Monday, December 9

হারাম উপার্জন দিয়ে ভালো কাজ মূল্যহীন

 

মহান আল্লাহ মানবজাতিকে হালাল উপার্জন ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে মানবজাতি, তোমরা পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তু আহার করো, আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু…’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৬৮-১৬৯)

সুতরাং যেভাবে উপার্জন ও খাবার বৈধ হতে হবে, তেমনি দান করার ক্ষেত্রেও হালাল উপার্জন থেকে দান করতে হবে। কেননা মহান আল্লাহ শুধু পরহেজগার ও নেককারদের পক্ষ থেকে কবুল করেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘…অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকিদের পক্ষ থেকে কবুল করেন।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ২৭)

 

উপার্জিত অর্থ ব্যয় করার ক্ষেত্রে ইসলামের নীতি হলো, প্রথমে নিজের ও নিজের পরিবার-পরিজনের ব্যয়ভার বহন করবে। এরপর কিছু অবশিষ্ট থাকলে দুস্থ ও অসহায় মানুষের জন্য খরচ করবে। কিন্তু যদি কারো হালাল উপার্জন থেকে নিজের ও পরিবারের জন্য ব্যয় করার পর তার আর কিছুই অবশিষ্ট না থাকে তাহলে তার জন্য গরিব-অসহায় মানুষের জন্য ব্যয় করা জরুরি নয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘…মানুষ আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, তারা কী ব্যয় করবে? বলে দাও, যা কিছু অতিরিক্ত (উদ্বৃত্ত)। এভাবে আল্লাহ তাঁর বিধান তোমাদের জন্য সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন, যাতে তোমরা চিন্তা করো। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২১৯)

সুতরাং হারাম সম্পদ থেকে অর্থব্যয় করলে তা কবুল হবে না। কেননা আল্লাহ পবিত্র। তিনি শুধু পবিত্র বস্তু কবুল করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ও হালাল বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না। আর আল্লাহ তাঁর প্রেরিত রাসুলদের যে নির্দেশ দিয়েছেন মুমিনদেরও সে নির্দেশ দিয়েছেন। ’ তিনি বলেছেন, ‘হে রাসুলরা, তোমরা পবিত্র ও হালাল জিনিস আহার করো এবং ভালো কাজ করো। আমি তোমাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে অবগত। ’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত :৫১)

তিনি (আল্লাহ) আরো বলেছেন, ‘তোমরা যারা ঈমান এনেছ, শোন, আমি তোমাদের যেসব পবিত্র জিনিস রিজিক হিসেবে দিয়েছি তা থেকে খাও। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৭২)

অতঃপর রাসুল (সা.) এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন, যে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ সফর করে। ফলে সে ধুলি ধূসরিত রুক্ষ কেশধারী হয়ে পড়ে। অতঃপর সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, ‘হে আমার রব, অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম এবং আহার্যও হারাম। কাজেই এমন ব্যক্তির দোয়া তিনি কী করে কবুল করতে পারেন?’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২২৩৬)

হারাম সম্পদ থেকে ব্যয় করে পরকালে এর সুফল পাওয়া যাবে না। কেননা এটি এক ধরনের প্রতারণা।

ইসলামের দৃষ্টিতে ধোঁকাবাজি বা প্রতারণা করা কবিরা গুনাহ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে আমাদের ধোঁকা দেয় সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১০১)

হারাম উপার্জন করা প্রচলিত আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

সুতরাং আপনি যদি প্রতারণার মাধ্যমে কারো অর্থ আত্মসাৎ করেন তাহলে তার অপরাধ তিনটি—

(১) প্রতারণা ও অনৈতিক কাজ।

(২) অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করা, যা হক্কুল ইবাদ বা মানুষের অধিকার হরণের শামিল।

(৩) প্রতারণা করার মাধ্যমে দেশের আইন লঙ্ঘন।

আর অবৈধ উপার্জনের জন্য অবশ্যই কিয়ামতের দিন জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিবসে কোনো মানুষ নিজের স্থান থেকে এক বিন্দুও সরতে পারবে না, যতক্ষণ না তার কাছ থেকে চারটি প্রশ্নের জবাব নিয়ে নেওয়া হবে। তন্মধ্যে একটি প্রশ্ন হচ্ছে, নিজের ধন-সম্পদ কোথা থেকে উপার্জন করেছে এবং কোথায় ব্যয় করেছে? (তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৭)

মহান আল্লাহ আমাদের হালাল উপার্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন

সূত্রঃ কালের কন্ঠ

Leave a Reply