বৃষ্টি হলেই রাঙামাটিতে জনমনে তৈরি হয় পাহাড়ধসের শঙ্কা।২০১৭ সালের ১৩ জুন রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড়ধসের দুর্যোগে ৫ সেনাসদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। পরে ২০১৮ সালের জুনে জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় পাহাড়ধসে দুই শিশুসহ ১১ জন এবং ২০১৯ সালের জুনে জেলার কাপ্তাইয়ে তিনজনের প্রাণহানি ঘটেছিল।
প্রতি বর্ষায় পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে পড়েন রাঙামাটির বহু মানুষ। শহরসহ আনাচে-কানাচে এখনো প্রায় পাঁচ হাজারের অধিক পরিবারের মানুষ পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করছেন। শুধু রাঙামাটি শহরে ৩০০ পরিবারের অধিক মানুষ ঝুঁকিতে বসবাস করছেন। জেলা প্রশাসন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে চলমান টানা বর্ষণে বহু মানুষ পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে থাকলেও নিজেদের বসত ছেড়ে নিরাপদে যাচ্ছেন না তারা। অথচ যে কোনো মুহূর্তে দুর্যোগের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে শহরের হাসপাতাল এলাকায় একটি দেয়ালধসে কয়েকটি বসতবাড়ির ওপর গিয়ে পড়েছে। যদিও বড় ধরনের জানমালের ক্ষতি হয়নি। এ পরিস্থিতিতে পাহাড়ধসের শঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ লোকজন। ঝুঁকিপূর্ণ লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। বারবার সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে তাদের। বৃষ্টি হলেই পূর্ব সতর্কবার্তা জারি করে মাইকিং করছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসন জানায়, রাঙামাটিতে এখনো যারা পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করছে, তাদের নিরাপদে সরে যেতে বলা হচ্ছে। পাহাড়ধসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু এর পরও যদি নির্দেশ অমান্য করে কেউ ঝুঁকিতে বসবাস করে তাদের নিরাপদে যেতে বাধ্য করা হবে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের তথ্যমতে, বর্তমানে শহরসহ আনাচে-কানাচে পাঁচ হাজারের অধিক পরিবারের মানুষ বসবাস করছে পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে। এসব এলাকায় প্রবল বর্ষণে যে কোনো মুহূর্তে ২০১৭ সালের ১৩ জুনের ভয়াল পাহাড়ধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা রয়েছে। শহরের শিমুলতলী, ভেদভেদি মুসলিমপাড়া, টেলিভিশন সেন্টার এলাকা, রেডিও স্টেশন, যুব উন্নয়ন এলাকা, রাঙাপানি, তবলছড়ি ও মহিলা কলেজসংলগ্ন এলাকাসহ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে নির্দেশনা দিয়ে আসছে জেলা প্রশাসন। এর পরও নিরাপদে সরছে না অনেক ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ। সদরের বাইরে জেলার কাপ্তাই, কাউখালী, বাঘাইছড়ি ও নানিয়ারচর উপজেলার বিভিন্ন এলাকাতেও ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে বহু পরিবারের মানুষ।
দেখা গেছে, প্রতিবছর বর্ষণে যেসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পাহাড়ধসের দুর্যোগ ঘটে, সেসব এলাকায় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে লোকজন বসবাস করে আসছে। আবার অনেক জায়গায় ধসে যাওয়া পাহাড়ি ভূমি বিক্রিও হচ্ছে। এসব জায়গা কিনে মেরামত করে তৈরি করা হচ্ছে স্থাপনা। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে উঠছে জনবসতি।
জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমরা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে বসবাসের নিষিদ্ধ করে দিয়েছি। তবু যে কেউ যদি ঝুঁকিপূর্ণ বসতঘর ছেড়ে সরে না যায়, তাদের নিরাপদে সরে যেতে বাধ্য করা হবে। আমরা পাহাড়ধসে আর কোনো প্রাণহানি দেখতে চাই না। প্রবল বর্ষণে যে কোনো সময় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটতে পারে। সে জন্য ঝুঁকিতে থাকা লোকজনের নিরাপত্তায় শহরে ২০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী লোকজনকে আগভাগে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলে দেওয়া হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী লোকজনকে সচেতন হতে হবে। সচেতন হলে জানমাল রক্ষা সম্ভব হবে।