটকে অপর্ণা প্রমাণ করেন তার অভিনয় দক্ষতা। ‘ইন্টারভিউ’, ‘উইন্ডো’, ‘ফিফটি ফিফটি’, ‘হাউজফুল’, ‘ময়নাতদন্ত’, ‘এক জোড়া কালো জুতোর গল্প’, ‘টার্মিনাল’, ‘অনুরোধ’, ‘হৃদয়পুর’, ‘বৃষ্টি’, ‘চড়ুইপাখি ও ফেসবুক’, ‘মেড ইন চিটাগং’, ‘বালা’, ‘ভালোবাসার গল্প’, ‘ইলিয়াসের চারাগাছ’, ‘স্বপ্ন সময় সম্মোহন’সহ বহু নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে আলোচিত হন এ অভিনেত্রী। এত গেল অপর্ণার টিভি নাটকের কথা। তার চমৎকার সাফল্যের আরেক অধ্যায় বিজ্ঞাপনচিত্রে। বসুন্ধরা কর্পোরেটের বিজ্ঞাপন দিয়ে শুরু। এরপর মুসকান, প্যারাসুট নারিকেল তেল, এসিআই এ্যারোসল, প্রাণ, নিডোসহ বেশকিছু বিজ্ঞাপনে অপর্ণা তাক লাগানো পারফরম্যান্স করেন। টিভি নাটকে আসার আগে মঞ্চ কাঁপিয়ে এসেছেন এ অভিনেত্রী।
২০০৩ সাল থেকে নিয়মিত মঞ্চে অভিনয় করছেন। এ মাধ্যমটিতে কাজ করে সবচেয়ে বেশি আত্মতৃপ্তি পান তিনি। আর তাই টিভি নাটকের ব্যস্ততার মধ্যেও মঞ্চের কাজ হাতছাড়া করেন না। মঞ্চের কাজের মধ্যে শেক্সপিয়রের ‘ওথেলা’, ‘মার্চেন্ট অব ভেনিস’ তার প্রিয়। এই দুটি নাটক যতবার মঞ্চস্থ হয়েছে ততবারই নিজেকে আবিষ্কার করেছেন নতুনভাবে। এছাড়া অপর্ণার নিজের অভিনীত রবীন্দ্রনাথের ‘গোড়ায় গলদ’-এর ইন্দুমতি চরিত্রটি খুব প্রিয়।