Friday, April 26

মির্জা ফখরুলকে জাতিসংঘ মহাসচিবের ফোন,কি হতে যাচ্ছে বিস্তারিত

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এবং সার্বিক বিষয়ে আলোচনার জন্য বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে টেলিফোন করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস।

এসময় খালেদা জিয়ার গ্রেপ্তারের পর ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি না দেওয়া এবং রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে জনমত সৃষ্টিতে বিএনপির ভূমিকার প্রশংসা করেন জাতিসংঘ মহাসচিব।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের মিডিয়া উইংয়ের একজন সদস্য এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রোববার সন্ধ্যায় মির্জা ফখরুলকে টেলিফোন করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। তাদের মধ্যে ৯ মিনিট কথোপকথন হয়।

এসময় দেশের রাজনৈতিক এবং সার্বিক বিষয় তুলে ধরেন জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে। অ্যান্টোনিও গুতেরেস এসময় শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য ফখরুলকে ধন্যবাদ জানান।

টেলিফোনে আলাপকালে মির্জা ফখরুল রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য জাতিসংঘের সহযোগিতা চান।

খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়ও জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে সংক্ষেপে তুলে ধরেন তিনি।

এর আগে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য শনিবার তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেওয়া হয়।

সেখানে প্রথমে তার রক্ত পরীক্ষা করানো হয়। এরপর করানো হয় এক্সরে। এরপর আবার তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

খালেদা জিয়ার অসুস্থতার প্রেক্ষাপটে মূলত জাতিসংঘ মহাসচিব ফোন দিয়েছেন বলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের মিডিয়া উইংয়ের ওই সদস্য জানান।

জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখে বাংলাদেশের প্রশংসা

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশের অসামান্য অগ্রগতি, বিশেষ করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দুর্যোগ প্রতিরোধ সক্ষমতা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ভূয়সী প্রশংসা করেন। জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবিলার লড়াইয়ে বাংলাদেশকে সব সময় প্রথম সারিতে দেখতে চান তিনি। তা ছাড়া এসডিজি বাস্তবায়নের অগ্রগতিতেও বাংলাদেশকে সামনের কাতারে আশা করেন।

গতকাল সোমবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকারে আন্তোনিও গুতেরেস এ আশাবাদ তুলে ধরেন। আজ মঙ্গলবার জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

শান্তিরক্ষা ও শান্তি নির্মাণে ভূমিকা রাখার জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন জাতিসংঘের মহাসচিব। তিনি জানান, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অন্যতম বৃহৎ সেনা ও পুলিশ সদস্য প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাধারণ পরিষদের আসন্ন অধিবেশনের সময় অনুষ্ঠেয় ‘সার্কেল অব লিডার’ বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।

জাতিসংঘের মূল্যবোধ ও নীতিমালার প্রতি বাংলাদেশের অবিচল অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশ জাতিসংঘ মহাসচিবের নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল। আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় মহাসচিবের অগ্রাধিকার প্রদানের প্রশংসা করেন তিনি। বিগত আট বছরে বাংলাদেশ আর্থসামাজিক উন্নয়নে যে অগ্রগতি সাধন করেছে, পররাষ্ট্রসচিব সে বিষয়ে মহাসচিবকে অবহিত করেন।

জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের আগে পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আন্তরাষ্ট্রীয় সংঘবদ্ধ অপরাধবিষয়ক এক উচ্চপর্যায়ের বিতর্কে অংশ নেন। পররাষ্ট্রসচিব তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় ‘ট্রান্সন্যাশনাল অর্গানাইজড ক্রাইম’ মোকাবিলায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। এ ধরনের অপরাধ দমনে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী আইনি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। অধিকতর নজরদারি ও কার্যকর বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অবৈধ অভিগমন ও মানব পাচার এবং চোরাচালানের প্রবণতা অনেকাংশে কমেছে।

শহীদুল হক বলেন, ‘আমরা স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছি এবং এটিকে শক্তিশালী করেছি। মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসবাদের অর্থায়ন মোকাবিলায় আমাদের টেকসই উদ্যোগগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃত পেয়েছে।’

মাদক, আগ্নেয়াস্ত্র, বন্য প্রাণী ও সাংস্কৃতিক সম্পদের অবৈধ পাচার রোধে কার্যকর আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর পররাষ্ট্রসচিব গুরুত্বারোপ করেন। তিনি ‘ডার্ক ওয়েব’-এর বিস্তারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন, যা প্রায়ই সন্ত্রাসী ও সহিংস চরমপন্থীরা তাদের কাজে ব্যবহার করে থাকে।

৩০ আসন চেয়ে বিএনপিকে অলির চিঠি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির কাছে কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমেদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ৩০টি আসনে প্রার্থী দাবি করেছে। শুক্রবার এ সংক্রান্ত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি সংবাদমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। এতে স্বাক্ষর করেছেন অলি আহমেদের প্রেস সচিব সালাউদ্দিন রাজ্জাক।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মাঠে সক্রিয় ভূমিকা পালনের পাশাপাশি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক এলডিপি। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের হাতে অলি আহমেদ এরই মধ্যে দল থেকে ৩০ প্রার্থীর তালিকা ধরিয়ে দিয়েছেন। যারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন আসনে এলডিপি মনোনীত জোটপ্রার্থী হিসেবে লড়তে আগ্রহী।

এতে আরও বলা হয়, সম্প্রতি কর্নেল (অব.) অলির মহাখালী ডিওএইচএস’র বাসায় গিয়ে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রাম, নির্বাচন ও আসন বণ্টন নিয়ে দু’নেতার মধ্যে আলোচনা হয়।

ওই বৈঠক থেকেই কর্নেল অলি আগামী নির্বাচনে তার দলের সম্ভাব্য প্রার্থীর নামের তালিকা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

কর্নেল অলি জোটের প্রধান সমন্বয়ক মির্জা ফখরুলকে অবহিত করেন, সারাদেশে অন্তত ১০০টি আসনে নির্বাচন করার জন্য তার দল এলডিপি প্রস্তুত রয়েছে।

এলডিপির ৩০ জনের তালিকায় রয়েছেন- এলডিপির চেয়ারম্যান ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রম (চট্টগ্রাম-১৪), মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ (কুমিল্লা-৭), প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল করিম আব্বাসী (নেত্রকোনা-১), অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ মোহম্মদ খলিলুর রহমান (জয়পুরহাট -২), প্রফেসর মোহম্মদ আব্দুল্লাহ (চাঁদপুর-৩), আব্দুল গণি (মেহেরপুর-২), সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম (লক্ষ্মীপুর-১), প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. কামালউদ্দিন মোস্তফা (মাগুরা-১), ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম ভুঁইয়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫), ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. নুরুল আলম (চট্টগ্রাম-৭), উপদেষ্টা মো. আবু জাফর সিদ্দিকী (ময়মনসিংহ-২), ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. নেয়ামুল বশির (চাঁদপুর-৫), যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দীন চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৬), ড. জহিরুল হক (ঝালকাঠি-১), সাংগঠনিক সম্পাদক সালাহ উদ্দীন রাজ্জাক (গোপালগঞ্জ-১), সাংগঠনিক সম্পাদক এমএ বাশার (ময়মনসিংহ-৮), শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. এয়াকুব আলী (চট্টগ্রাম-১২), ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. হামিদুর রহমান (ময়মনসিংহ-৯), অ্যাডভোকেট চৌধুরী এম এ খাইরুল কবির পাঠান (নেত্রকোণা-৫), যুগ্ম-মহাসচিব তমিজ উদ্দীন টিটু (ঢাকা-৫), উপদেষ্টা অধ্যাপিকা কারিমা খাতুন (বগুড়া-১), সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপিকা তপতী রানী কর (ময়মনসিংহ-৬), সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদুল আনোয়ার (ঝালকাঠি-২), উপদেষ্টা শফিউল আলম ভূঁইয়া (চট্টগ্রাম-১), অ্যাডভোকেট মোবারক হোসেন (টাঙ্গাইল-৪), যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট মোখলেছুর রহমান (বগুড়া-৩), প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান (মাদারীপুর-২), মোস্তফা কামাল চৌধুরী (নওগাঁ-১) ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান রূপা (সুনামগঞ্জ-৩)।

এ বিষয়ে এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘নেত্রীর মুক্তির আন্দোলন এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি এক সঙ্গেই চালাতে হবে। আমরা তো শুধু আন্দোলনের জন্য জোটবদ্ধ হইনি। আমাদের লক্ষ্য নির্বাচনও। সুতরাং কালক্ষেপণ করলে চলবে না। নির্বাচন নিয়ে এখনই কথা বলতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সারাদেশে শতাধিক আসনে প্রার্থী দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে জোটের কাছে মাত্র ৩০টি আসন চেয়েছি। আশা করছি, সবগুলো আসনেই জোটের প্রার্থী হিসেবে আমরা বিজয়ী হতে পারব।

Leave a Reply