Saturday, April 13

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেলে তাসফিয়া হত্যা রহস্যর সমাধান মিলবে

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত থেকে উদ্ধার হওয়া সানশাইন স্কুলের ছাত্রী তাসফিয়া আমিনের মৃত্যু নিয়ে কোন স্পষ্ট তথ্য খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে রেস্টুরেন্ট থেকে উদ্ধার সিসিটিভি ফুটেজ থেকে শুরু করে লাশ উদ্ধারের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ের উত্তর খুঁজছে পুলিশ।

এর মধ্যে একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পাওয়া পোশাকের সঙ্গে মরদেহের পোশাকের মিল না পাওয়া, পতেঙ্গা পর্যন্ত পৌঁছানো এমন নানা ধরনের প্রশ্নের উত্তর মেলানোর চেষ্টা করছে পুলিশ।এদিকে মরদেহ উদ্ধারের ৩৬ ঘণ্টা পার হলেও আদনানের সেই কথিত বড় ভাইদের আটক করতে পারেনি পুলিশ।

তাসফিয়ার ফেসবুক বন্ধু আদনানকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে জানিয়ে চট্টগ্রাম পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (বন্দর জোন) আরেফিন জুয়েল বিডিমর্নিংকে বলেন, ‘তাসফিয়া আত্মহত্যা করেছে নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে আমরা তা খতিয়ে দেখছি। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে সম্ভাব্য সব বিষয়কে সামনে রেখে কাজ করছি।ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে আমরা তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে পারবো।’

মঙ্গলবার বিকালে বাসা থেকে বেরিয়ে গোলপাহাড় এলাকায় চায়না গ্রিল রেস্টুরেন্টে যায় তাসফিয়া। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেখান থেকে তাকে বের হতে দেখা গেছে রেস্টুরেন্টের সিসিটিভি ফুটেজে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তার বন্ধু আদনান জানিয়েছে, তাসফিয়া তার কাছ থেকে ১০০ টাকা সিএনজি ভাড়া নিয়েছিল। তবে গোলপাহাড় থেকে পতেঙ্গার সিএনজি ভাড়া কমপক্ষে আড়াইশ টাকা।

রেস্টুরেন্টের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তাসফিয়ার পরনে ছিল সালোয়ার-কামিজ। আর মরদেহ উদ্ধারের সময় পরনে ছিল স্কার্ট। এই পোশাক পরিবর্তন নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। মরদেহের মুখে ফেনা পাওয়া যায়। এ ধরণের ফেনা বিষপানের ক্ষেত্রে দেখা যায়। প্রশ্ন উঠেছে, তাসফিয়া কি বিষপান করেছে? নাকি অন্য কোন ওষুধ খাইয়ে তাকে মারা হয়েছে? যদি বিষপান করে তবে সে বিষ কেনার টাকা পেল কোথায়? সিএনজির ভাড়া দেওয়ার পর আর কোন টাকা থাকার কথা না। যদি তাসফিয়া বিষপান করে তবে বিষপান করার পর সড়ক থেকে ২০/২৫ ফিট দূরে কীভাবে গেল? লাশটা উপুড় হয়ে থাকবে কেন? যদি সে আত্মহত্যা করে তবে তার হাতে থাকা সোনার আংটি গেল কোথায়? নিজের ব্যবহারের মোবাইল ফোনটি কোথায়?

পুলিশ আরও খতিয়ে দেখছে, যদি তাসফিয়া আত্মহত্যা না করে থাকে তবে তাকে কে হত্যা করেছে? কেন তাকে হত্যা করা হয়েছে? তার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কি আদনান জড়িত? যদি আদনান তার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে রাতে যখন তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন আদনান তাসফিয়ার বাবার সঙ্গে কীভাবে ছিল? যদি আদনান হত্যাকাণ্ড না ঘটিয়ে থাকে তবে কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে? কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে?

তাসফিয়ার মৃত্যুর রহস্যগুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে জানিয়ে পতেঙ্গা থানার ওসি আবুল কাশেম ভূইয়া বলেন, পরনের কাপড় চেঞ্জ করেছেন কিনা, করলে কোথায়, কখন, কীভাবে চেঞ্জ করলেন, আমরা তদন্ত করে দেখছি। তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ময়নাতদন্ত রিপোর্টসহ পারিপার্শ্বিক অন্যান্য বিষয়ে ওপরও নির্ভর করছে। তার ময়নাতদন্ত হয়েছে। এখন কেমিক্যাল অ্যানালাইসিস হবে, তার ভিসেরা ফ্রিজার্ভ করা আছে।

অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘তাসফিয়ার মৃতদেহ নদীর পাড়ের রিটেইনিং ওয়াল থেকে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ ফিট দূরে ছিল। লাফ দিয়ে এতদূর যাওয়া সম্ভব না। কেউ ধাক্কা দিলেও এত দূরে যাওয়ার কথা না। নদীতে আসা জোয়ার তার মরদেহ ওখানে নিয়ে যেতে পারে।’

উল্লেখ্য, ফেসবুকে বন্ধুত্বের মাসপূর্তি উপলক্ষে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গোলপাহাড়ের মোড়ে অবস্থিত রেস্টুরেন্ট চায়না গ্রিলে তাসফিয়াকে ডেকে নেই তার বন্ধু আদনান। তাসফিয়া ও আদনান ২০-২২ মিনিট দোকানে ছিল। ৬টা ১৫ মিনিটে প্রবেশ করে তাসফিয়া ও আদনান। তারা ৬টা ৩৭ মিনিটে বের হয়ে যায়। এরপর দুজনকে দুটি সিএনজিতে উঠে চলে যেতে দেখা যায়।

এরপর বুধবার সকালে পতেঙ্গায় অজ্ঞাত তরুণীর লাশ সৈকতের ১৮ নম্বর ব্রিজের উত্তরপাশে পাথরের ওপর পড়ে থাকার খবর পাওয়ার পর তাসফিয়ার বাবা-চাচারা পতেঙ্গা থানায় যান। সেখানে গিয়েই তারা দেখতে পান তাসফিয়ার লাশ।

তাসফিয়া আমিনদের গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফের ডেইলপাড়া এলাকায়। তার পরিবার নগরীর ওআর নিজাম আবাসিক এলাকার তিন নম্বর সড়কের কেআরএস ভবনে থাকে।

Leave a Reply