Friday, April 19

১১ বছর বয়সী ধর্ষিতা শিশু সন্তান কোলে নিয়ে আদালতে ঘুরছে ন্যায় বিচারের আশায়

তিন মাস হলো পৃথিবীতে এসেছে শিশুটি। পিতৃপরিচয় নেই। তবে তাকে কোলে করে ঘুরছে যে মা, তার একটা পরিচয় আছে। আছে শিশুটির জন্মের ইতিহাসও। ধর্ষণের ফসল হিসেবে জন্ম এই শিশুর। আর ধর্ষণের শিকার তার মায়ের বয়স মাত্র ১১ বছর! তিন মাস বয়সী সন্তান মো. ওমর ফারুককে কোলে নিয়ে ১১ বছর বয়সী আরেক শিশু আদালত পাড়ায় ঘুরছে ন্যায় বিচারের আশায়।

সোমবার ঢাকার কোর্ট রিপোর্টার এসোসিয়েশনে এসে সকলের কাছে ন্যায় বিচারের দাবি জানায় এই শিশুটি। কোলে তখনও ছিল তিন মাসের ওমর ফারুক।

‘স’ আদ্যক্ষরের নাম তার। নিরাপত্তা এবং আইনি জটিলতার কারণে নাম দেওয়া গেল না। নিষ্পাপ চেহারার মেয়েটির মধ্যে এখনো পুরোদমেই আছে শিশুসুলভ চাঞ্চল্য। কিন্তু তারমধ্যেও স্পষ্ট দেখা যায় ভীতি আর অসহায়ত্ব।

কথা বলে জানা গেল, সে যখন মায়ের গর্ভে, তখন তার বাবা মারা যান। মা মানুষের বাড়িতে কাজ করে অনেক কষ্টে ভাই-বোনদের সংসার চালান।

ধর্ষণের শিকার শিশু ও মামলার বাদী সোমবার পরিবর্তন ডটকমকে জানায়,‘ভয় দেখিয়ে মান্নান নামের এক ব্যক্তি ধর্ষণ করে শিশুটিকে। ধর্ষণের পরে এ কথা কাউকে জানাতে নিষেধ করে মান্নান। জানালে পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। প্রাণভয়ে কাউকে কিছু জানায়নি মেয়েটি। পরে গর্ভবতী হওয়ার পর আসামিকে জানালে আসামি তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন।

শিশুটির ভাই মামুন(২৩) বলেন, বিষটি জানার পরে আমরা মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত নিই। আমার বোন ১১ বছরের শিশু। এ শিশুটিকে আসামি মান্নান (৪০) ধর্ষণ করেছে। আমার বোন ভয়ে আমাদের কাউকে কিছু বলে নাই। গত ৩০ এপ্রিল আমার বোনের গর্ভে ধর্ষণের শিশুটি জন্ম নেয়। আমরা খুব গরিব ও অসহায়। মা মানুষের বাড়িতে কাজ করে আমাদের জন্য ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করে। এখন এ শিশুটিকে রোজ দুধ খাওয়ানো বা লালন-পালন করার কোনো ক্ষমতা আমাদের নাই।

মামুন আরও বলেন, ‘আদালতে মামলা করার পর আইনজীবীর খরচসহ সব খরচ দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আসামি খুব প্রভাবশালী। এখনও আমাদের অনবরত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।

শিশুটির আইনজীবী সামিউল কবির আলমগীর বলেন, ভিকটিম শিশুটি বাদী হয়ে গত ২৩ মার্চ ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ৪-এ ধর্ষণের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালত বিচারক শিশুটির জবানবন্দি শুনে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে প্রেরণ করেন। পরে শিশুটি ঢাকার মহানগর হাকিম আমিরুল হায়দার চৌধুরীর আদালতে সাক্ষী দিলে বিচারক নারী ও শিশু আদালতে একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। তদন্তে প্রতিবেদনে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে বলা হয়।

আইনজীবী আরও বলেন, আজ সোমবার এ মামলা আমলে নেওয়ার দিন ধার্য ছিল। নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল -৪ এর বিচারক রেজানুল হক তদন্ত প্রতিবেদনটি গ্রহণ করে আসামির বিরুদ্ধে মামলাটি আমলে নেয় এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, বাদীনি জাফ্রাখালী সরকারী বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করা অবস্থায় বাসায় যাওয়ার পথে আসামি আ. মান্নান বাদীনিকে প্রায়ই কুপ্রস্তাব দিতেন। বাদীনির মা ওই স্কুলের বাচ্চাদের খিচুড়ি রান্না করতেন। সে সুবাদে তার মাকে সারাদিন ওই স্কুলে থাকতো হতো। বাদীনিকে বাসায় একা থাকতে হতো।

আরোও জানা যায়, আসামির কৃষি জমি শিশুটির বাড়ির পাশে থাকায় আসামি জমিতে কাজ করার সময় পানি খাওয়ার কারণ দেখিয়ে বাসায় ঢুকে শিশুটির সাথে ‘অনৈতিক আচরণ’ করেন। শিশুটি মান্নানের ভয়ে গ্রামের বাড়ি থেকে তার খালার বাসা ঢাকার বাড্ডাতে চলে আসে। সেখানে তার খালা একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। চাকরির সুবাদে সারাদিন বাইরে থাকতেন তিনি। মান্নান এ বিষয়ে জানার পর ঢাকায় শিশুটির খালার বাসায় এসে গত বছরের ২৮ জুন শিশুটিকে ধর্ষণ করে এবং যাওয়ার সময় হুমকি দিয়ে যান। পরে মান্নান একই কায়দায় মেয়েটিকে গত বছরের ৮ জুলাই, ১৮ জুলাই ও ২৮ জুলাই ধর্ষণ করেন। এ বিষয়ে শিশিুটি প্রাণভয়ে কাউকে কিছু জানায়নি। কিন্তু কিছুদিন পর ধর্ষণের ফলে গর্ভবতী হয়ে পড়লে মেডিকেল পরীক্ষা করাতে বাধ্য হয়।

Leave a Reply