Thursday, April 25

ইইউবিতে গোলটেবিল বৈঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নারী দিবস উপলক্ষে গত ১১ মার্চ ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের আয়োজনে “৭১ থেকে মুজিব বর্ষ-২০২০: নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য প্রফেসর ড. মকবুল আহমেদ খান, রেজিস্ট্রার আ.ফ.ম গোলাম হোসেন, ফ্যাকাল্টি ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের ডাইরেক্টর ড. ফারজানা আলম, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ও অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর মো. ওবাইদুর রহমান, ভেরিতাস ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর এফবিসিসিই এর ডাইরেক্টর শারিতা মিল্লাত, রাজনীতি বিশ্লেষক, উদ্যোক্তা, লেখক ও সমাজকর্মী মাহজাবিন আহমেদ মিমি, অভিনেত্রী ফারজানা ছবি, কবি ও সাংবাদিক আলমগীর রেজা চৌধুরী, লেখক ও সাংবাদিক রেজাউর রহমান রিজভী, লেখক ও শিক্ষক শাপলা সপর্যিতা, কবি ও গবেষক রঞ্জনা বিশ্বাস, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক তাহেরা আক্তার জলি, ফু ওয়াং ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের জিএম(প্ল্যানিং অ্যান্ড অপারেশন) উপন্যাসিক কাজী রাফি, কবি ও সাংবাদিক বীরেন মুখার্জী ও ইইউবির সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর অফিসার তারসিয়া আলম।
ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের পাবলিক রিলেশন অফিসার রাশিদা স্বরলিপির সঞ্চালনা গোলটেবিলে সূচনা বক্তব্য রাখেন ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের রেজিস্ট্রার আ.ফ.ম গোলাম হোসেন। তিনি বলেন, ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস এবং মুজিববর্ষ উপলক্ষে আজকের আলোচনা। ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ নারী-পুরুষের সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্ব দেয়, উভয়ের অংশগ্রহণমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাস করে। আজকের আলোচনার শিরোনাম “৭১ থেকে মুজিব বর্ষ-২০২০: নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ” আমরা এ আলোচনায় নারীর সফলতা, সংগ্রাম, অর্জন এবং এগিয়ে চলার পথে অন্তরায় সমূহ নিয়ে আলোচনা করবো।
ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য প্রফেসর ড. মকবুল আহমেদ খান বলেন, নারীকে অধিকার কে দেবে? তাকে মনে রাখতে হবে –আমার অধিকার আমি চর্চা করবো। নারীর অবদান অস্বীকার করে একটি সমাজ এগিয়ে যেতে পারে না। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি বলতে চাই মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান পুরুষের থেকে কোন অংশে কম নয়, বরং কোথাও কোথাও বেশি। এদেশের নারীদের আত্মসম্মান বিষ্ময় জাগায়- ৭১-এ একজন নারীও পাঞ্জাব বাহিনীর কাছে নিজেকে সমর্পণ করেনি, হয় মেরেছে, না হয় মরেছে। আত্মসম্মান, আর মুক্তির আশা নারীকে অদম্য করুক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের ডাইরেক্টর ড. ফারজানা আলম বলেন, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে চাকরি করতে এসে নারী হিসেবে কোন বিশেষ সুবিধা নেইনি। আমরা যদি খেয়াল করি, তাহলে দেখবো উচ্চ পর্যায়ে যারা আছেন তাদের মধ্য কোন বৈষম্য নেই। বাংলাদেশে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে নারী। তারা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন এবং বাস্তবায়ন করছেন- আমরা তার সুফল পাচ্ছি।
ভেরিতাস ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর এফবিসিসিই এর ডাইরেক্টর শারিতা মিল্লাত বলেন, আমি একজন উদ্যোক্তা, নিজের প্রতিষ্ঠানে যখন ঢুকি তখন খেয়াল করেছি যে ফ্যাক্টরির স্টাফরা চিন্তা করে সালাম দেবে কি দেবে না। এখানে একজন পুরুষ হলে কিন্তু স্টাফদের মধ্যে এমন চিত্র দেখা যায় না। আমার বাবা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, বাবা ছেলে এবং মেয়েকে সমান সুযোগ সুবিধা দিয়ে বড় করেছেন এবং পড়ালেখা শিখিয়েছেন। আমি যখন বিদেশে পড়তে যা্ই বাবার কাছে আত্মীয়রা বড় বড় চিঠি লিখতে শুরু করেন। তারা লেখেন মেয়েকে বিদেশে পড়তে দিও না, নষ্ট হয়ে যাবে। যদিও বাবা সেসব পাত্তা দেয়নি, আমিতো ফেস করলাম, আমার ভাইয়ের কিন্তু কোন সমস্যা হলো না। এখনকার কথা যদি বলি, আমার দু্ই ছেলে মেডিকেলে পড়ছে- কোন কারণে যদি তারা পড়ালেখায় পিছিয়ে পরতো- তাহলে কথা উঠতো আমি মা নিজে বাইরের কাজ নিয়ে ব্যস্ত তাই ছেলেদেরকে ঠিক ঠাক মানুষ করতে পারিনি। এ সামাজিক প্রতিবন্ধকতা এগুলো একজন নারীকে ভেতর ও বা্রে থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, এর কারণে অনেক নারী পিছিয়ে পরে।
রাজনীতি বিশ্লেষক, উদ্যোক্তা, লেখক ও সমাজকর্মী মাহজাবিন আহমেদ মিমি বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ’ এ প্রসঙ্গে আসলে আমি স্মরণ করতে চাই আমার মা সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনকে। যিনি ৭৫পরবর্তী আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করেছেন এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনেছেন। নারীর ক্ষমতায়নে ৮১থেকে বর্তমান পর্যন্ত আমাদের বঙ্গবন্ধুকণ্যা শেখ হাসিনার সংগ্রামের বিষয়টি বলতেই হবে, না বললে অন্যায় হবে। শেখ হাসিনা মোকাবিলা করেছেন দলের ভেতরের স্বক্রিয় ষড়যন্ত্র, আন্তর্জাতিক চক্রান্ত, দেশের ভেতরের চক্রান্ত। শেখ হাসিনাকে গণতন্ত্রের ছবক দেয়ার ছলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট দেশগুলো হেন চেষ্টা নাই যা করে নাই। কিন্তু নারীর উন্নয়ন হচ্ছে। এখন সবকিছুতো আর শেখ হাসিনা পাল্টে দিতে পারবেন না, সামাজের ভেতর থেকে পাল্টাতে হবে, এক দিক থেকে দেখতে গেলে নারীর সফলতা এবং প্রতিবন্ধতা কৌনিকভাবে চলছে। নারীর অধিকার চর্চা বলতে আমি বুঝি, যে গৃহিনী হতে চায়, সে যেন সেটায় হয়। নারী সমঅধিকার বলতে আমি পুরুষ বিদ্বেষী হওয়াকে বুঝি না।
অভিনেত্রী ফারজানা ছবি বলেন, আমি একজন অভিনয়শিল্পী, অভিনয় করার সুবাদে ভিন্ন ভিন্ন জীবন অনুভব করার সৌভাগ্য হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রথম পেশাদার বাইক রা্ইডারের চরিত্রে অভিনয় করি। রাস্তায় বাইক চালানোর সময় দেখেছি মানুষ বিষয়টিকে দু্ইভাবে দেখছে এক মেয়েরাও পারে দু্ মেয়ে হয়ে বা্কি চালাচ্ছে। নারীর অর্জনকে ভালোভাবে গ্রহণ করার মানসিকতা দিন দিন বাড়ছে সামনে আরও বাড়বে।
লেখক ও সাংবাদিক রেজাউর রহমান রিজভী বলেন, উচ্চ পর্যায়ে অনেক নারী কাজ করছেন, নারী বান্ধব নীতি নির্ধারণী হচ্ছে বাকীটা অর্জন করেতে হবে। জাতীয় সংসদেও বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী ও স্পিকার হলেন নারী। এতেই বোঝা যায় নারীর ক্ষমতায়নের কাজ সরকার বড় ভাবেই করছে। এখন বাকিদের কাজ সেই কাজকে এগিয়ে নেয়া।
কবি ও গবেষক রঞ্জনা বিশ্বাস বলেন, ৭১’এ ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীদের পুনর্বাসনে বঙ্গবন্ধু যে সমাজসংস্কারক হিসেবে কত বড় ভূমিকা রেখেছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পাবনার এক জন সমাবেশে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন যে, আমি যুবকদেরকে আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন স্বহৃদয়ে তাদেরকে গ্রহণ করে। তারপর দেখা গেল নারী পুনবার্ন বোর্ডে প্রচুর চিঠি আসতে শুরু করলো। বঙ্গবন্ধু সেসব চিঠি খুলে খুলে পড়তেন। মালেকা বেগম জানালেন, সে সময় মাত্র ১০ থেকে ১২জনকে বিয়ে দিতে পেরেছিলেন। আজকের সমাজে সে নারীরা বীরাঙ্গনা-মুক্তিযোদ্ধা।
লেখক ও শিক্ষক শাপলা সপর্যিতা বলেন, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, নারীর ক্ষমতায়নের জন্য প্রথমে দরকার নারীর সাহস। অনের থেকে কোথাও কোথাও প্রথা শক্তিশালী এগিয়ে যাওয়ার জন্য কখনো কখনো প্রথা ভাঙতে হয়, এক্ষেত্রে নারী সাহসী না হলে পারে না।
কবি ও সাংবাদিক আলমগীর রেজা চৌধুরী বলেন, নারীর এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও নারী নিজে নিজের জন্য বাধা। দেখা যায়, মা হয়ে ছেলে-মেয়ের মধ্যে ছেলেকে প্রাধান্য দিচ্ছে বা পক্ষপাতিত্ব করছে। এটা তার দোষ না- সমাজে বহুদিনের অভ্যাস। এ অভ্যাস থেকে প্রথমে একজন মাকে বের হতে হবে।
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক তাহেরা আক্তার জলি, ফু ওয়াং ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের জিএম(প্ল্যানিং অ্যান্ড অপারেশন) উপন্যাসিক কাজী রাফি, কবি ও সাংবাদিক বীরেন মুখার্জী ও ইইউবির সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর অফিসার তারসিয়া আলম।

Leave a Reply