Thursday, April 11

আগেই জমজমাট ‘আমিরের টেস্ট’

ধরা যাক, এই সিরিজে মোহাম্মদ আমির বলে পাকিস্তান দলে কোনো খেলোয়াড় নেই। তাহলে কি শুরুর আগে কথার লড়াইটা হতো না? আকর্ষণ কমে যেত সিরিজের?

ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া কিংবা ভারত-পাকিস্তান প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ হয়তো ইংল্যান্ড-পাকিস্তান দ্বৈরথে নেই। কিন্তু একদিকে ক্রিকেটের চিরকালীন ‘অননুমেয়’ পাকিস্তান, অন্যদিকে অ্যালিস্টার কুকের অধীনে দারুণ ফর্মে থাকা ইংল্যান্ড—জমজমাট একটা টেস্ট সিরিজের প্রত্যাশা তো এমনিতেই তৈরি হয়ে যায়। সেই আকর্ষণে এবার বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে আমিরের টেস্টে প্রত্যাবর্তন। কাকতালীয়ভাবে চার টেস্ট সিরিজের শুরুটাও এমন এক মাঠে, যেখানে ছয় বছর আগে স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারির কারণে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন আমির। আজ থেকে শুরু লর্ডস টেস্টের সব মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু তাই পাকিস্তানের এই বাঁহাতি পেসার।

মাঠেও ইংল্যান্ডের জন্য বড় দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারেন আমির। সেখানে অবশ্য তাঁর সঙ্গী থাকছেন আরও দুই পেসার ওয়াহাব রিয়াজ ও সোহেল খান। থাকছেন স্পিনার ইয়াসির শাহও। সব মিলিয়ে বরাবরের মতোই দুর্দান্ত পাকিস্তানি বোলিং লাইনআপ। 256সিরিজের ট্রফি হাতে দুই অধিনায়ক—ইংল্যান্ডের অ্যালিস্টার কুক ও পাকিস্তানের মিসবাহ-উল-হক l এএফপি
একই কথা ইংল্যান্ড সম্পর্কেও বলা যেত, যদি জেমস অ্যান্ডারসন দলে থাকতেন। কিন্তু কাঁধের চোট লর্ডস টেস্ট থেকে ছিটকে দিয়েছে ইংল্যান্ডের সেরা বোলারকে। পেস বোলিংয়ে স্টুয়ার্ট ব্রড ও স্টিভেন ফিনের সঙ্গী হিসেবে তাই দেখা যেতে পারে নতুন ডাক পাওয়া টোবি রোল্যান্ড-জোনস কিংবা জ্যাক বলকে। ব্রড অবশ্য প্রকাশ্যেই বলেছেন, অ্যান্ডারসনের চোটের যে অবস্থা, তাতে অনায়াসেই তাঁকে রাখা যেত স্কোয়াডে।
ব্যাটিংয়ে পাকিস্তানের বড় ভরসা যদি হন ইউনিস খান ও মিসবাহ-উল-হক, ইংল্যান্ড তাকিয়ে থাকবে অ্যালিস্টার কুক-জো রুটের দিকে। তবে এই ইংল্যান্ড দলে রুটই সবচেয়ে বিপজ্জনক বুঝেই কি না, মাঠে নামার আগে তাঁকে কথার তিরের লক্ষ্য বানিয়েছেন পাকিস্তানিরা। ওয়াহাব রিয়াজ যেমন এরই মধ্যে বলে দিয়েছেন, ‘ইংল্যান্ড দলের মেরুদণ্ড হচ্ছে রুট। তবে সব ব্যাটসম্যানেরই তো শক্তি আর দুর্বলতার জায়গা থাকে। আমরা দুর্বলতাটা বের করতে জানি।’ ইংল্যান্ড আমিরকে স্লেজিং করতে পারে—এটা শুনে বলেছেন, ‘অভদ্র আচরণ করলে পাকিস্তানও ছেড়ে কথা বলবে না।’
এসব যে প্রতিপক্ষকে তাতিয়ে দেওয়ার চেষ্টা, রুটেরও তা অজানা নয়। রিয়াজের কথা উড়িয়ে দিয়ে তাই ইংলিশ ব্যাটসম্যানও বলেছেন, ‘ওর কিছু কিছু কথা আমি শুনেছি। প্রতিটি সিরিজ শুরুর আগে এমন কিছু ফালতু কথা বলাবলি হয়।’ তবে কথা যতই ‘ফালতু’ হোক, এর কিছুটা আঁচ যে মাঠের খেলায় পড়বেই, সেটা আমিরকে নিয়ে কথাবার্তা থেকেই বোঝা যাচ্ছে।
এমনিতে অননুমেয় হলেও টেস্টে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ফর্ম দুর্দান্ত। সর্বশেষ তিনটি টেস্ট সিরিজেই জিতেছে মিসবাহ-উল-হকের দল। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার পর এই ইংল্যান্ডকেই হারিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ ছয় টেস্টের পাঁচটিতেই জয় পাকিস্তানের। এ মুহূর্তে টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়েও প্রতিপক্ষের ওপরে (পাকিস্তান তিনে, ইংল্যান্ডে চারে)।
তবে গত বছর আমিরাতে পাকিস্তানের কাছে হারের পর দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জিতেছে ইংল্যান্ড। নিজেদের দেশে গত ২০ বছর পাকিস্তানের কাছে সিরিজ হারেনি। ইংল্যান্ডের মাটিতে পাকিস্তানের সর্বশেষ সিরিজ জয় সেই ১৯৯৬ সালে, ওয়াসিম আকরামের দল হারিয়েছিল মাইক আথারটনের ইংল্যান্ডকে। এরপর তিনটি সিরিজে হেরে ফিরেছে পাকিস্তান। এএফপি, রয়টার্স।
টেস্টে মুখোমুখি
ম্যাচ ইংল্যান্ড পাকিস্তান ড্র
মোট      ৭৭    ২২      ১৮   ৩৭
ইংল্যান্ডে  ৪৭    ২০       ৯    ১৮

লর্ডসে    ১৩     ৪        ৩     ৬

সিরিজ     ২৩      ৯          ৮      ৬

Leave a Reply