
আমি আমার স্বামীকে অনেক ভালোবাসি। ও আমাকে ডিভোর্স দেয়ার পরও আমরা আবার ডিভোর্স ক্যান্সেল করিয়ে বিয়ে করি। তবে এই বিয়েটা ওদের পরিবারের কেউ জানেনা। জানি একা বিয়ে করাটা ঠিক হয়নি। তবে একা না করলে ওকে পেতামও না। তাই কাউকে না জানিয়ে বিয়েটা করি। তার কিছুদিন পরে আমার পরিবার জেনে যায়। তারা আমাকে বাসা থেকে বের করে দেয়। আমি বাসা থেকে বের হয়ে আমার স্বামীকে ফোন দেই। ও খুব রাগ করে। ও বলে কীভাবে জানতে পারলো? তোমাকে বলেছি ২ বছর ব্যাপারটা যেন কেউ না জানে।
আমি বললাম এখন আমি বাসা থেকে চলে এসেছি। তাই আপাতত আমাকে একটা ভাড়া বাসায় রাখো, তাতে ও রাজি হয়না। ও আমাকে বাসায় চলে যেতে বলে। আর বাসায় গিয়ে বলতে বলে, যে আমি আবারও তাকে ডিভোর্স দিয়ে এসেছি। কিন্তু এই বিষয়ে আমি রাজি হইনি। আমি এখন নিজেই একটা বাসা ভাড়া নিয়ে একা থাকি। ও আমার সব খরচ দিচ্ছে। তবে প্রতিদিনই বাসায় চলে যেতে বলছে। আর আমার পরিবার থেকে বলছে আর আসবিনা। বাসায় গেলে আম্মুর সঙ্গে ভীষন ঝগড়া হয়। ওখানেও শান্তি পাইনা, এখানেও পাচ্ছিনা। ও প্রতিদিন এসে আমাকে দেখে যায়। তবে ওদের বাড়িতে নেবেনা। আমি পুরাপুরি এই সবের মধ্যে অসুস্থ্য হয়ে গেছি। তাই বাধ্য হয়ে স্বামীকে বললাম এই সব আর কত করবা এইবার প্লিজ ছেরে দিয়ে দাও আমাকে আমি যে আর পারছি না…
আমার স্বামী সমাজের চিন্তা করছে এখন। তাই ২ বছর অপেক্ষা করতে বলছে। অপরদিকে আমার পড়াশোনাও বন্ধ। ও পড়াশোনা করতে বলছে। বিবিএ প্রথম বছর কমপ্লিট করে ২য় বছরে ভর্তি হইনি। ২ বছর গ্যাপ, ভার্সিটিতে গিয়েছিলাম তারা বলল আর হবেনা। কারণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এখন আবার কোথায় পড়া শুরু করবো বুঝতে পারছিনা। আমার চারদিকে অন্ধকার হয়ে আসছে। এখন একটা সন্তান নিলে কি ভালো হবে? কোনটা করলে ভালো হবে আর কোনটা খারাপ হবে? এ ব্যাপারে আমাকে একটু সাহায্য করুন।
পরামর্শ: যে সমস্যা আপনি যেচে নিজের জীবনে এনেছেন, সেটার আদৌ কোন সমাধান রয়েছে কিনা,সেটা আমিও বুঝতে পারছি না। আর এর কারণ আপনার স্বামীর মানসিকতা আমার মোটেও ভরসাযোগ্য মনে হচ্ছে না। আর আপনি নিজেও সম্ভবত বুঝতে পেরেছেন সেটা। যে পুরুষ পরিবার এবং সমাজের সামনে আপনাকে স্ত্রী হিসাবে পরিচয় দেয়ার সাহস দেখাতে পারে না, এত বড় ঝুঁকি নিয়ে তাঁকে বিয়ে করার কি দরকার ছিল?
কী পাবার আশায় এই বিয়ে করেছেন? আপনি লিখেছেন যে বিয়ে না করলে তাঁকে পেতেন না। পালিয়ে বিয়ে করেও কি তাঁকে পেয়েছেন? নিজের পরিবারের সাথে ভালোই রয়েছে, সমাজের চোখেও তাঁর সম্মান ঠিকঠাক, ক্যারিয়ারও চলছে। অপরদিকে আপনি পরিবার হারিয়েছেন, মান সম্মান হারিয়েছেন, আপনার ক্যারিয়ার এবং ভবিষ্যৎ দুটোই অন্ধকার। আর আপনার স্বামীও আপনাকে আপনার বাবার বাড়ি ফিরে যেতে বলে। আপনি কি বুঝতে পারছেন, যে কত বিশাল ভুল করে ফেলেছেন জীবনে?
আমি স্পষ্ট করে একটি কথা বলি। আপনার এখন কোন ভবিষ্যৎ নেই। ছেলেটির আশায় থেকে আপনি জীবনে কিছুই পাবেন না। তার পরিবার থেকে আপনার চাইতে ভালো একটি মেয়ের সাথে বিয়ের প্রপোজাল আনলে আপনার স্বামী যে সেই বিয়ে করবে না, তারও কোন ভরসা নেই। তাই আপনাকে এমন কিছু করতে হবে যেন আপনার স্বামীর কাছে আপনার দাম থাকে। মনের মাঝে আপনাকে পাবার আকাঙ্ক্ষা থাকে। আর সেটার একটাই উপায়, নিজের ভবিষ্যতকে উজ্জ্বল করে তোলা। আপনার স্বামী আপনার ফিউচার না, এটা খুব ভালো করে বুঝে নিন। ছেলেটি যে আপনাকে স্ত্রী পরিচয়ে নিজের বাড়িতে নেবে না, এটা পরিষ্কার। আপনি সেই আশায় না থাকলেই ভালো করবেন।
আর আমিও মনে করছি না যে, এভাবে একা একা থাকাটা আপনার জন্য ঠিক হচ্ছে। কেননা আপনার কোন উপার্জন নেই আর আপনি ছেলেটির ওপরে নির্ভরশীল। আপনার এরকম অবস্থায় বাচ্চা কিছুতেই নেওয়া যাবে না। আপনি বাড়ি ফিরে যান। যত ঝগড়াই হোক না কেন, তারা আপনার মা বাবা। ছেলেটি আপনাকে ফেলে দিলেও মা বাবা দেবে না। তাদের হাত পা ধরে ক্ষমা চান। মা বাবার কাছে ক্ষমা চাইলে কেউ ছোট হয় না। স্বামীকে এটা বলে যান, যে এইবার যদি চলে যান, তাহলে আর কোনদিন ফিরবেন না।
এটাই আপনার শেষ যাওয়া। স্বামী আপনাকে সত্যিই ভালোবেসে থাকলে আপনাকে যেতে দেবে না। নিজের বাড়িতে নিয়ে যাবে। আর স্বামী যদি বাড়িতে না নিয়ে ধানাই পানাই করে, তাহলে এই লোকের ভালোবাসায় ভরসা না করাই উচিত হবে। করলে বিশাল ভুল করে ফেলবেন। নিজের বাড়ি ফিরে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিন। যে কোন বয়সেই সেখানে ভর্তি হওয়া যায় । লেখাপড়া শুরু করুন। একই সাথে বিশেষ কিছু কাজ শিখুন, যেগুলোর মাধ্যমে আপনি উপার্জন করতে সক্ষম হবেন।
মা বাবার সাথে ঝগড়া করবেন না, নিজের মত চুপচাপ থাকুন। আর আবেগ বাদ দিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করুন যে আসলে জীবনে কি চান। ইতিমধ্যেই জীবনের মারাত্মক ক্ষতি করে ফেলেছেন। অতিরিক্ত চিন্তা করতে গিয়ে আর আবেগী হয়ে আর কোন ক্ষতি করবেন না প্লিজ।