
আলহামদুলিল্লাহ। পবিত্র মাহে রমজানের ১টি রোজা রাখার তৌফিক লাভ করেছি আমরা।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ভালোবাসা লাভ করার সর্বোত্তম মাধ্যম হলো রোজা। কেননা রোজা কেবলমাত্র আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই রাখা হয় আর এর পুরস্কারও স্বয়ং তিনিই দিয়ে থাকেন।
রমজানের ফরজ রোজা বা অন্যান্য দিনের নফল রোজা, যে রোজাই হোক না কেন তা আমাদের আত্মার সংশোধনের কারণ হয়ে থাকে। আর বিশেষ করে পবিত্র মাহে রমজানের রোজা আমাদের পুরো বছরের দোষত্রুটি ক্ষমার কারণ হয়।
কেননা, মানুষ যখন আল্লাহতায়ালার জন্য জাগতিক আরাম-আয়েশ, চাওয়া-পাওয়া ইত্যাদি থেকে বিরত থাকে তখন সে তার নফসকে পুণ্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখতে অধিক শক্তি পায়।
কিন্তু এ বিষয়টি স্মরণ রাখা উচিত, রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল উপবাস থাকাই নয়। যদি উপবাস থাকার ফলে জান্নাত পাওয়া যেত তাহলে প্রতিটি ব্যক্তি এ জান্নাত পাওয়ার চেষ্টা করতো। কেননা উপবাস থেকে মৃত্যু বরণ করে নেয়াটা তেমন কোন কঠিন বিষয় নয় বরং কঠিন বিষয় হলো আধ্যাত্মিক ও চারিত্রিক পরিবর্তন সাধন করা।
হাদিস পাঠে জানা জায়, ‘রোজা ধৈর্যের অর্ধেক আর ধৈর্য ঈমানের অর্ধেক। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রমজানের রোজা স্রষ্টার সঙ্গে বান্দার সাক্ষাৎ লাভের মাধ্যম হিসেবে সর্বশ্রেষ্ঠ স্তম্ভ।
আর এজন্যই মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে কুদসির মাধ্যমে এরশাদ করেছেন ‘সম্মান ও মর্যাদার প্রভু আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের অন্য সব কাজ তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা একান্তই আমার জন্য এবং আমি এর জন্য তাকে পুরস্কৃত করব’। রোজা ঢাল স্বরূপ। তার নামে বলছি, যার হাতে মুহাম্মদের জীবন, রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মেশকের গন্ধের চেয়েও পবিত্র। একজন রোজাদার দু’টি আনন্দ লাভ করে। সে আনন্দিত হয় যখন সে ইফতার করে এবং রোজার কল্যাণে সে আনন্দিত হয় যখন সে তার প্রভূর সাথে মিলিত হয়’ (বোখারি)।
রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো, মানুষের নাফস অর্থাৎ আমাদের আত্মা যেন পবিত্র হয়। কেননা আল্লাহ পরম পবিত্র আর তিনি পবিত্র আত্মার অধিকারীদেরকেই ভালোবাসেন। তিনি চান মানুষ যেন রোজার মাধ্যমে সকল প্রকার পাপ কাজ পরিহার করে হৃদয়কে পাক পবিত্র এবং পরিস্কার করে ধৌত করেন।
এমন হৃদয় যে হৃদয়ে খোদার জ্যোতির বিকাশ ঘটবে। এছাড়া এই রোজার মাধ্যমে মানুষের শারীরিক, চারিত্রিক, আধ্যাত্মিক এবং সামাজিক সকল প্রকার কল্যাণও লাভ হয়। যেভাবে বাহ্যিক খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে আমরা শারীরিকভাবে শক্তি লাভ করি ঠিক তেমনি রোজার ফলে আমাদের রুহ বা আত্মায় শক্তি লাভ করে আর এই শক্তির বলে একজন মুমিন তার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে।
মোটকথা, রোজা শারীরিক সুস্থতারও কারন আর আধ্যাত্মিক দিক থেকেও এর অনেক কল্যাণ রয়েছে। রোজার মাধ্যমে আমরা অনেক ধরণের মন্দ থেকে বাঁচতে পারি এবং উত্তম চরিত্রের অধিকারীও হতে পারি।
কানজুল উম্মালের এক হাদিসে এসেছে, মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে জেনে বুঝে পাপ করে বা কোন মুমিনকে নিয়ে কুৎসা রটনা করে, কোন নেশাদ্রব্য ব্যাবহার করে তাহলে আল্লাহতায়ালা তার সমস্ত আমলকে নষ্ট করে দিবেন। সুতরাং তোমরা পবিত্র রমজান মাসে খোদা ভীতি অবলম্বন কর। কেননা এটি আল্লাহতায়ালার পবিত্র মাস’ (কানজুল উম্মাল)।
আসুন, রমজানের প্রত্যেকটি সময়কে পুণ্য কাজে ব্যবহার করি, রাতগুলোকে ইবাদতে রত থেকে অতিবাহিত করি আর আল্লাহতায়ালার দরবারে প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদের পাপ সমূহ ক্ষমা করে তার সন্তুষ্টির চাদরে জড়িয়ে নেন, আমিন।