
নাটোরের সিংড়ায় দাদন ব্যবসায়ীর চাহিদামতো সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে এক সংখ্যালঘু পরিবারের বাড়ি দখলের অভিযোগ উঠেছে। বাড়ি থেকে ওই সংখ্যালঘু পরিবারকে বের করে দেওয়ার কারণে পরিবারের ১১ সদস্য নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে একটি পরিবার।
এমন ঘটনা ঘটেছে সিংড়া উপজেলার চৌগ্রাম ইউনিয়নের পাঁড়েরা গ্রামের দরিদ্র বৃদ্ধ কৃষক শ্রী মরু প্রামাণিকের পরিবারে। গণমাধ্যম কর্মীদের কাছ থেকে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ ও পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা।
সরেজমিন পাঁড়েরা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের সামনে ফাঁকা জায়গায় খোলা আকাশের নিচে নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ শ্রী মরু প্রামাণিক তার পরিবারের ১১ জন সদস্য নিয়ে মাটিতে বসে আছেন। খেতে না পেয়ে শিশুরা কান্নাকাটি করছে। আর প্রতিবেশীরা এই দৃশ্য নীরবভাবে তাকিয়ে দেখছেন।
পাশেই মরু প্রামাণিকের দখলকৃত বাড়িতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি সদস্য বেলাল হোসেনের নেতৃত্বে বসেছে দরবার।
ভুক্তভোগী মরু প্রামাণিক কাতর কণ্ঠে বলেন, সংসারের খরচ চালাতে প্রায় ৩ বছর আগে চৌগ্রাম এলাকার দাদন ব্যবসায়ী শাহিন শাহের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা নিয়েছিলাম। পরে সেই টাকা পরিশোধ করতে সুদে-আসলে ২০ হাজার টাকা করে ১৬ কিস্তিতে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা ফেরত দিই। কিন্তু তাতেও রেহাই মেলেনি। শেষ পর্যন্ত একমাত্র সম্বল ভিটেমাটিও দাদন ব্যবসায়ী শাহিন শাহের নামে লিখে দিতে হয়েছে। কথা ছিল কয়েক মাস পর আবার বাড়িটি ফেরত দেবে; কিন্তু এখন জোর করে ঘরের বাইরে বের করে দেওয়া হচ্ছে। পরিবারের লোকজন নিয়ে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানান, চড়া সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় দাদন ব্যবসায়ী শাহিন শাহ জোর করে বাড়িটি লিখে নিয়ে গোপনে মরু প্রামাণিকের প্রতিবেশী সুমন নামের একজনের কাছে আবার বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন সেই বাড়িটি দখলমুক্ত করতে ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আর বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টায় মরু প্রামাণিক ও তার পরিবারের সদস্যদের বাড়ি থেকে জোর করে বের করে দিয়েছে ইউপি সদস্য ও তার লোকজন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী কৃষকের ছেলে শ্রী তরুণ বলেন, বাড়িটি ফিরে পেতে তারা সিংড়ার সহকারী জজ আদালতে একটি মোকাদ্দমা (পেনশন) দায়ের করেছেন। আদালত উভয়পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিলেও তাদের এলাকা ছাড়ার হুমকি দিচ্ছেন ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন ও তার লোকজন।
এ বিষয়ে দাদন ব্যবসায়ী শাহিন শাহ বলেন, তিনি সুদের কোনো কারবার করেন না। তিনি সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়ে ওই জায়গা কিনে অন্য আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন তার নামে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সামাজিকভাবে তাদের ঘর থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এলাকা ছাড়া করার হুমকি-ধমকির বিষয়টি সঠিক নয়।
এ বিষয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রাম হুলহুলিয়া সামাজিক উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি আল তৌফিক পরশ বলেন, ওই পরিবারের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে। বুধবার ঘটনার পর থেকে পরিবারের সদস্যরা না খেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। রাতে একপর্যায়ে তার সামাজিক উন্নয়ন পরিষদ ভবনের সামনেও ওই ভুক্তভোগী পরিবার অবস্থান নিয়েছিল। শিশুরা না খেতে পেরে কান্নাকাটি করছিল। দৃশ্যটি দেখার পর গ্রামবাসীর অনেকে খারাপ লেগেছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে সিংড়া থানার ওসি নুর-এ-আলম সিদ্দিকী বলেন, বিষয়টি জানার পর পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আল ইমরান বলেন, এ ধরনের কোনো অমানবিক ঘটনা ঘটে থাকলে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।