Friday, April 19

সিঙ্গারা বিক্রেতার মেয়ে আজ হিট গায়িকা

ভারতের জনপ্রিয় গায়িকা নেহা কাক্কর। আজ তার এই সফলতার পেছনে আছে এক কঠিন সংগ্রামের গল্প।  সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্ম হয়নি তার। অভাব-অভিযোগের মধ্য দিয়েই কেটেছে ছেলেবেলা।

উত্তরপ্রদেশের ঋষিকেশ থেকে বলিউডে কিভাবে পৌঁছালেন নেহা, সেই জার্নিটা জেনে নেয়া যাক।

নেহার জন্ম ১৯৮৮ সালে ৬ জুন উত্তরপ্রদেশের ঋষিকেশে। প্লেব্যাক সিঙ্গার সনু কাক্করের ছোট বোন তিনি। তাদের একটা ভাইও রয়েছে, নাম টনি কাক্কর। টনিও গায়ক। পরিবারে সঙ্গীত চর্চার একটা রেওয়াজ ছিল। ফলে ছোট থেকে তিন ভাইবোনের মধ্যেও সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহ গড়ে ওঠে।

সংসারে প্রচুর অভাব-অনটন ছিল। ঋষিকেশে একটা এক কামরার ঘরে ভাড়া থাকতেন। বাবা-মা আর তিন ভাইবোন, ওই ছোট ঘরের মধ্যেই থাকতেন। আবার ওই ঘরটাই ছিল তাদের রান্নাঘরও। ঘরেরই একটা কোণে একটা টেবিল রেখে তার উপর রান্না করতেন নেহার মা। সম্প্রতি নিজের ইনস্টাগ্রামে ওই ভাড়া বাড়ির ছবিও শেয়ার করেছেন নেহা।

নেহার বাবা ছিলেন সিঙারা বিক্রেতা। তার দিদি, সনু কাক্কর যে কলেজে পড়তেন, তার গেটের বাইরেই সিঙ্গারা নিয়ে বসতেন তাদের বাবা। এ নিয়ে বন্ধুবান্ধবেরা হাসাহাসিও করতেন। শুধু সিঙ্গারা বিক্রি করে এত বড় সংসার সামলানো একার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। ছোট হলেও বাবার সমস্যাটা বেশ ভালো করেই বুঝতেন তিন ভাইবোন।

তাই যে বয়সে অন্যান্য বাচ্চারা বাবা-মার ছত্রছায়ায় বড় হয়, ছোটদের আবদার মেনে খাবার, খেলনা কিনে এনে দেন বাবা-মায়েরা, সেই ছোট বয়স থেকেই উপার্জন করতে শুরু করেন তারা।

সনু, নেহা আর টনি- তিন ভাইবোনই উৎসবের সময় মন্দিরে ভজন গাইতেন। পরিবর্তে ৫০ টাকা করে পেতেন তারা। বাড়ি ফিরে সেই টাকা তারা মায়ের হাতে তুলে দিতেন।

পরে অবশ্য তারা ঋষিকেশ থেকে দিল্লি চলে আসেন। সেখানে নিউ হলি পাবলিক স্কুলে পড়াশোনা করেছেন নেহা। মাত্র ৪ বছর বয়স থেকে গান গাইতে শুরু করেন এই শিল্পী। নেহার গায়িকা হয়ে ওঠার জার্নি শুরু হয়েছিল একাদশ শ্রেণি থেকে। তখন ইন্ডিয়ান আইডল সিজন ২-এর প্রতিযোগী বাছাই চলছিল। খবর পেয়ে সেটে চলে যান নেহা। তার গান শুনে মুগ্ধ বিচারকেরা। সিজন ২-এর প্রতিযোগী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে যান।

এরপর ২০০৮ সালে ভাই টনির সঙ্গে মুম্বাই রওনা দেন নেহা। ‘নেহা দ্য রকস্টার’ নামে তার গানের অ্যালবাম মুক্তি পায়। ২০১৩ সালে প্লেব্যাক ডেবিউ করেন। ‘ফাটা পোস্টার নিকলা হিরো’ ছবির একটি গান প্লেব্যাক করেছিলেন তিনি। ২০১৪ সালে তার গান ‘সানি সানি’ ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তারপর একটার পর একটা প্লেব্যাক করেছেন তিনি। এছাড়া ‘দিলওয়ালে’ ফিল্মের ‘টুকুর টুকুর’, ‘বারবার দেখো’ ফিল্মের ‘কালা চশমা’, ‘সত্যমেব জয়তে’ ফিল্মের ‘দিলবার দিলবার’ মন ছুঁয়ে গিয়েছিল শ্রোতাদের।

এবার যে ঋষিকেশে একটা ছোট এক কামরার ভাড়া বাড়িতে ছেলেবেলা কাটিয়েছেন, আজ সেখানেই নিজের বিলাসবহুল বাংলো কিনেছেন নেহা। যে ইন্ডিয়ান আইডল থেকে তার উত্থান, পরে সেই জনপ্রিয় সঙ্গীত অনুষ্ঠানেরই বিচারকের আসনে বসেছেন নেহা। ইন্ডিয়ান আইডল সিজন ১১-এর বিচারক ছিলেন তিনি।

Leave a Reply