Sunday, December 22

নির্বাচনের ৩ দিন পর কেন্দ্রের টয়লেট থেকে ব্যালট পেপার উদ্ধার

কুড়িগ্রামের উলিপুরে চতুর্থ ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ৩ দিন পর ব্যালট পেপার উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার সকালে ধামশ্রেণী ইউনিয়নের ভদ্রপাড়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের টয়লেট থেকে এসব ব্যালট পেপার উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ওই ইউনিয়নের ভোটারদের মাঝে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

ধামশ্রেণী ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের ভোটারদের অভিযোগ গত রোববার ভোট গ্রহণের দিন নানা অনিয়ম করেন সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। ভোট গ্রহণ শেষে ফলাফল দিতেও নানা টালবাহানা করে কালক্ষেপণ করা হয়। পরে প্রার্থীদের তোপের মুখে রাত ১০টার দিকে ফলাফল প্রকাশ করেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান। প্রকাশিত ফলাফল নিয়ে নানা গুঞ্জন দেখা দেয় ওই এলাকার ভোটারদের মাঝে।

বুধবার ওই ওয়ার্ডের পরাজিত সদস্য প্রার্থী মাহবুবর রহমান এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ভদ্রপাড়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রের টয়লেট খুলে তার ভেতরে প্রায় ৫০-৬০টি চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত প্রার্থীর ব্যালট দেখতে পান। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে একই ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী ৮নং ওয়ার্ডের দঁড়িচর পাঁচপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে বাথরুম থেকেও বেশকিছু ব্যালটের ছেঁড়া টুকরা উদ্ধার করেন এলাকাবাসী। ব্যালট পাওয়ার খবরটি ছড়িয়ে পড়লে ইউনিয়নজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।

সদস্য পদে ভ্যানগাড়ি প্রতীকের এজেন্ট মরিয়ম আক্তার মনি সাংবাদিকদের বলেন, ভোটের দিন দায়িতপ্রাপ্ত জনৈক এক ব্যক্তি ব্যালট বই নিয়ে টয়লেট যায়। এ ব্যাপারে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে বিষয়টি জানালে তিনি আমলে নেননি। পরে অনেক সময় পরও তিনি টয়লেট থেকে বের হননি। আমি টয়লেটের কাছে গেলে এক কর্মকর্তা আমাকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেন।

পরাজিত সদস্য প্রার্থী মাহবুবার রহমান অভিযোগ করে বলেন, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ভোট গ্রহণের দিন নানা অনিয়ম করেছেন। তিনি আমাদের কোনো অভিযোগ শোনেননি। ভোটের পর থেকেই মানুষজন কানাঘুষা করছিল। আজ সকালে লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলের টয়লেট খুলে এসব ব্যালট দেখতে পাই। টয়েলেটের ভেতরে পুড়ে যাওয়া ব্যালটসহ প্রায় শতাধিক ব্যালট পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত ভোটের সঙ্গে ব্যালট পেপারের হিসাবে গরমিল রয়েছে। টয়লেটের হাউসের ভেতরে আরো ব্যালট থাকতে পারে বলে ধারণা করেন তিনি।

ধামশ্রেণী ইউনিয়নে নৌকার পরাজিত প্রার্থী সিরাজুল হক সরদার বলেন, এই কেন্দ্রে একজন দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিকে প্রিসাইডিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এসব কাজ করেছেন। এ কেন্দ্রে অভিযান চালালে কমপক্ষে ২০০-৩০০ ব্যালট পাওয়া যাবে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

ভোটের দিন ওই কেন্দ্রের দায়িত্বরত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, সারাদিন ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। ভোট গণনা শেষে ফলাফলও প্রার্থীদের হাতে দেওয়া হয়েছে। ব্যালটের হিসাব আমার কাছে সঠিক আছে। এ ব্যালটগুলো কোথা থেকে এলো তা আমার জানা নেই।

উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও ওই ইউনিয়নের রিটার্নিং অফিসার আহসান হাবিবের সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম রাকিব বলেন, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে বলতে পারবেন।

উলিপুর থানার ওসি ইমতিয়াজ কবির জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

Leave a Reply