Saturday, April 27

বাংলাদেশে মডার্ণ হারবালের বাগানে উৎপাদন হচ্ছে ‘জাভা জিনসেং’

চীন থেকে আমদানি করা বীজ বপন করে বাংলাদেশে মডার্ণ হারবাল গ্রুপ গত ৩৫ বছর যাবত মাওনা, সাভার, ডেমরা ও শরীয়তপুরসহ ৫টি নিজস্ব প্রজেষ্টে অলৌকিক গুণসম্পন জাভা জিনসেং চাষ করে আসছে। ঐতিহ্যগত বিশেষ পদ্ধতি ও হাইড্রোপনিক সিস্টেমে জিনসেং চাষ করা যায়। বাংলাদেশে একমাত্র মডার্ণ হারবাল গ্রুপ জাভা জিনসেং চাষ ও উৎপাদন করে যা বিশে^ও অন্যান্য দেশে উৎপাদিত জিনসেং এর মতই কার্যকরী গুণসম্পন্ন।

আজ থেকে প্রায় ৩৮ বছর আগে জিনসেং নিয়ে প্রথম গবেষণা গুরু করেন বিশিষ্ট হারবাল গবেষক ও চিকিৎসক ডা. আলমগীর মতি। শুধু তাই নয়, তিনি নিরলস গবেষণা ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশে পরিচিতি ও বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া শুরু করেন। মানুষ যৌবনের পূজারী । সবাই সুস্থ, সবল ও দীর্ঘায়ু যৌবন নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। ডা. আলমগীর মতি গবেষণায় দেখেছেন মানব আকৃতির মূল জাভা জিনসেং আয়ু বৃদ্ধি, যৌবনশক্তি বৃদ্ধি, চির তারুণ্য ও সুস্থ সবল জীবন উপহার দেয়, তাই তো আজ বাংলাদেশে কোটি কোটি মানুষের কাছে জিনসেং সমাদৃত। প্রতিদিন বিশে^ প্রায় ১০০ কোটি মানুষ জিনসেং সেবন করে। চীনে প্রবাদ আছে ‘‘ জীবনে একবার হলেও মূল্যবান জিনিসের বিনিময়ে হলেও জিনসেং সেবন করুন”।

পরিচিতি ও ইতিহাস:
জিনসেং একটি বহুবর্ষজীবি ছায়াপ্রিয় বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। এর আয়ু ১৫০-২০০ বছর। এটি অত্যন্ত ধীর গতিতে বৃদ্ধি পায়। উচ্চতা ১-২ ফুট এবং মূল দেখতে মানব আকৃতির মত। কান্ডের মাথায় একগুচ্ছ পাতা ও লাল বর্ণের ফুল হয়। প্রতিটি পাতা ৫টি পত্রফলক যুক্ত। জিনসেং এর মাংসল ও মানব আকৃতির মূলটি উচ্চ ভেষজ গুণসম্পন্ন। সার্বজনীন রোগ নিরাময়কারী ক্ষমতা থাকার কারনে জিনসেংকে উদ্ভিদ জগতের রাজা বলা হয়। বাজারে বিভিন্ন রকম জিনসেং এর প্রচলন থাকলেও বিশেষত দুটি প্রজাতিই ঔষধ হিসেবে বিশ^ব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এদের একটি এশিয়া মহাদেশের বিখ্যাত প্যানাক্স জিনসেং যা আজ থেকে প্রায় ৫ হাজার বছর পূর্বে চীনের উত্তর অঞ্চলীয় মাষুরিয়া পাহাড়ে আবিষ্কৃত হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হল্ওে পরবর্তীতে বলকারক ও যৌন শক্তিবর্ধক হিসেবে এটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। প্যানাক্স গ্রীক শব্দ যার অর্থ সর্বরোগ অরোগ্যকারী এবং জিনসেং চীনা শব্দ যার অর্থ মানব মুল। অন্য প্রজাতিটি প্যানাক্স কুইনকুফলিয়াস যা উত্তর আমেরিকায় জন্মে। তবে ঔষধি গুণের দিক থেকে প্যানাক্স জিনসেং সর্বশ্রেষ্ঠ। এটিকে এশিয়ান জিনসেং নামে অভিহিত করা হয়।

জাভা জিনসেং এর উপকারিতা
১) এনার্জি বাড়ায়: এনার্জি বাড়াতে এবং অবসন্নতা কাটিয়ে উটতে জিনসেং ভূমিকা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। যারা মানসিক এবং শারীরিকভাবে ক্লান্ত বোধ করছেন তাদের জন্য এই ভেষজ উপাদানটি দারুণ কার্যকরী। পরীক্ষায় দেখা গেছে, জিনসেং ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করে। ক্লান্তি কমাতে এবং শারীরিক কর্মক্ষমতা বাড়াতে জিনসেং পরিপূরকগুলি পাওয়া গেছে, যদি এটি প্রমাণ করতে আরও অধ্যয়ন প্রয়োজন।

২) ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: টিউমার বৃদ্ধি রোধ করার ক্ষমতা একে ক্যান্সারের অন্যতম শক্তিশালী প্রতিরোধক হিসেবে গড়ে তুলেছে। জিনেসং টি সেল এবং এনকে সেলগুলির (প্রাকৃতিক ঘাতক কোষ) কার্যকারিতা বাড়িয়ে কোষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে। এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধেও লড়াই করে এবং ক্যান্সার কোষের মৃত্যু ঘটায়।

৩) ওজন কমায়: পরিপাক ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে কীভাবে জিনসেং ইঁদুরের দেহের ওজন কমাতে পারে। অন্যান্য পরীক্ষায় এর স্থ’লতা বিরোধী প্রভাবও প্রমাণিত হয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি ক্ষুধা হ্রাস করে যা এর অন্যতম একটি পার্শ¦প্রতিক্রিয়া।

৪) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে: বেশকিছু পরীক্ষায় দেখা গেছে জাভা জিনসেং টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদেও রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। পরীক্ষায় আরো দেখা গেছে, জিনসেং ইনসুলিন সংবেদনশীলতার উন্নতি করে এবং যাদেও ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এটি সুস্বাস্থ্যকর।

৫) যৌনক্ষমতা বাড়ায়: জিনসেংকে অনেকে ভেষজ ভায়াগ্রা বলে থাকে, এর পিছনে অবশ্য কারণও রয়েছে। গবেষণায় প্রমাণিত এটি ইরেকটাইল (বা যৌন) কর্মহীনতার চিকিৎসার ক্ষেত্রে এটির কার্যকারিতা গুরুত্বপূর্ণ।

৬) মস্তিষ্কেও কর্মক্ষমতা বাড়ায়: জিনেসং মস্তিষ্কেও কর্মক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দক্ষিণ কোরিয়ার একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যালজাইমার সমস্যা সমাধান করতে পারে।

৭) স্ট্রেস কমায়: পরীক্ষায় দেখা গেছে, জিনসেং মুড ঠিক রাখতে এবং মানসিক চাপ কমাতে কার্যকরী।

৮) প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: পরীক্ষায় প্রমাণিত, জিনেসং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সর্দি-কাশির সমস্যা কম করে। আরও একটি কোরিয়ার গবেষণায় দেখা গেছে, জিনসেং ম্যাক্রোফেজস, প্রাকৃতিক ঘাতক কোষ, টি সেল, বি সেল, ডেন্ড্রিটিক সেল সহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিরোধক কোষকে নিয়ন্ত্রণ করে। জিনসেং এর এই উপাদান জ¦ালা যন্ত্রণা কমায় এবং জীবাণু সংক্রান্ত সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

৯) অ্যান্টি এজিং: গবেষণা অনুযায়ী জিনসেং অ্যান্টি এজিং উপাদান হিসেবে কাজ করে। ভেষজ এই ঔষধি কোলাজেন বাড়িয়ে তুলতে পাওে, যা ত্বককে বলিরেখা মুক্ত করে এবং উজ্জ্বলতা বাড়ায়।

১০) জ্বালা-যন্ত্রণা কমায়: জিনসেং এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে এই প্রভাব জিনসেসোসাইডের ভূমিকাকে প্রভাবিত করে যাদেও আর্থারাইটিস বা গাটের ব্যথা রয়েছে তাদের জন্য এটি উপকারী।

১১) ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত করে: পরীক্ষায় দেখো গেছে জিনসেং ফুসফুসে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ঈযৎড়হরপ ঙনংঃৎঁপঃরাব চঁষসড়হধৎু উরংবধংব (ঈঙচউ) হচ্ছে ফুসফুসের অন্যতম সাধারণ একটি সমস্যা। এক্ষেত্রে রোগীদের শ^াস নিতে কষ্ট হয়, বুকে কফ জমে, কারও ক্ষেত্রে ফুসফুসের ক্ষয় ঘটে। জিনসেং গ্রহণে সার্বিকভাবে ঈঙচউ এর অবস্থার উন্নতি হয় বলে গবেষণায় প্রমানিথ হয়েছে।

১২) ত্বকের সুস্বাস্থ্য: জিনেসেং এর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান রোজেসিয়া সহ ত্বকের নানা সমস্যা সমাধানে দারুণ কাজ করে। ত্বকে পুষ্টি জোগায় এবং উজ্জ্বল করে তোলে।

১৩) চুলের যত্ন: জিনসেং চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। জিনসেং এক্সট্রাক্ট চুলের ফলিকলগুলিকে শক্তিশালী কওে এবং চুল পড়া রোধ করে। স্কাল্বের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং চুলে পুষ্টি জোগায়।

জাভা জিনসেং এ পুষ্টিগত মান
পুষ্টিগুণ পরিমাণ RDI
ক্যালোরি ২৫
কোলেস্টেরল ০.০g ০%
সোডিয়াম ৫ mg ০%
কার্বোহাইড্রেট ৬.০g ২%
ভিটামিন এ ০.০g ৪%
ভিটামিন সি ৬%

Leave a Reply