Thursday, March 28

গোপালগঞ্জে করোনা গুজবে থানকুনি পাতা খাওয়ার হিড়িক

থানকুনি-পাতা চিবিয়ে খেলে নোবেল করোনা সংক্রমিত হতে পারবে না, এমন গুজবে থানকুনি-পাতা খাওয়ার হিড়িক পড়ে গোপালগঞ্জে। মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) গভীর রাত থেকেই সকাল পর্যন্ত জেলার সর্বত্র এ হিড়িক চলে। মধ্যরাতেই বিভিন্ন স্থানে মানুষজন নেমে পড়ে থানকুনি-পাতা সংগ্রহে। গোপালগঞ্জ শহরসহ জেলার সবকটি উপজেলাতেই খবর নিয়ে জানা গেছে, গুজবে সাড়া দিয়ে সাধারণ লোকজন যেখান থেকে পেরেছেন তা সংগ্রহ করেছেন এবং সকালে সূর্য ওঠার আগেই কেউ লবণ দিয়ে বা কেউ লবণ ছাড়াই থানকুনি-পাতা চিবিয়ে খেয়েছেন। সেইসঙ্গে যে যেভাবে পেরেছেন আত্মীয়-স্বজনসহ প্রতিবেশী ও অন্যদেরকেও উৎসাহিত করেছেন এভাবে থানকুনি-পাতা খেতে। অনেক এলাকায় স্থানীয় মসজিদের মাইকেও থানকুনি পাতা খাওয়ার জন্য বলা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। কেউ বলছেন, চরমোনাইর পীর সাহেব স্বপ্নে দেখিয়েছেন থানকুনি পাতা লবণ দিয়ে চিবিয়ে খেলে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হতে পারবে না। আবার কেউ বলছেন, গওহরডাঙ্গা মাদরাসার বড় হুজুর স্বপ্নে দেখিয়েছেন তিনটি থানকুনি-পাতা চিবিয়ে খেয়ে ফজরের নামাজ আদায় করলে তার শরীরে করোনা সংক্রমিত হতে পারবে না। কেউ বলছেন পাতাগুলো ধুয়ে খেতে হবে, আবার কেউ বলছেন পাতাগুলো না ধুয়েই খেতে হবে। এমনসব গুজবে যারাই সাড়া দিয়েছেন তারা যে যেভাবে পেয়েছেন থানকুনি-পাতা খেয়েছেন।এ ব্যাপারে চরমোনাইর পীর মুফতি সৈয়দ মো. রেজাউল করিমের সংগঠন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তসলিম হোসাইন বলেছেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং গুজব। এ ধরণের কোনও তথ্য আমাদের জানা নেই। একটি মহল পীর সাহেবের নামে গুজব ছড়াচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এ ব্যাপারে গওহরডাঙ্গা মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা আব্দুস সালাম বলেছেন, এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা, গুজব এবং অপপ্রচার। ভোররাতে আমরাও আশপাশের বিভিন্ন মসজিদের মাইকে এ অপপ্রচার শুনেছি এবং সকাল থেকে বিভিন্ন মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আমরাও অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। এগুলো যদি কেউ মানে তাহলে তার গুনাহ হবে। এদিকে করোনা সন্দেহে বুধবার (১৮ মার্চ) বিকেল পর্যন্ত গোপালগঞ্জের পাঁচ উপজেলায় ৫২ জনকে হোম-কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। সিভিল সার্জন ডা. মো. নিয়াজ মোহম্মদ আরও জানিয়েছেন, এদের মধ্যে ৫০ জনই প্রবাসী বাংলাদেশি। সৌদিআরব, ভারত, মালয়েশিয়া, চীন, ইতালি ও সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন। গোপালগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তাদের বাড়ি। নিজ নিজ বাড়িতেই তাদেরকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। বাকী দু’জন ঢাকায় যাওয়া-আসার কারণে তাদেরকে হোম-কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য-কর্মীরা সবসময়ই তাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তারা সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। এখনও কাউকে করোনায় আক্রান্ত পাওয়া যায়নি। সিভিল সার্জন আরও জানান, সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া এলাকায় নির্মিত ট্রমা সেন্টারটিকে কোয়ারেন্টিন সেন্টার হিসেবে এবং গোপালগঞ্জ ২৫০-শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে আট বেডের আইসোলেশন ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

Leave a Reply