
বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের আলোকে বেতন ভাতা প্রদান এবং ব্লকপদ বিলুপ্ত করে স্বতন্ত্র নিয়োগবিধি প্রণয়নের দুই দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন। এই দুই দফা না মানলে কর্মবিরতির হুশিয়ারী দিয়েছে সারা দেশের বিচার বিভাগের কর্মচারীরা।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি মো. রেজোয়ান খন্দকার এ কর্মসূচির ঘোষণা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বিচার বিভাগের বিভিন্ন বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরেন।
এ সময় তিনি বলেন, ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর শুধুমাত্র বিচারকদের জন্য ৬টি গ্রেড রেখে পৃথক পে-স্কেলসহ নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন করা হলেও সহায়ক কর্মচারীদেরকে ওই পে-স্কেলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বিচারকদের সঙ্গে আদালতের সহায়ক কর্মচারীরা একই দপ্তরে কাজ করেন। তবে জুডিসিয়াল সার্ভিস পে-স্কেলের আলোকে বিচারকদের বেতন-ভাতাদি হলেও সহায়ক কর্মচারীরা জনপ্রশাসনের আলোকে বেতন-ভাতাদি পেয়ে থাকেন।এছাড়া অনেক কর্মচারী পদোন্নতি ছাড়াই আক্ষেপ ও হতাশা নিয়ে একই পদে ৩৮/৪০ বছর চাকরি করেও পদোন্নতি বঞ্চিত থেকে অবসরে যাচ্ছেন, যা কোনো ভাবেই কাম্য নয়।
রেজোয়ান খন্দকার বলেন, সচিবালয়ে একজন অফিস সহায়ক চাকরিতে যোগদান করে উপ-সচিব পদে পদোন্নতি পেতে পারেন। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে অফিস সহকারী পদোন্নতি পেয়ে ডেপুটি রেজিস্ট্রার পর্যন্ত হতে পারেন। পুলিশের কনস্টেবল থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পর্যন্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। অথচ শতভাগ বৈষম্যের শিকার অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মচারীরা।
তিনি বলেন, দুই দফা ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে স্মারকলিপি প্রদানসহ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত একাধিকবার আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনায় দাবি বাস্তবায়নে আশ্বাস প্রদান করা হলেও এখনো দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। এছাড়াও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সাথে এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ সাক্ষাৎ করে দাবী উপস্থাপন করা হয়। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন দাবি যৌক্তিক হিসেবে সহমত পোষণ করলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট প্রদানকৃত কমিশন কর্তৃক প্রতিবেদনের সুপারিশে অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মচারীগণকে বিচার বিভাগের সহায়ক কর্মচারী হিসাবে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের আলোকে বেতন-ভাতাদি প্রদানের বিষয়ে কোনো প্রস্তাব রাখা হয়নি। এছাড়া চাকরি ও নিয়োগ বিধিমালার যুগোপযোগী সংস্কারের উল্লেখ করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, প্রধান বিচারপতি তার অভিভাষণে অ্যাসোসিয়েশনের দাবি উল্লেখ করে বক্তব্য রাখেন।
ইতোমধ্যে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় সৃষ্টির কার্যক্রম চলমান। সেখানেও সহায়ক কর্মচারীগণের বৈষম্য নিরসনে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ না থাকায় অধস্তন আদালতের প্রায় ২০ হাজার সহায়ক কর্মচারীকে আশাহত করেছে। যা বৈষম্যহীন ও স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে চরম অন্তরায়।
দুই দফা দাবি স্পষ্ট করে বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের এ সভাপতি জানান, প্রধান বিচারপতি, আইন উপদেষ্টা ও আইন সচিব মহোদয়ের নিকট বৈষম্যহীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠায় অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সহায়ক কর্মচারীদের বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের আলোকে বেতন ভাতা প্রদান করবেন। বিদ্যমান জুডিসিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের ১ম-৬ষ্ঠ গ্রেডের পরবর্তী ৭ম-১২তম গ্রেডভুক্ত করাসহ সকল ব্লকপদ বিলুপ্ত করে যুগোপযোগী পদ সৃজনপূর্বক যোগাতা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতির সুযোগ রেখে স্বতন্ত্র নিয়োগবিধি প্রণয়নের জোর দাবী জানাচ্ছি।
এ সময় হুশিয়ারী দিয়ে রেজোয়ান খন্দকার বলেন, আমাদের দুই দফা ন্যায্য দাবি আগামী ৫ মে তারিখের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে সারা দেশের অধস্তন বিচার বিভাগের কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে আগামী ৫ মে সকাল সাড়ে ৯ টা থেকে বেলা সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন কর্মসূচি ঘোষণা করছি। এরপরেও দাবি না মানলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাব।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মো. ছালাউদ্দিন, সহ-সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক তারিক আহাম্মেদ রিংকুসহ সারা দেশের বিচার বিভাগের কর্মচারীরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।