Tuesday, April 23

যে দারুণ সুখবর নিয়ে বাংলাদেশে আসছেন সৌদি বাদশাহ সালমান !

সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সউদ রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে আসছেন।নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বাংলাদেশে নিযুক্ত মধ্যপ্রাচ্যের একজন কূটনীতিক গতকাল বুধবার সৌদি বাদশাহর বাংলাদেশ সফরের কথা জানিয়ে বলেন,
তিনি চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে অথবা আগামী মার্চ মাসের প্রথমভাগে বাংলাদেশ সফর করতে পারেন।

তার এ সফরে দু’দেশের মধ্যে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ এবং অন্যান্য খাতে সহযোগিতার দ্বার উন্মুক্ত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আর সৌদি বাদশাহর বাংলাদেশ সফরের পর সত্যিকারভাবেই বাংলাদেশ হয়ে উঠবে সৌদি বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের জন্য সেকেন্ড হোম।

সৌদি বাদশাহর এই সফর বাংলাদেশের জন্য দারুণ েএক সুখবর।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী গতকাল বলেন, সকলেই চান সৌদি আরবের বাদশা বাংলাদেশ আসুন।

সৌদি আরবের বাদশা বাংলাদেশ সফরে আসলে সঠিক সময়ে জানানো হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও জানান, সৌদি আরবের বাদশাহ’র বাংলাদেশ সফর আমাদের দেশের জন্য একটি বড় সংবাদ।

এ সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকসহ বিভিন্নভাবে লাভবান হবে। এখনি এ সফরের দিনক্ষণ বলা যাচ্ছে না। তবে কাজ চলছে। সুবিধাজনক সময়েই তিনি বাংলাদেশে আসবেন।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরবর্তীত পরিস্থিতিতে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সৌদি আরবের যে টানাপড়েন চলছে, সেই প্রেক্ষাপটে দেশটি বিনিয়োগ স্থানান্তরের বিষয়ে ভাবছে।

এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম প্রধান রাষ্ট্র বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে দেশটি।

এ ছাড়া সৌদি আরবের নেতৃত্বে নিরাপত্তা সংক্রান্ত জোটে বাংলাদেশের সমর্থনের কারণেও দেশটির বিনিয়োগে আস্থা যোগাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী

শেখ হাসিনা গত বছরের জুন মাসে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সউদের আমন্ত্রণে পাঁচ দিনের সরকারি সফরে সৌদি আরবের জেদ্দা যান।

সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সউদ সিংহাসনে আরোহণের পর এটাই ছিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম সৌদি আরব সফর।

ওই সফরকালেই সৌদি বাদশাহকে বাংলাদেশ সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের এপ্রিলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণ করার পর তৎকালীন সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজের আমন্ত্রণে সৌদি আরব সফর করেন।

প্রধানমন্ত্রী ২০১৩ সালের নভেম্বরেও একবার ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব যান।

স্বাধীনতার পর থেকেই সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সাহায্যকারী-সাহায্য গ্রহীতার।

তবে সেই সম্পর্ক পাল্টে যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত বছরের জুনে রাজকীয় আমন্ত্রণে সৌদি সফরের পর।

তার সফরের পর বাংলাদেশকে এখন আর সৌদি কর্তা ও ব্যবসায়ীরা সাহায্যপ্রার্থী দেশ হিসেবে দেখে না বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগ হাব।

দেশটির কাছে বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের লোভনীয় ও নিরাপদ গন্তব্য।

প্রধানমন্ত্রীর ২০১৬ সালের সৌদি সফরকালে দেশটিতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার স¤প্রসারণ, দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য, বিভিন্ন প্রকল্পে সৌদি সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং হজ ব্যবস্থাপনার মতো বিষয়গুলো সৌদি বাদশাহের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় প্রাধান্য পায়।

অন্য দিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাতকালে সৌদি বাদশাও বারবার পলিটিক্যাল, স্ট্যাট্রিক ও বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় একসঙ্গে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন ইসলামিক জোটের বিষয়টিও উঠে আসে বৈঠকে। জোটে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে বাদশা বলেন, এতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ সৌদি আরব খুবই গুরুত্ব দেয়।

এর ফলে দুই দেশের মধ্যে একটা সুন্দর সম্পর্কও তৈরি হবে।

সেই সফরের ফলে এবং সরকারের ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতার ফলে বাংলাদেশের বিনিয়োগ বাজারে নতুন প্রতিযোগী হিসেবে চীন, ইউরোপীয় দেশসমূহ ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যোগ দিয়েছে সৌদি আরব।

দেশটির শীর্ষ ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সরকারি কর্তাব্যক্তিরা ঘন ঘন আসা-যাওয়া করছেন বিনিয়োগের প্রক্রিয়া করতে।

এক প্রকার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে কত আগে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে তা নিয়ে।

বন্ধুপ্রতিম দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমানে যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পাঁচ থেকে সাত বিলিয়ন ডলারের সৌদি বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আর সৌদি বাদশাহর আসন্ন বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়েই এসব বিষয় আরো পূর্ণতা পাবে।
সৌদি আরবের দ্বিতীয় বৃহত্তম কোম্পানি আল রাজি থেকে শুরু করে শীর্ষ ব্যবসায়ী গ্রুপ আল জামিল, আল বাওয়ানি, আল ফানারসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের এখন বিনিয়োগ গন্তব্য বাংলাদেশ।

কোম্পানিগুলোর কর্তাব্যক্তিরা নিয়মিত ঢাকা সফর করছেন, স্বাক্ষর করছেন একের পর এক সমঝোতা স্মারক।

সৌদি বিনিয়োগ আগ্রহে উৎফুল্ল বাংলাদেশ সরকারও। ইতোমধ্যে দেশটির বিনিয়োগকারীদের জন্য রিয়াদস্থ দূতাবাসের মাধ্যমে দু’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ।

এর একটি চট্টগ্রামের মিরেরসরাইয়ে; অন্যটি গাজীপুরে। কোথায় অর্থনৈতিক অঞ্চল নেবে তা দেশটির কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করলেই স্বাক্ষর হবে সমঝোতা স্মারক। -ইনকিলাব।

Leave a Reply