নোভাক জকোভিচ, ২০১৭
ইতিহাসের হাতছানি নিয়ে এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেন আসরে খেলতে নামেন সার্বিয়ার নোভাক জকোভিচ। এবার সাফল্য পেলে তিনি ছাড়িয়ে যেতেন অজি লিজেন্ড রয় এমারসনকে। উভয়ের ঝুলিতে রয়েছে রেকর্ড ৬টি অস্ট্রেলিয়ান ওপেন শিরোপা। কিন্তু এবারের দ্বিতীয় রাউন্ডে র্যাঙ্কিংয়ের ১১৭তম খেলোয়াড় ডেনিস ইস্টোমিনের কাছে হার নিয়ে স্বপ্ন ভাঙে গত দুইবারের চ্যাম্পিয়ন জকোভিচের। উজবেকিস্তানের ইস্টোমিন এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে পা রাখেন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিশেষ বিবেচনার ‘ওয়াইল্ড কার্ড’ সুযোগ নিয়ে। গ্র্যান্ড স্লাম আসরের দ্বিতীয় রাউন্ডে জকোভিচের হারের স্মৃতি ছিল না গত ৯ বছরে। সর্বশেষ ২০০৮ উম্বলডনের দ্বিতীয় রাউন্ডে রুশ তারকা মারাত শাফিনের কাছে হার দেখেছিলেন ১২ বারের গ্রান্ড স্লাম চ্যাম্পিয়ন জকোভিচ। আর এবার জকোভিচকে মোকাবিলার আগে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ১০ খেলোয়াড়ের বিপক্ষে ইস্টোমিনের হারজিতের সর্বশেষ পরিসংখ্যানটা ছিল ১-৩২। চলতি আসরে অঘটনের শিকার হলেন বিশ্বের একনম্বর খেলোয়াড় অ্যান্ডি মারেও। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ইতিহাসে অন্যতম সেরা অঘটন মানা হচ্ছে দুটোকেই। তবে আসরের ইতিহাসে সেরা অঘটন কোনটি?
জেনিফার ক্যাপ্রিয়াতি, ২০০৩
মহিলা এককে টানা দুইবারের চ্যাম্পিয়ন জেনিফার ক্যাপ্রিয়াতি ২০০৩-এর আসর থেকে কান্নাভেজা চোখে বিদায় নেন প্রথম রাউন্ড থেকে। রড লেভার অ্যারেনায় র্যাঙ্কিংয়ের ৯০তম খেলোয়াড় জার্মানির মারলিন ভাইনগার্টনার জয় কুড়ান ২-৬, ৭-৬ ও ৬-৪ গেমে।
লেইটন হিউইট, ২০০৩
উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন, র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর খেলোয়াড় ও আসরের শীর্ষ বাছাইয়ের মর্যাদা নিয়ে ২০০৩-এ অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে খেলতে নামেন লেইটন হিউইট। আর আসরের চতুর্থ রাউন্ডে মরক্কোর ইউনেস এল আয়নাওই-এর বিপক্ষে পরিষ্কার ফেভারিট ছিলেন স্বদেশি তারকা হিউইটই। তবে স্বাগতিক দর্শকদের চমকে দিয়ে ৬-৭, ৭-৬, ৭-৬ ও ৬-৪ গেমে জয় কুড়ান অবাছাই খেলোয়াড় ইউনেস।
মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা, ১৯৮৪
টানা ৭৪ ম্যাচে জয় নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেমিফাইনালে হেলেনা সুকোভাকে মোকাবিলা করছিলেন মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা। পেশাদার টেনিসে টানা জয়ের এ রেকর্ড এখনও অক্ষুণ্ন। আগের টানা ৬ গ্র্যান্ড স্লাম আসরের শিরোপাও কুড়ান তৎকালীন চেকশ্লোভাকিয়ার এই তারকা। সেমিতে স্বদেশি তারকা সুকোভার বিপক্ষে দাপুটে নৈপুণ্যেই জিতে নেন প্রথম সেট। তবে শেষ পর্যন্ত ম্যাচে হার দেখেন ৬-১, ৩-৬ ও ৫-৭ গেমে।
রজার ফেদেরার, ২০০৫
টানা ২৬ ম্যাচে জয় নিয়ে সেবার অস্ট্রেলিযান ওপেনে পা রাখেন বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রজার ফেদেরার। ওই ২৬ জয়ে কোনো ম্যাচে সেট হারাননি একবারও। তবে সেমিফাইনালে রুশ ‘বিগ সার্ভার‘ তারকা মারাট শাফিন ম্যারাথন লড়াই শেষে ফেদেরারের বিপক্ষে জয় কুড়ান ৫-৭, ৬-৪, ৫-৭, ৭-৬ ও ৯-৭ গেমে।
স্টেফি গ্রাফ, ১৯৯৭
আমান্ডা কোয়েতজারের বিপক্ষে স্টেফি গ্রাফের হতাশার বছর ছিল এটি। দক্ষিণ আফ্রিকার তারকা কোয়েতজারের কাছে ওই বছর তিনবার হার দেখেন উড়ন্ত ফর্মের জার্মান তারকা স্টেফি গ্রাফ। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের চতুর্থ রাউন্ডে শীর্ষ বাছাই গ্রাফের বিপক্ষে কোয়েতজার জয় কুড়ান সরাসরি ৬-২, ৭-৫ গেমে। ওই বছর কোয়েতজারের কাছে স্টেফি গ্রাফ হার দেখেন বার্লিন ওপেন ও ফ্রেঞ্চ ওপেনেও।
রাফায়েল নাদাল, ২০১৬
তিক্ত প্রতিশোধের গল্প। সাত বছর আগে সেমিফাইনালে স্বদেশি তারকা ফারনানদো ভারদাসকোর বিপক্ষে পাঁচ সেটের লড়াই শেষে জয় পান রাফায়েল নাদাল। ২০০৯ আসরে শেষ পর্যন্ত শিরোপাও ওঠে স্প্যানিয়ার্ড তারকা নাদালের হাতে। আর ২০১৬ অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নেন নাদাল। পাঁচ সেটের লড়াই শেষে ভারদাসকো জয় কুড়ান ৭-৬, ৪-৬, ৩-৬, ৭-৬ ও ৬-২ গেমে।
বরিস বেকার, ১৯৯৭
পুরুষ এককের শিরোপাধারী জার্মান তারকা বরিস বেকার প্রথম রাউন্ডেই হার দেখেন আসরের অবাছাই খেলোয়াড় কার্লোস ময়ার কাছে। পাঁচ সেটের লড়াই শেষে স্প্যানিয়ার্ড তারকা ময়া জয় কুড়ান ৫-৭, ৭-৬, ২-৬, ৬-১ ও ৬-৪ গেমে। সেবার ফাইনালেও পৌঁছেন ময়া। ফাইনালে যুক্তরাষ্ট্রের পিট সাম্প্রাসের কাছে হার দেখলেও পরে কার্লোস ময়া পৌঁছেন র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে।
ভেনাস উইলিয়ামস, ২০০৪
মেলবোর্নে লড়াইয়ে নামার আগে ক্যারিয়ারে ভেনাস উইলিয়ামসের বিপক্ষে তিন ম্যাচে লিসা রেমন্ড সাকুল্যে জয় দেখেন ১৩ গেমে। এ তিন ম্যাচে একবারও সেট জয়ের স্মৃতি ছিল না যুক্তরাষ্ট্রের লিসার। তবে সেবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের তৃতীয় রাউন্ডে ভেনাসের বিপক্ষে সরাসরি ৬-৪ ও ৭-৬ গেমে জয় দেখেন স্বদেশি তারকা লিসা রেমন্ড। আর ম্যাচ শেষে ভেনাস বলেন, ‘আই অ্যাম প্রিটি মাচ ইন শক’।
পিট সাম্প্রাস, ১৯৯৬
উড়ন্ত ফর্ম নিয়ে ‘পিস্তল’ পিট খেতাব পান তিনি। টানা দুই গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা নিয়ে সেবার মেলবোর্নে খেলতে নামেন পিট সাম্প্রাস। তবে মেলবোর্নের ‘লোকাল বয়’ ১৯ বছর বয়সী মার্ক ফিলিপোসিসের কাছে হার দেখেন তৃতীয় রাউন্ডে। ওই সময়ের সেরা ‘সার্ভার’ সাম্প্রাসের বিপক্ষে সরাসরি সেটে পাওয়া জয়ে ফিলিপোসিস র্যাকেট হাতে হাঁকান ৩০টি এইস।
রজার ফেদেরার, ২০১৫
আগের ১৪ বছরে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে তৃতীয় রাউন্ডের আগে হার দেখেননি ফেদেরার। তবে সেবার দ্বিতীয় রাউন্ডে র্যাঙ্কিংয়ের ৪৬তম খেলোয়াড় ইতালির আন্দ্রিয়াস সিপ্পির কাছে হার দেখেন চার সেটের লড়াই শেষে। ফেদেরারের বিপক্ষে ওটা ছিল সিপ্পির ক্যারিয়ারে টানা ১০ হারের পর প্রথম জয়।
সিমোনা হালেপ, ২০১৬
আসরের প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিলেন মহিলা এককের দ্বিতীয় শীর্ষ বাছাই খেলোয়াড় সিমোনা হালেপ। রুমানিয়ান তারকা হালেপের বিপক্ষে সরাসরি সেটে জয় দেখেন চীনের ঝ্যাং শুয়াই। গ্র্যান্ড স্লাম ক্যারিয়ারে আগের টানা ১৪ ম্যাচে হার দেখেন এ চাইনিজ তারকা।
নিউকম্ব ও রসওয়েল, ১৯৭৬
র্যাঙ্কিংয়ের ২১২ নম্বর খেলোয়াড় অস্ট্রেলিয়ার মার্ক এডমন্ডসনের কাছে আসরটি ছিল রূপকথার মতো। সেমিফাইনালে চার সেটের লড়াই শেষে এডমন্ডসন জয় কুড়ান স্বদেশি তারকা ও আসরের শীর্ষ বাছাই খেলোয়াড় কেন রসওয়েলের বিপক্ষে। আর ফাইনালে অপর স্বদেশি তারকা ও আসরের দ্বিতীয় বাছাই খেলোয়াড় জন নিউকম্বের বিপক্ষে জয় শেষে শিরোপাও ওঠে এডমন্ডসনের হাতে।