আল্লাহ ফেরেশতাদের বিভিন্ন দায়িত্বে নিযুক্ত করে রেখেছেন। কোরআন ও হাদিসে তাঁদের কাজের কিছু কিছু বর্ণনাও পাওয়া যায়। এর বাইরেও আল্লাহর অসংখ্য ফেরেশতা এমন আছেন, যাঁদের সংখ্যা ও কাজ মহান আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। নিম্নে ফেরেশতাদের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি শ্রেণি ও তাঁদের কাজগুলো উল্লেখ করা হলো—
১. জিবরাইল (আ.) : তাঁর কাজ হলো ওহি বা আল্লাহর বাণী নবী-রাসুলদের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন, যে ব্যক্তি জিবরাইলের শত্রু এ জন্য যে সে আল্লাহর নির্দেশে তোমার অন্তরে কোরআন পৌঁছিয়ে দিয়েছে, যা তার পূর্ববর্তী কিতাবের সমর্থক এবং যা মুমিনদের জন্য পথপ্রদর্শক ও শুভ সংবাদ। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৯৭)
২. মিকাইল (আ.) : তাঁর কাজ হলো বৃষ্টি বর্ষণ ও উদ্ভিদ উৎপাদন। আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) লেখেন, ‘মিকাইল আল্লাহর নৈকট্যশীল ও মর্যাদাবান ফেরেশতাদের একজন। তিনি বৃষ্টি ও উদ্ভিদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। ’ (আল বিদায়া ওয়ান-নিহায়া : ১/১০৫)
৩. ইসরাফিল (আ.) : আল্লাহ তাঁকে সিঙ্গার দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) লেখেন, ‘ইসরাফিলকে সিঙ্গায় ফুঁ দেওয়ার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি কবর থেকে ওঠা এবং হাশরের মাঠে পুনরুত্থানের জন্য সিঙ্গায় ফুঁ দেবেন। ’ (আল বিদায়া ওয়ান-নিহায়া : ১/১০৬)
৪. আজরাইল (আ.) : আল্লাহ তাঁকে মৃত্যুর ফেরেশতা হিসেবে মনোনীত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘বোলো, তোমাদের জন্য নিযুক্ত মৃত্যুর ফেরেশতা তোমার প্রাণ হরণ করবে। অবশেষে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছেই প্রত্যানীত হবে। ’ (সুরা সাজদা, আয়াত : ১১)
৫. রক্ষাকারী ফেরেশতা : আল্লাহর একদল ফেরেশতা সর্বাবস্থায় বান্দাদের রক্ষা করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের জন্য তার সামনে ও পেছনে একের পর এক প্রহরী থাকে; তারা আল্লাহর আদেশে তার রক্ষণাবেক্ষণ করে। ’ (সুরা রাদ, আয়াত : ১১)
৬. ভাগ্য লেখে যারা : মাতৃগর্ভে সন্তান মাংসপিণ্ডে পরিণত হওয়ার পর একজন ফেরেশতা তার ভাগ্য লেখেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘অতঃপর আল্লাহ একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন। আর তাঁকে চারটি বিষয়ে আদেশ দেওয়া হয়। তাঁকে লিপিবদ্ধ করতে বলা হয়, তার আমল, জীবিকা, আয়ু এবং সে কি পাপী হবে, না নেককার হবে তা। অতঃপর তার মধ্যে আত্মা ফুঁকে দেওয়া হয়। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩২০৮)
৭. কিরামুন-কাতিবুন : তাঁরা হলেন এমন একদল ফেরেশতা, যাঁরা মানুষের ভালো-মন্দ কাজ লিপিবদ্ধ করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি মনে করে যে আমি তাদের গোপন বিষয় ও মন্ত্রণার খবর রাখি না। অবশ্যই রাখি। আমার ফেরেশতারা তাদের সঙ্গে থেকে সব কিছু লিপিবদ্ধ করে। ’ (সুরা জুখরুফ, আয়াত : ৮০)
৮. আরশ বহনকারী : আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী একদল ফেরেশতা আল্লাহর আরশ বহন করে আছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা তার চারপাশ ঘিরে আছে। …’ (সুরা মুমিন, আয়াত : ৭)
৯. মুনকার-নাকির : মানুষকে কবরে রাখার পর মুনকার-নাকির নামে দুজন ফেরেশতা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আগমন করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মৃত লোককে বা তোমাদের কাউকে যখন কবরে রাখা হয়, তখন কালো বর্ণের নীল চোখবিশিষ্ট দুজন ফেরেশতা আসেন তার কাছে। তাঁদের একজনকে মুনকার ও অন্যজনকে নাকির বলা হয়। ’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১০৭১)
১০. জান্নাতের রক্ষী : জান্নাতের দায়িত্বশীল ফেরেশতারা জান্নাতিদের স্বাগত জানাবেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর জান্নাতের রক্ষীরা তাদের বলবে, তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক এবং জান্নাতে প্রবেশ কোরো স্থায়ীভাবে অবস্থানের জন্য। ’ (সুরা ঝুমার, আয়াত : ৭৩)
আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন
সূত্রঃ কালের কন্ঠ