Friday, April 19

রোজ স্নান করে ঘরে ঢুকতেন! মেয়েদের থেকে লুকিয়েছিলেন নিজের আসল পরিচয়ও

বাড়ি ফেরার আগে রাস্তার কোনও শৌচালয় থেকেই স্নান করে নিতেন ইদ্রিশ। কিন্তু একদিন মেয়েদের কাছে ধরা পড়ে যান তিনি।শৈশবটা স্বপ্নের মতো কেটে যায়। সহজেই হাতের মুঠোয় চলে আসে নতুন পোশাক, খাবার, খেলনা আরও কত কী। পড়াশোনাতে যাতে একটুও খামতি না থাকে, তার জন্য সমস্ত রকমের চেষ্টা করে যান মা-বাবা। পরিবারে কোনও রকমের সমস্যা এলেও সেগুলির আঁচও গায়ে লাগে না। এ সবই সম্ভব হয় শুধুমাত্র মা-বাবা ও পরিবারের জন্যই। এরকমই এক বাবা এখন সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল।
বাংলাদেশের এক সাংবাদিক ফেসবুকে এই ব্যক্তির সম্পর্কে লিখতেই, তা ভাইরাল হয়ে যায়। পেশায় সাফাইকর্মী ওই ব্যক্তির নাম হল ইদ্রিশ। ইদ্রিশের যা রোজগার তাতে রোজ দু’বেলার খাবার জোটানোর জন্যই তাঁকে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়। কিন্তু তাতে কী! মেয়েদের পড়াশোনার সঙ্গে একটুও আপস করেননি তিনি।
অথচ মেয়েরা জানতই না, কীভাবে নির্বিঘ্নে পড়াশোনা করে যাচ্ছে তারা। কোথা থেকে তারা সময়মতো খাতা, বই, কলম হাতের কাছে পেয়ে যাচ্ছে, সে সবের কোনও ধারণাই ছিল না তাদের। ইদ্রিশ নিজেই মেয়েদের এই অভাবের ধারে কাছে আসতে দেননি। নিজের আসল পেশার কথাও জানাননি মেয়েদের। মেয়েরা জানতেই পারেনি যে, বাবা পেশায় সাফাইকর্মী। মেয়েদের কাছে ইদ্রিশ ছিলেন একজন কারখানার কর্মী। যদিও ইদ্রিশই মেয়েদের কাছে নিজের এমন পরিচয় দিয়েছিলে। উদ্দেশ্য, যাতে মেয়েরা পরিবারের আর্থিক সমস্যার কথা জেনে চিন্তিত হয়ে না পড়ে।
ইদ্রিশের কথায়, ‘‘আমি কী করি, তা কোনও দিনও মেয়েদের বলিনি। আমি চাইনি, আমার জন্য ওরা কখনও লজ্জিত হোক। আমি চাই না আমাকে যেরকম ছোট নজরে দেখা হয়, মেয়েদের সঙ্গেও তেমন ব্যবহার হোক।’’
বাড়ি ফেরার আগে রাস্তার কোনও শৌচালয় থেকেই স্নান করে নিতেন ইদ্রিশ। কিন্তু একদিন মেয়েদের কাছে ধরা পড়ে যান তিনি। মেয়েদের স্কুলে সে দিন অ্যাডমিশন ফি জমা দেওয়ার শেষ দিন। অথচ ইদ্রিশ টাকা জোগাড় করতে পারেননি। অন্যদিকে স্কুলে অ্যাডমিশন না দিলে মেয়েদের পরীক্ষাও দেওয়া হবে না আর কলেজেও পড়া হবে না। এই দিনই মেয়েদের কাছে তাঁর আসল পরিচয় বেরিয়ে পড়ে। ইদ্রিশের পরিচয় সামনে আসলেও, নিজের লক্ষ্য থেকে সরে যাননি তিনি। তাঁর সাফাইকর্মী বন্ধুরাই এই দুঃসময়ের দিনে পাশে এসে দাঁড়ান। প্রত্যেকেই ইদ্রিশকে টাকা দিয়ে সাহায্য করেন।
রোজ দাঁতে দাঁত চেপে ইদ্রিশের এই পরিশ্রম বিফলে যায়নি। ইদ্রিশের বড় মেয়ে এখন কলেজের গণ্ডি পেরনোর জন্য প্রস্তুত। দিদির মতো বোনেরাও পড়াশোনায় বেশ এগিয়ে। এখন তাঁদের একটাই উদ্দেশ্য। এমন কাজ করতে হবে, যাতে বাবাকে আর কষ্ট না করতে হয়। আর তাই এখন ইদ্রিশের গলার স্বরে অনেক স্বস্তি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি এখন আর নিজেকে দরিদ্র বলে মনে করি না। এরকম সন্তান যার রয়েছে, সে কীভাবে দরিদ্র হতে পারে।’’

Leave a Reply