Friday, March 29

নারী-পুরুষের যৌন রোগসমূহ নির্মূলে কার্যকর ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন চিকিৎসা

সমস্ত পৃথিবীতেই মানুষ নানা প্রকার জটিল এবং কঠিন যৌনবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই রোগগুলি যে শুধু তীব্র কষ্টদায়ক তাই নয় যথাযথ জ্ঞানের অভাবে এইগুলির সুচিকিত্সা থেকেও বঞ্চিত হন অনেক ভুক্তভোগী। নারী পুরুষের যৌন সংক্রান্ত নানা প্রকার রোগসমূহ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকলেও অন্তত এ বিষয়ে খুব সহজেই সতর্ক থাকা যাবে। আসুন এই সংক্রান্ত কিছু রোগ-ব্যাধি সম্পর্কে জেনে নেই।

গনোরিয়া :- যৌন বাহিত এই রোগটি নাইজেরিয়া গনোরি নামক একপ্রকার ব্যকটেরিয়ার কারনে হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে মিলনের ৮-১০ দিন পর এই রোগের লক্ষন গুলো দৃষ্টিগোচর হয়। পুরুষের যৌনাংগ দিয়ে পুজ (Pus) বের হওয়া, প্রসাবে জ্বালাপোড়া এই রোগের উপসর্গ। মহিলাদের যোনিপথ, মূত্রনালী ও গুহ্যদারে এই রোগ হয়। যদিও অনেক মহিলার ক্ষেত্রেই রোগটি কোনো লক্ষন প্রকাশ করেনা তবে প্রসাবে জ্বালাপোড়া, যোনিপথে স্রাব আসা (Vaginal discharge) এসব উপসর্গ নিয়ে অধিকাংশ রোগী চিকিৎসকের দারপ্রান্তে উপস্থিত হয় । সমকামীরা এই রোগে গুহ্যদারে আক্রান্ত হয়।

যৌনাংগ থেকে নিঃসৃত নির্যাস বা পুজ থেকে স্মেয়ার (Smear) বা স্লাইড তৈরী করে অথবা কালচার (Culture) করেও এর জীবানু সনাক্ত করা হয়। অভিজ্ঞ হোমিও ডাক্তারের তত্বাবধানে কিছু দিন যথাযথ চিকিৎসা নিলে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই এই রোগ একেবারে মূল থেকে নির্মূল হয়ে যায়। আবার দেখা যায় সঠিক সময়ে চিকিতৎসা না করালে পুরুষের শুক্রাশয় (Testes), মহিলাদের ডিম্বাশয় (Ovary), ডিম্বনালী এসব স্থানে প্রদাহ হয়ে রোগী বন্ধাত্ব বরণ করতে পারে। মায়ের এইরোগ থাকলে শিশু অপথাল্মিয়া নিওন্যাটারাম (Opthalmia neonataram) নামক চোখের প্রদাহ নিয়ে জন্ম নিতে পারে।

সিফিলিস :- সিফিলিস রোগের জীবানুর নাম ট্রেপনোমা প্যালিডাম। সিফিলিস আক্রান্ত কারো সাথে যৌন মিলনে এই রোগ হয়ে থাকে, তবে রোগীর রক্ত গ্রহনের মাধ্যমেও এই রোগ হয়। আবার গর্ভাবস্থায় মায়ের সিফিলিস থেকে থাকলে সন্তান সেখান থেকে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ভূমিস্ট হয়ে থাকে। সাধারণত আক্রান্ত কারো সাথে যৌন মিলনের ২-৪ সপ্তাহ পরে এই রোগের লক্ষন গূলো দেখা দেয়, তবে কারো কারো ক্ষেত্রে ৩ মাস পর্যন্ত দেরী হতে পারে।

এটা শুরুতে পুরুষের যৌনাঙ্গের মাথায় বা শীস্নে হাল্কা গোলাপী বর্ণের একটা দাগ হিসেবে দেখা দেয়। ধীরে ধীরে এটা বড় হয়ে ফোস্কা বা ঘায়ের মতো হতে থাকে। রোগ শুরুর ২ মাসের মধ্যেও যদি চিকিৎসা না নেয়া হয় তবে যৌনাঙ্গের ঘা দ্রুত ছড়াতে থাকে এবং সেই সাথে জর ও মাথা ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয় এবং শরীরের বিশেষ করে কুচকীর গ্রন্থিগুলো বড় হয়ে যেতে থাকে। এ রোগ পায়ু-পথ, ঠোট, মুখ, গলনালী, খাদ্যনালী এমনকি শ্বাসনালীতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে, অবশ্য এটা নির্ভর করে কোন পথে যৌনাচার করা হয়েছিলো তার উপড়।

এ অবস্থায় ও যদি কেউ চিকিৎসা নিতে অবহেলা করে তবে রোগটি খুবই জটিল আকার ধারন করে। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে এটি সুপ্ত অবস্থায় চলে যায় এবং বছর দুয়েক সুপ্ত থাকার পরে ভয়াবহ রুপে দেখা দেয়। এভাবে চিকিৎসাহীন থেকে গেলে পুরুষাঙ্গের মাথায় বিশাল আকৃতির বিশ্রী ক্ষত বা ঘা হয়, অবস্থা আরো জটিল হতে থাকে এবং এক সময় এই রোগ হৃদপিন্ড এবং মস্তিস্কে ছড়িয়ে পরে বা নিউরোসিফিলিস (Neurosyphilis) হয়, যা রোগীকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়।

বিভিন্ন রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে (যেমন VDRL, TPHA) এই রোগটি সনাক্ত করা যায়। প্রাথমিক পর্যায়েই সিফিলিসের চিকিৎসা করানো উচিত। কারণ প্রথম থেকেই হোমিও ট্রিটমেন্ট নিলে জটিলগুলি আর বাড়তে পারে না এবং রোগী দ্রুত আরোগ্য লাভ করেন।

ব্যাকটেরিয়াল ভাজিনোসিস (বিভি/BV) :- এই রোগকে কঠিন অর্থে যৌন সংক্রান্ত রোগ বলা যায় না, কারণ এই রোগ যৌনমিলনের দ্বারা সংক্রামিত হয় না । তবে যৌনমিলনের দ্বারা এই রোগের বাড়াবাড়ি হতে পারে এবং যে সকল মহিলারা কোন দিন যৌন সঙ্গম করেননি, তাদের থেকে যে সকল মহিলারা নিয়মিত যৌন সঙ্গম করে থাকেন তাদের মধ্যে এই রোগ বেশী হয় । জনন যন্ত্রের স্বাভাবিক জীবানুর ভিতর সমতা না থাকার দরুন এই রোগ হয়ে থাকে। যদিও এই জীবানু সাধারনভাবে ক্ষতিকারক নয় এবং অজানাভাবে এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তির মধ্যে যেতে পারে, তাহলেও মধ্যে মধ্যে যোনি থেকে বেশী পরিমানে স্রাব বেরোতে পারে এবং সেটার থেকে মাছের গন্ধের মত গন্ধ বেরোতে পারে।

যদিও পরিষ্কার ভাবে জানা যায় না যে কেন ব্যাকটেরিয়াল ভাজিনোসিস (বিভি/BV) হয়, তবে এটা মনে করা হয় যে বীর্যে এলকালাইন থাকার দরুন এটা হতে পারে, কারন এটা স্ত্রী যোনির জীবানুগুলি যেগুলি এসিডিক(টক), সেগুলির মধ্যে গন্ডগোল সৃষ্টি করে। এই রোগ হওয়ার আর একটা কারন হতে পারে কয়েল ব্যবহার করার ফলে। একজন মহিলা থেকে এই রোগ কোন পুরুষের মধ্যে যেতে পারে না। তবে তার এই রোগের চিকিত্সা করানো অত্যন্ত জরুরী কারণ ব্যাকটেরিয়াল ভাজিনোসিস কখনও কখনও জরায়ু এবং ফেলোপাইন টিউব পর্যন্ত যেতে পারে এবং তার ফলে কঠিন সংক্রামক রোগের সৃষ্টি হতে পারে। তাই সঠিক সময়ে যথাযথ হোমিওপ্যাথি চিকিত্সা নিয়ে রোগটিকে সমূলে নির্মূল করে ফেলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

বালানিটিস :- এই রোগকে প্রায়ই বলা হয়ে থাকে যে এটা হল সংক্রামনের লক্ষন এবং হয়ত এটা সংক্রামক রোগ নয়। এক কথায় বলা যায় না যে এটা যৌন সংক্রামক রোগ, এটা বিশেষ করে হচ্ছে যৌন সঙ্গমের ফলাফল। এই রোগ কেবলমাত্র পুরুষদের হয়। এই রোগের লক্ষন হল পুরুষ জনন যন্ত্রের মাথা ফুলে যাওয়া এবং যাদের লিঙ্গের উপরের চামড়া কাটা, অন্যদের থেকে তাদের এই রোগ কম হয়।

অপরিস্কার অবস্থা, কনডোম এবং স্পারমিসাইডস্‌ (জেলী জাতীয় পদার্থ) ব্যবহার করার জন্য জ্বালা যন্ত্রনা হওয়ার জন্য, সুগন্ধি প্রসাধন দ্রব্য গুলির ব্যবহার করার এবং থ্রাস হওয়ার ফলে এই রোগ হতে পারে। কতকগুলি বিশেষ প্রসাধন দ্রব্যগুলি ব্যবহার না করে এবং জনন যন্ত্রের চামড়ার নীচে পরিষ্কার করে ধুঁয়ে রাখলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এই রোগের যথাযথা হোমিওপ্যাথি চিকিত্সা রয়েছে।

ক্লামোডিয়া :- এটা হচ্ছে সবচাইতে সাধারন জীবানু দ্বারা সংক্রমিত যৌন সংক্রান্ত রোগ। এই রোগের যদি সময়মত চিকিত্সা না হয় তাহলে বয়স হলে পরে গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। ক্লামাডিয়া মহিলাদের গর্ভাশয়ের সঙ্কীর্ন অংশে রোগের সংক্রামন করে। এই রোগের দ্বারা পুরুষ এবং মহিলা দুজনেরই মুত্রনালী, মলদ্বার এবং চোখে এই রোগ সংক্রামিত হতে পারে। এই রোগ যে সংক্রামিত হয়েছে, যে কোন সময়েই তার লক্ষন দেখা যেতে পারে। সাধারনত: এই রোগের সংস্পর্শে আসার এক থেকে তিন সপ্তাহের ভিতর এই লক্ষনগুলি দেখা যায়। তবে এটাও দেখা যায় যে এর লক্ষনগুলি অনেকদিন পর প্রকাশ পেতে পারে।

ক্রেব অথবা পিউবিক লাইস :- এইগুলি হচ্ছে কাকড়ার মত ছোট পরগাছা জীবানু/প্যারাসাইটস। এইগুলি চুলের মধ্যে বাস করে এবং রক্ত শুষে খায়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই যৌন এলাকার চুলের ভিতর। তবে বগলের চুলে, শরীরের অন্যান্য জায়গায় এমন কি মুখের এলাকায়, যেমন ভুরুর ভিতরেও এই জীবানুগুলি থাকতে পারে। এগুলি মানুষের শরীর ছাড়া বাইরেও থাকতে পারে, এবং সেইজন্য জামাকাপড়ের ভিতরে বিছানার কাপড়চোপর এবং টাওয়েল গুলিতেও পাওয়া যেতে পারে। আপনার হয়ত: এই ক্রেব/কাকড়া থাকতে পারে কিন্তু আপনি জানেন না, তবে ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পরে আপনার চুলকানি হতে পারে।

এই ক্রেব/কাকড়াগুলি সাধারনত যৌন সঙ্গম করার সময় একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে যায়, তবে জামাকাপড়, টাওয়েল অথবা বিছানাপত্রে অন্য কারো সঙ্গে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করলেও এই রোগ একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে যেতে পারে। এই রোগে আপনি যাতে আক্রান্ত না হতে পারেন, কার্যকরীভাবে ভাবে সেটা বন্ধ করা কঠিন। তবে জামাকাপড় এবং বিছানাপত্র গরম জলে ধুঁয়ে আপনি অন্যদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়া বন্ধ করতে পারেন।তবে যথাযথ হোমিওপ্যাথি চিকিত্সা নিলে এই রোগ দূর হয়ে যায়।

এপিভিডাইমিটিস :- এটি হচ্ছে এপিডিডাইমিটিসের ফোলা। এটা পুরুষের শুক্রাশয়ের উপরের কতকগুলি টিউব, যেখানে পুরুষের শুক্রানু/স্পার্ম জমা করা থাকে। সবসময় এই রোগ যৌন সংক্রামক রোগের ফলে হয় না। কিন্তু যদি কখনও কখনও এইভাবে হয়ে থাকে, তাহলে তার মানে হল যে ক্লামাডিয়া অথবা গনোরিয়া থাকার জন্য হয়েছে। এই অসুখের লক্ষন হল শুক্রাশয় এবং অন্ডকোষ ফুলে যাওয়া এবং যন্ত্রনা হওয়া।

এই রোগ হওয়া বন্ধ করার পথ হল যৌনমিলনের সময় কনডোম ব্যবহার করা। যেমন ক্লামাডিয়া এবং গনোরিয়া যাতে না হতে পারে, তারও সর্বশ্রষ্ঠ পথ হল কনডোম ব্যবহার করা। এপিডিডাইমিটিস রোগ এক ব্যক্তি থেকে আরেকজন ব্যক্তির মধ্যে ছড়ায় যায় না তবে অন্য কোন সংক্রামক রোগ, থাকলে সেগুলি এই রোগকে ছাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

জেনিটাল ওয়ার্টস/জননেন্দ্রিয় আঁচিল :- এইগুল পুরুষ বা মহিলাদের জননেন্দ্রিয়ের যতে কোন অংশে ছোট ছোট মাংসপিন্ডের মত গজায়। এইগুলি হয় হিউম্যন পাপিলোমা ভাইরাস/রোগের জীবানু (এইচ পি ভি/HPV) দ্বারা। এই ওয়ার্ট/আঁচিল জননেন্দ্রিয় বা শরীরের অন্য অংশেও, যেমন হাতে হতে পারে। এই রোগের সংষ্পর্শে আসার ১ থেকে তিন মাসের ভিতর জননেন্দ্রিয়ে এই ওয়ার্ট/আঁচিল বেরোয়। আপনি বা আপনার সঙ্গী হয়ত দেখতে পাবেন যে জননেন্দ্রিয়তে ছোট ছোট গোলাপী মাংসপিন্ড বা ফুলকপির মত দেখতে মাংসপিন্ড গজিয়েছে।

এই মাংসপিন্ড স্ত্রী যোনী দ্বারে, অন্ডকোষ বা মলদ্বারে হতে পারে। এই মাংসপিন্ডগুলি আলাদা আলাদা ভাবে একটা একটা করে বা একসঙ্গে অনেকগুলি হতে পারে। সেগুলিতে সাধারনত কোন ব্যথা হয় না তবে চুলকানি হতে পারে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই অন্য কোন লক্ষন দেখা যায় না এবং এই ওয়ার্টগুলি/আঁচিলগুলি চোখে দেখা কঠিন। যদি কোন মহিলার গর্ভাশয়ের সঙ্কীর্ন অংশে এই ওয়ার্ট/আঁচিল হয়ে থাকে, তাহলে এর ফলে অল্প স্বল্প রক্তপাত হতে পারে, অথবা কদাচিত্ রঙীন স্রাব বেরোতে পারে।

গাট ইনফেকশ্‌ন/তন্ত্রের সংক্রামন :- এই রোগ যৌনমিলনের সময় একজনের থেকে আরেকজনের মধ্যে যায়। সব থেকে সাধারন দুইটা সংক্রামনের নাম হল এমিয়োবিয়াসিস এবং জিয়ারডিয়াসিস। এই রোগের সংক্রামন জীবানুর/ব্যকটিরিয়ার দ্বারা হয়ে থাকে এবং সেগুলি যখন গাট বা তন্ত্রে পৌঁছায় তখন পেটখারাপ বা পেটে ব্যথা হতে পারে। কোন ব্যক্তির যখন এই রোগ থাকে তখন যৌনমিলনের সময় এই রোগ অন্য ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করতে পারে। বিশেষত: যদি মলের সংষ্পর্শে আসে, যেমন রিমিং এবং মলদ্বারের যৌন সঙ্গম দ্বারা।

কনডোম, দাতের বাঁধ/ডেন্টাল ডেমস অথবা লেটেক্স গ্লাভস ব্যবহারের দ্বারা এই সংক্রামন বন্ধ করা যায়। যৌন খেলনাগুলি ব্যবহার করার পরে ভালভাবে পরিষ্কার করা এবং মলের সংষ্পর্শে আসার পর ভালভাবে হাত ধোওয়া উচিত। এই সংক্রামনগুলির বেশীরভাগই পেট খারাপের ঔষধের চিকিত্সাতেই ভাল হয়ে যায় তবে প্রপার হোমিও ট্রিটমেন্ট নেয়া উচিত ।

মলাস্কাম :- এটা হচ্ছে একটা চামড়ার রোগ। এই রোগ হয় মলাস্কাম কন্টাজিওসাম নামক রোগের বীজ/ভাইরাসের দ্বারা। এই রোগের ফলে চামড়ায় ছোট ছোট ফোলা দেখা দেয়। এই ফোলাগুলি দুই সপ্তাহ থেকে কয়েক বত্সর পর্যন্ত থাকতে পারে। মলাস্কামের এই ফোলাগুলি উরুতে, পাছাতে, জননেন্দ্রিয়ে এবং কখনও কখনও মুখেও হতে পারে। এই রোগজীবানু/ভাইরাস যৌনমিলনের সময়ের শরীরের যোগাযোগের এবং অন্যান্যভাবে চামড়ার যোগাযোগের দ্বারা একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে যেতে পারে।

এই রোগ আটকানোর পথ হল কনডোম ব্যবহারের দ্বারা এবং যে ব্যক্তির এই রোগ আছে তার চিকিত্সা না হওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে যৌন মিলন না করা, যাতে তার শরীরের চামড়ার সঙ্গে কোন যোগাযোগ না হয়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মলাস্কামের কোন চিকিত্সার প্রয়োজন হয় না এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই রোগ ভাল হয়ে যায়। তবে, কখনও কখনও এই রোগ শরীরে থেকে যেতে পারে।

নন-স্পেসিফিক্‌ উরেত্রিটিস(এন এস ইউ/NSU) :- এই রোগের ফলে পুরুষের মূত্রনালী ফুলে যায়। বিভিন্ন ধরনের সংক্রামনের জন্য এই ফোলার সৃষ্টি হতে পারে। এই রোগ সবচাইতে বেশী হয় ক্লামাডিয়ার সংক্রামনের ফলে। এন এস ইউ/NSU হয়ত একজন পুরুষ অথবা নারীর সঙ্গে সম্পর্ক আরম্ভ হওয়ার মাস অথবা কোন কোন ক্ষেত্রে বহু বছর পরেও হতে পারে।

এই রোগের লক্ষনের ভিতর থাকতে পারে, প্রস্রাব করার সময় ব্যথা বা জ্বালা করা। সকালে প্রস্রাব করার সময়ে লিঙ্গের মাথায় সাদা ঘনরস দেখা যেতে পারে। আপনার হয়ত মনে হতে পারে যেন আপনার ঘন ঘন প্রস্রাব করার প্রয়োজন। প্রায়সই কোনরকম লক্ষন দেখা যায় না। তবে এই এর মানে এই নয় যে আপনার থেকে আপনার সঙ্গীর ভিতর এই রোগের সংক্রামন হবে না। আরও খবরের জন্য এন এস ইউ/NSU দেখুন।

ট্রিকোমোনাস ভাজিনোসিস :- এটাকে ট্রিচ ও বলা হয়। এই রোগ হয় একরকমের পরগাছা জীবানু দ্বারা যেটা মহিলাদের যোনীতে এবং পুরুষদের মুত্রনালীতে পাওয়া যায়। প্রায়সই এই রোগের কোন লক্ষন দেখা যায় না। যদি কোন লক্ষন দেখা যায় তাহলে সেগুলি হতে পারে পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রস্রাবের সময় ব্যথা এবং স্রাব এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে স্রাব, যৌনমিলনের সময় এবং প্রস্রাবের সময় ব্যথা এবং যোনীদ্বারে ফোলা এবং ব্যথা। যে ব্যক্তির এই রোগ আছে, তার সঙ্গে মৌখিকভাবে, যোনীতে অথবা মলদ্বারে যৌনমিলন করবার সময় অন্য ব্যক্তির মধ্যে এই রোগের সংক্রামন হতে পারে। তবে হোমিওপ্যাথি চিকিত্সায় এই রোগ খুব তাড়াতাড়িই নির্মূল হয়ে যায়।

থ্রাস :- এটাকে ক্যানডিয়াসিসও বলা হয়। এটা হচ্ছে একরকমের ইষ্ট(yeast), যেটা চামড়ার উপরে বাস করে এবং সাধারনত শরীরের জীবানুগুলির/ব্যাকটেরিয়াগুলির দ্বারা সংযত থাকে। তবে যদি এই ইষ্ঠ পরিমানে বাড়ে, তাহলে পুরুষ এবং মহিলা দুইজনেরই শরীর ফুলে যেতে, ঘা হতে এবং চুলকানি এবং লিঙ্গ বা যোনী থেকে স্রাববের হতে পারে। যে মহিলার এই রোগ আছে তার যোনী থেকে ঘন সাদা স্রাব বেরোতে পারে এবং প্রস্রাব করার সময় ব্যথা হতে পারে। একজন পুরুষ যার এই রোগ আছে, তার হয়ত লিঙ্গ থেকে একই ধরনের ঘন স্রাব বেরোতে পারে এবং তার লিঙ্গের চামড়া পেছনে টানতে অসুবিধা হতে পারে। যে ব্যক্তির থ্রাস আছে, যৌনসঙ্গমের সময়ে তার শরীর থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে এই রোগের সংক্রামন হতে পারে।

তবে আপনি যদি টাইট নাইলন টাইট অথবা লাইক্রা কাপড় পরেন অথবা কতকগুলি বিশেষ ধরনের এ়ন্টিবায়োটিকস খান তাহলেও এই রোগ হতে পারে। তবে কখনও কখনও এই রোগ হবার সঠিক কারন জানা যায় না। যৌনমিলনের সময় কনডোম ব্যবহার করলে এবং পুরুষ মানুষ তাদের লিঙ্গের চামড়ার নীচের অংশ ভাল করে ধুলে এই রোগের সংক্রামন বন্ধ করা যায়। এর চিকিত্সার ভিতরে আছে এন্টি ফাংগাল ঔষুধের ব্যবহার। থ্রাস ভাল হয়ে গেলেও, আরেকবার হতে পারে, বিশেষ করে মহিলাদের।

স্কেবিজ :- এই রোগ হয় একধরনের পরজীবানু বা প্যারাসাইট দ্বারা। এইগুলি চামড়ার নীচে ঢুকে যায় এবং এর ফলে চুলকানি হয়। এই পরবীজানু বা প্যারাসাইটগুলি খুবই ছোট এবং এগুলিকে চোখে দেখা যায় না। বহু লোকেই জানেন না যে তাদের এই রোগ আছে। এই রোগের ফলে চুলকানি হয় এবং এটা আরম্ভ হয় সংক্রামনের ২ থেকে ৬ সপ্তাহের ভিতর। হাতের চামড়ার নীচে পাছায় বা জননেন্দ্রিয়তে লাল লাল লাইন হয়ত এই রোগের চিহ্ন হতে পারে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই যৌন মিলনের সময়ে শরীরের সংস্পর্শই হল এই রোগের কারণ।

তবে এটাও সম্ভব যে, যে ব্যক্তির এই রোগ আছে, তার ব্যবহার করা টাওয়েল বা কাপড় চোপড় ব্যবহার করলেও এই রোগ হতে পারে। যদিও সাধারনভাবে এরকম হয় না। আপনার নিজের এই রোগ না হওয়া বন্ধ করার কোন কার্যকরী পথ নেই। তবে কাপড় চোপড় বিছানাপত্র, গরম জলে ধুঁয়ে অন্যদের এই রোগের আক্রমন থেকে বাঁচাতে পারেন। ফার্মেসী থেকে লোশন কিনে শরীরে লাগিয়ে এই পরজীবানু বা প্যারাসাইট গুলিকে মারতে পারেন।

যৌনবাহিত রোগসমূহ নির্মূলে হোমিওপ্যাথি :- পুরুষ এবং মহিলাদের যাবতীয় যৌনবাহিত রোগসমূহ নির্মূলে হোমিওপ্যাথি চিকিত্সা বিজ্ঞানের ভুমিকা অতুলনীয়। অ্যালোপ্যাথি যেখানে এই রোগগুলির চিকিত্সায় এন্টিবায়োটিকসহ অন্যান্য উচ্চ শক্তির ঔষধ প্রয়োগ করে নানা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় রোগীদের বিপর্যস্থ করে তুলে সেখানে হোমিওপ্যাথি কোন প্রকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই পুরুষ এবং মহিলাদের যাবতীয় যৌনরোগ সমূকে নির্মূল করতে যুগ যুগ ধরে কার্যকর চিকিত্সা দিয়ে আসছে। তাই যৌনবাহিত রোগসমূহের সুচিকিত্সার জন্য অভিজ্ঞ একজন হোমিওপ্যাথের দারস্থ হাওয়াটাই অধিক যুক্তিযুক্ত।

Leave a Reply