Saturday, April 20

গোড়ানে ২ শিশুকে গলাকেটে হত্যা, মায়ের আত্মহত্যার চেষ্টা

স্বদেশ কন্ঠ, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান: আজ শনিবার (৭ মার্চ) সকাল সাড়ে আটটায় রাজধানীর খিলগাও-এ গোড়ান এলাকার ৩৭৯ নম্বর বাসা থেকে দু’শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

নিহত ২ শিশুর হলো, মেহজাবিন আলভী (১১) ও জান্নাতুল ফেরদৌস জান্নাত (৬)।

এ ঘটনায় নিহতদের মা আখতারুন্নেসা পপিকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় নিজঘর থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরে তাকে পুলিশ প্রহরায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে সাংসারিক বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া জেরে পপি তার দুই সন্তানকে গলাকেটে হত্যা করে আত্মহত্যাচেষ্টা করেছেন বলে সন্দেহ করছে পুলিশ।

খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

ওসি মশিউর রহমান জানান, শুক্রবার (৬ মার্চ) দিনগত রাতে দুই সন্তানকে গলাকেটে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যার পর নিজঘরেই আত্মহত্যাচেষ্টা করেন মৃত শিশুদের মা পপি। খবর পেয়ে পুলিশ দগ্ধ অবস্থায় পপিকে উদ্ধার করে। পরে তাকে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠায়।

তিনি আরও জানান, নিহত শিশুদের বাবা মোজাম্মেল হোসেন বিপ্লবকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

নিহত শিশুদের নানা আবু তালেব জানান, খিলগাঁওয়ে ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলে পড়াশোনা করত তার দু’ নাতনি। আলভী চতুর্থ শ্রেণীতে ও জান্নাত জুনিয়র ওয়ানে। দু’জনেই ছিল খুব মেধাবী। ওদের বাবা বিপ্লব। মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলায় ইলেকট্রিক সামগ্রীর ব্যবসা করেন তিনি। শুক্রবারে মুন্সিগঞ্জ থেকে খিলগাঁওয়ে বাসায় আসেন ও শনিবারে আবার থেকে সেখানে চলে যান।

তিনি আরও জানান, মোজাম্মেল (মেয়ে জামাই) প্রায়ই তার মেয়েকে বলতেন ফকিন্নির মেয়েকে বিয়ে করার পর থেকে কোনো শান্তি নেই। এখন কীভাবে কী হয়েছে তা তিনি জানেন না।

লেখাপড়ার খরচ নিয়ে হতাশায় ছিলেন মা

রাজধানীর খিলগাঁওয়ে দুই শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। আবার তাদের মা আখতারুন্নেসা পপিও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। এ প্রেক্ষাপটে পুলিশের ধারণা, মা নিজের দুই শিশুকে হত্যা করার পর নিজে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।

কিন্তু কেন এমন হতে যাবে? যদিও খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলছেন, শিশু দুটির লেখাপড়ার খরচসহ না বিষয়ে পপি এবং তার স্বামীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। সাংসারিক শান্তি ছিল না তাদের মধ্যে। এসব কারণে স্ত্রী হতাশাগ্রস্ত ছিলেন।

তাই ধারণা করা হচ্ছে, দুই শিশুকে হত্যার পর তিনি নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। তবে এ ঘটনায় তার স্বামী মোজাম্মেল হক বিপ্লবকেও থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এদিকে, শিশু দুটির মা পপিও বলছেন সাংসারিক অশান্তির কথা। তিনি বলেন, শিশুদের বাবা তাদের দেখাশোনা করতো না। মেয়ে দুটো ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলে পড়াশোনা করতো। আর মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে নিজের ভাইয়ের সঙ্গে ইলেকট্রিকের ব্যবসা করে বিপ্লব। কিন্তু ব্যবসার সব আয় তার ভাই হিসাব করেন। সে কোনো হিসাব রাখে না।

পপি বলেন, আমাদের ঠিকমতো টাকা-পয়সা দিতে চাইতো না। মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার খরচ লাগে। এসব বিষয়ে তার কোনো মাথাব্যথা ছিল না। টাকার কথা বললেই বকাবকি করতো।

শনিবার (০৭ মার্চ) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে খিলগাঁওয়ের গোড়ান এলাকার ৩৭৯ নম্বর বাসা থেকে মেহজাবিন আলভী (১১) ও জান্নাতুল ফেরদৌস জান্নাত (০৬) নামে শিশু দুটির গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। একইসঙ্গে আত্মহত্যার চেষ্টায় নিজের শরীরে আগুন লাগিয়ে দগ্ধ পুপিকেও উদ্ধার করে। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। পুলিশ প্রহরায় তিনি সেখানেই এখন চিকিৎসাধীন। তার শরীরের ১৮ শতাংশ পুড়ে গেছে।

হাসপাতাল থেকে পপি আরও বলেন, দুই সপ্তাহ আগে ৪০ দিনের চিল্লায় যায় শিশুদের বাবা। এই ৪০ দিন আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি সে। তেমন কোনো খরচও দিয়ে যায়নি। এ বিষয়ে কথা বলতে গেলেই সে আমাকে তালাক দেবে হুমকি দিতো। অন্যত্র বিয়ে করবে এসব হুমকিও দিতো। বাচ্চাদের পড়াশোনার কথা বলতে গেলেই সে বলে তুমি বাচ্চাদের নিয়ে শ্রীনগরে চলে আসো। বাচ্চাদের এখানে ভর্তি করাবো। এখানে ভালো মাদ্রাসা আছে।

তিনি বলেন, গত মাসের ২৮ তারিখে সর্বশেষে ঢাকায় আসে সে। গতকাল শুক্রবার (০৬ মার্চ) আবার আসার কথা থাকলেও আসেনি। মোবাইলে বলে বাসায় আসার কথা। এরপর মেয়ের পড়াশোনার টাকার কথা বললে খারাপ ব্যবহার করে।

তখন বাচ্চাদের কেন খুন করলেন, কীভাবে খুন করলেন- জিজ্ঞেস করলেই নিশ্চুপ হয়ে যান পপি।

Leave a Reply