Friday, April 26

প্রচারণায় ককটেল হামলা নির্বাচনি মডেলের প্রাথমিক পদক্ষেপ: রিজভী

রাজশাহীতে ধানের শিষের প্রার্থীর নির্বাচনি প্রচারণায় ককটেল হামলা নির্বাচনি নতুন মডেলের আরেকটি প্রাথমিক পদক্ষেপ বলে অভিযোগ বিএনপির।

দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সেখানে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসী তাণ্ডব চরম আকার ধারণ করেছে। আজ নগরীর সাগরপাড়ায় জেলা ছাত্রদলের গণসংযোগ কর্মসূচি বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু উদ্বোধন কালে আওয়ামী দুষ্কৃতকারীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।’

১৭ জুলাই, মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব অভিযোগ করেন।

রুহুল কবির বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছিলেন যে, তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন খুলনা ও গাজীপুরের মতো হবে। এখন তাঁর (ওবায়দুল কাদের) বক্তব্যের সেই আলামত ফুটে উঠতে শুরু করেছে।

রাজশাহীতে ধানের শিষের প্রার্থীর নির্বাচনি প্রচারণায় ককটেল হামলা নির্বাচনি নতুন মডেলের আরেকটি প্রাথমিক পদক্ষেপ। আতঙ্কিত পরিবেশ তৈরি করে ভোটারশূন্য নির্বাচন করতেই এই হামলা। ভোটাররা জানেন না আওয়ামী লীগ সামনের দিনগুলোতে আরও কী পরিস্থিতি তৈরি করে।’

এদিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া নতুন কোনো রোগে আক্রান্ত হননি, তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর সরকারি ব্যবস্থাপনার বাইরে বেগম জিয়াকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়।’

এ প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘স্বররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে আমাদের (বিএনপি) কথাই সত্যি হলো। তারা (সরকার) বিএনপি চেয়ারপারসনকে নিয়ে দুরভিসন্ধিমূলক এক গভীর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। লোকমুখে যে কথা প্রচারিত, তা-ই সত্য হচ্ছে, রাজনীতি থেকে খালেদা জিয়াকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়ার জন্যই তার জীবনকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে।

খালেদা জিয়ার অসুস্থতাকে চরম অবনতির দিকে ঠেলে দিতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার সরকার এক নোংরা খেলায় মেতে উঠেছে। তাহলে কোন ব্যবস্থাপনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারাবন্দী থাকা অবস্থায় স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন? কোন ব্যবস্থাপনায় অন্যান্য আওয়ামী সিনিয়র নেতাদের চিকিৎসা হয়েছিল রাজধানীর ল্যাবএইড বা বারডেমে?

খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা না দিয়ে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দেওয়াই যে সরকারের উদ্দেশ্য, তা আবারও সুস্পষ্ট হলো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। জবাবদিহিতাহীন, ভোটারবিহীন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই কেবল এ ধরনের উদ্ভট, ভারসাম্যহীন, অসত্য কথা বলে নির্যাতিত-নিপীড়িত জনগণের সাথে এমন নিষ্ঠুর রসিকতা করতে পারে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ রাখতে এমন বানোয়াট ও অসত্য বক্তব্য প্রদান ছাড়া তার কোনো উপায় নেই।’

প্রতিদিন বিচারবহির্ভূত হত্যার হিড়িক চলছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘গুম করা হচ্ছে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে। দুঃসময়ের আতঙ্কজনক কালো রাত সৃষ্টি করে এই সরকার সারা দেশকে নরমুণ্ডের পাহাড় বানাতে চাচ্ছে। তাই রক্তপিপাসু প্রাণীর যেমন বিবেক থাকে না, তেমনি বিবেকহীন বর্তমান সরকার।’

‘দেশে গণতন্ত্র আছে বলেই বিএনপিদলীয় কার্যালয়ে বিএনপি প্রেস কনফারেন্স করতে পারে, আর প্রধানমন্ত্রীকে সমালোচনা করে বক্তব্য দিতে পারে’ সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের দেওয়া এ বক্তব্যের সমালোচনায় রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী নেতারা কি ভুলে গেছেন সরকারের সমালোচনা করার কারণে গভীর রাতে দলীয় কার্যালয় ভেঙে তছনছ করে গ্রেফতারের কথা? ভুলে গেছেন ২০১৩ সালে পুলিশ ঢুকিয়ে সারা কার্যালয় তছনছ করে বিএনপি মহাসচিব ও সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ ১৫৪ জন নেতাকর্মীকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার কথা? তাহলে তখন কি আপনাদের তথাকথিত গণতন্ত্র ছিল না?

তাহলে কয়েক দিন আগে একতরফা জাতীয় সংসদের ভেতরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সম্পর্কে যে উদ্ভট, অলীক, অসংসদীয়, অশ্রাব্য কটুবাক্য প্রধানমন্ত্রী ব্যবহার করেছেন, সেটি কোন গণতান্ত্রিক রীতিতে পড়ে? বিএনপিসহ বিরোধী দলের সভা-সমাবেশের অনুমতি না দেওয়া কোন গণতান্ত্রিক রীতিতে পড়ে? বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলা, নির্যাতন-নিপীড়ন কোন গণতান্ত্রিক রীতি?

বন্দুকের জোরে দেশের প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগে বাধ্য করে দেশ থেকে বিতাড়ন কোন গণতান্ত্রিক রীতিতে পড়ে ? মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করা কোন গণতান্ত্রিক রীতি? ধমক দিয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা কোন গণতান্ত্রিক রীতি? আমি আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক সাহেবকে অনুরোধ করব, নিজেরা আয়নায় ভালো করে নিজেদের চেহারাটা দেখুন।

রাজশাহীতে সন্ত্রাসীদের দ্বারা নিক্ষিপ্ত ককটেল বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপি কর্মী স্বপন কর্মকার, বাংলাভিশনের ব্যুরো প্রধান পরিতোষ চৌধুরী আদিত্যসহ কয়েকজন।

আমি দলের পক্ষ থেকে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের এই ন্যক্কারজনক ককটেল হামলার তীব্র ধিক্কার, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে দুষ্কৃতকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করছি। আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করছি।’

Leave a Reply