Thursday, April 25

সিসি ক্যামেরায় জাফর ইকবালের ওপর হামলার মুহূর্ত

ওদের বুঝতে হবে, সবাই আমরা বাঙালি ছিলাম: ইয়াসমিন হক

বাংলাদেশ যে অসাম্প্রদায়িকতার নীতি আর বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে স্বাধীন হয়েছিল, ধর্মীয় চরমপন্থার কোনো স্থান যে এ দেশে ছিল না- সে কথাটি আজকের ছাত্রদের বোঝানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন সন্দেহভাজন জঙ্গি হামলায় আহত অধ্যাপক জাফর ইকবালের স্ত্রী ইয়াসমিন হক।

সোমবার শাহবাগে একটি বিক্ষোভ সমাবেশে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “যখন দেশ স্বাধীন হয়েছিল, তখন কিন্তু আমরা এমন ছিলাম না। সবাই বাঙালি ছিলাম। কোনো রিলিজিয়াস কমিউনাল অবস্থা ছিল না। আমাদের একটা সেক্যুলার দেশ, ওদের পড়তে হবে, বুঝতে হবে। ছাত্রদের বুঝতে হবে যে এটা হওয়া উচিত হয় নাই।”

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গত শনিবার এক অনুষ্ঠান চলাকালে কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর ছুরি নিয়ে হামলা করে ফয়জুল রহমান নামে এক যুবক। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে সে বলেছে, জাফর ইকবাল ‘ইসলামের শত্রু’, তাই তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সে হামলা করেছে।

সে প্রসঙ্গে ইয়াসমিন হক বলেন, “একটা ছেলেকে বুঝানো হয়েছে, সে (জাফর ইকবাল) ইসলামের বিরুদ্ধে লিখেছে… সে (ফয়জুল) যদি পড়ত, তাহলে বুঝত। এই যে তাকে র‌্যাডিকালাইজড করতে পেরেছে, এটা কখনো করা উচিত হয় নাই। এ ছাড়াও যারা আছে, তাদেরকে বুঝতে হবে আমাদের দেশ কীভাবে স্বাধীন হয়েছে, আমাদের দেশ সাম্প্রদায়িক ছিল না।”

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এই সাবেক অধ্যাপক বলেন, জাফর ইকবাল অন্তত ২০০ বই লিখেছেন, কোনো বইয়ে তিনি ইসলামের বিরুদ্ধে একটি লাইনও লেখেননি।

কিন্তু ফয়জুলের বয়সী ছেলেমেয়েদের ‘ডিপ্রেসড’ অবস্থায় ভুল বুঝিয়ে ভুল পথে টানা হচ্ছে বলে মনে করেন জাফর ইকবালের স্ত্রী।

“আমাদের শিক্ষার্থী ও সারাদেশের শিক্ষার্থীদের বুঝতে হবে,
যেটা ঘটে গেছে তা ঘটা উচিত হয় নাই। ২২-২৩ বছর ধরে আমরা বাচ্চাদের কী শিখায়ে আসতেছি… মুক্তিযুদ্ধের কথা, ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা।

অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপর হামলার প্রতিবাদে সোমবার রাজধানীর শাহবাগে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের আয়োজনে বিক্ষোভ সমাবেশে তার স্ত্রী ইয়াসমিন হক। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপর হামলার প্রতিবাদে সোমবার রাজধানীর শাহবাগে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের আয়োজনে বিক্ষোভ সমাবেশে তার স্ত্রী ইয়াসমিন হক। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

“আমি নিজে দেখেছি, বড় বড় মানুষ হাউ মাউ করে কানতেছে। সারা বাংলাদেশে সব জায়গায় কানতেছে। হয়ত তাদের রাগও হচ্ছে। কিন্তু আইসিইউতে তিনি (জাফর ইকবাল) যখন মুখ খুললেন- উনার প্রথম কথা ছিল- ‘আমার ছাত্রদের বোঝাও। ওরা যেন কোনো ভায়োলেন্স না করে। রাগ না করে’।”

জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার অবস্থানের কারণে অধ্যাপক জাফর ইকবালকে আগেও বহুবার হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ কারণ ২০১৬ সাল থেকেই সরকারের নির্দেশনায় তাকে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছিল।

সেই পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যেই জাফর ইকবালের ওপর হামলা হওয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে নতুন কোনো শঙ্কা অনুভব করছেন কি না জানতে চাইলে ইয়াসমিন হক বলেন, “সরকারের এখানে কিছু করার নেই। যা করার আছে সরকার অনেক বেশি করেছে। যতটুকু করা সম্ভব, করা হয়েছে। আমরা এর চেয়ে বেশি প্রটেকশন চাই না।”

হামলার পর রক্তাক্ত জাফর ইকবালকে
হামলার পর রক্তাক্ত জাফর ইকবালকে প্রথমে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং সেখান থেকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। মাথা, পিঠ ও হাতে ছয়টি জখম নিয়ে চিকিৎসাধীন এই শিক্ষককে আরও সপ্তাহখানেক হাসপাতালে থাকতে হতে পারে বলে জানান তার স্ত্রী।

ওই হামলার প্রতিবাদে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের আয়োজিত এই বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিয়ে স্বামীর শারীরিক অবস্থা জানানোর পাশাপাশি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ইয়াসমিন হক।

তিনি বলেন, “সবাই অনেকদিন ধরে জানে যে তার জন্য একটা হুমকি আছে। সে অনেক লাকি, সবার দোয়া আছে বলে ইনজুরির পরও বেঁচে গেছে। আপনার ওই ফ্যামিলির কথা চিন্তা করেন, ওই যে ব্লগাররা, যারা বাঁচে নাই। তাদের কী অবস্থা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের এটা একসেপ্ট করতে হবে যে, ঘটনা ঘটেছে, এটা কখনও ঘটা উচিত হয় নাই।”

Leave a Reply