মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ৭টি দেশ থেকে মানুষের আমেরিকায় প্রবেশের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার অংশবিশেষ ব্লক করে দিয়েছেন দেশটির এক ফেডারেল বিচারক। রায়ে বিচারক বলেছেন, যারা ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ ভিসা নিয়ে অবতরণ করেছেন তাদেরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো উচিৎ হবে না। এ খবর দিয়েছে আল জাজিরা।
খবরে বলা হয়, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর নাগরিকদের আমেরিকায় ঢোকার ওপর ৯০ দিনের যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে আইনজীবীরা আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। শনিবার রাতে মার্কিন ডিস্ট্রিক্ট বিচারক অ্যান ডনলি রায়ে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের ফলে মার্কিন বিমানবন্দরে আটকে পড়া কয়েক ডজন মানুষের বিষয়টি রয়েছে। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ) এই মামলাটি দায়ের করে। সংস্থাটি নির্বাহী আদেশের ওপর আদালতের এই সাময়িক স্থগিতাদেশকে নিজেদের বিজয় হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
এসিএলইউ’র অভিবাসন অধিকার প্রকল্পের উপ পরিচালক লি গিলার্ন্ট বলেন, ‘এই রায়ে স্থিতিবস্থা বহাল রাখতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি এর দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছে যে, যাদের এ দেশে থাকার অধিকার রয়েছে তাদেরকে অবৈধভাবে আমেরিকার মাটি থেকে সরানো যাবে না।’ এসিএলইউ বলেছে, এর ফলে বৈধ ভিসা ও শরণার্থী মর্যাদা রয়েছে এমন ১০০ থেকে ২০০ মানুষ উপকৃত হবে। ট্রাম্প শুক্রবার রাতে ওই আদেশে সই করার পর তারা পথিমধ্যে বা মার্কিন বিমানবন্দরে আটকে আছেন।
তবে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে যখন দুই ইরাকিকে বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টাকালে জন এফ. কেনেডি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে (জেএফকে) আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আটকে দেয়। জেএফকে বিমানবন্দরে অন্তত ১২ জন লোককে আটক রাখা হয়েছে। ফলে বিমানবন্দরে গণবিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞার ২৪ ঘন্টারও কম সময়ে, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি জানিয়েছে কমপক্ষে ১০৯ জন ভ্রমণকারীকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে সাতটি সংঘাত কবলিত মুসলিম দেশ থেকে কার্যত কোন শরণার্থীর প্রবেশও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি কেউ গ্রিন কার্ড বা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বাসিন্দা সনদপত্র থাকলেও প্রবেশ করতে পারছেন না। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার বেলায় ট্রাম্প শরণার্থী নেবেন, তবে সেক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন খ্রিস্টানরা। আর আমেরিকার দীর্ঘ যাচাইবাছাই প্রক্রিয়ার কথা বিবেচনায়, মুসলিম শরণার্থীদের প্রবেশের বিষয়টিই কার্যত স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ট্রাম্পের এই আদেশের প্রতিক্রিয়ায় প্রতিবেশী কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ভিন্ন বক্তব্য নিয়ে হাজির হয়েছেন। টরোন্টো বিমানবন্দরে এক সিরিয়ান শিশুকে অভ্যর্থনা জানানোর ছবি দিয়ে তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘যারা নির্যাতন, সন্ত্রাস ও যুদ্ধ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, আপনাদেরকে কানাডিয়ানরা স্বাগত জানাবে। আপনার ধর্মবিশ্বাস এক্ষেত্রে বিবেচ্য নয়। বৈচিত্র্য হলো আমাদের শক্তি। কানাডায় স্বাগতম।’ ট্রুডোর মুখপাত্র বার্তাসংস্থা এপিকে বলেছেন, কানাডার অভিবাসন ও শরণার্থী নীতির সফলতা নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইটে হাউজে কথা বলবেন ট্রুডো। ধারণা করা হচ্ছে, খুব শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন দেশটির অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র কানাডা।