Friday, April 19

ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ানক ৭ টি মৃত্যুদণ্ড, যা দেখলে আপনার বুক কেঁপে উঠবে…

৭ টি মৃত্যুদণ্ড –  ভয়ানক ৭ টি মৃত্যুদণ্ড- ইতিহাস খুবই নিষ্ঠুর আবার মজাদারও বটে। ইতিহাস বরাবরই আমার খুব ভাল লাগে, সম্ভবত স্কুলে একজন ভাল শিক্ষক পেয়েছিলাম বলে।

ইতিহাস নিয়ে বলতে গিয়ে প্রথম যে কথাটি মাথায় আসে তা হল সেই সময়কার শাসকরা নানা অমানবিক প্রথা মেনে চলত, বিশেষ করে কোন অপরাধীকে সাজা দেবার জন্য অথবা বিদ্রোহ দমন করবার জন্য।

এখানে আমরা পৃথিবীর সবথেকে নিষ্ঠুর ৭ রকমের প্রাণদণ্ড নিয়ে আলোচনা করব যা আপনার শিরদাঁড়ায় কাঁপুনি ধরিয়ে দেবে।

আমরা একটা ছোট্ট ইতিহাসের সফর সেড়ে ফেলি চলুন এবং এটা কোন ভাবেই বিরক্তিকর নয়।

১. ভাই মতি দাস জী

ভাই মতি দাস জী কে শিখ সমাজের অন্যতম সেরা শহিদ বলে বিবেচনা করা হয়। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বিরুদ্ধে মুগল অত্যাচার নিয়ে প্রতিবাদ করায় ঔরঙ্গজেব কাজীদের কে নির্দেশ দেয় তাকে প্রাণদণ্ড দেবার জন্য।

মতি দাস কে দুটো স্তম্ভে বেঁধে অত্যাচার করা হয়। তার কাছে শেষ ইচ্ছার কথা জানতে চাওয়া হয়েছিল। মতি দাসের উত্তর ছিল, “আমাকে প্রাণদণ্ড দেবার সময় যেন আমার মাথা আমার গুরুর দিকে থাকে”।

দুজন জল্লাদ দুমুখো একটা কড়াত তার মাথায় রেখেছিল। মতি দাস আসতে আসতে গুরু মন্ত্র জপতে শুরু করে। বলা হয় যে কড়াতটি তার শরীরকে পুরোপুরি দুটুকরো না করা পর্যন্ত মতি দাস মন্ত্র উচ্চারণ করে গিয়েছিলেন।

২. ফ্রাঙ্কোয়িস রাভাইলাক

ফ্রাঙ্কোয়িস রাভাইলাক একজন গুপ্তঘাতক ছিল, যে ফ্রান্সের হেনরি চতুর্থ কে হত্যা করেছিল। তার পাপের শাস্তি তো চরম হওয়ারই ছিল। এই হত্যার ষড়যন্ত্রের পিছনে কে কে আছে তা জানার জন্য তার ওপর বেশ কিছুদিন ধরে চরম অত্যাচার করা হয়েছিল, কিন্তু সে কারুর নাম বলতে অস্বীকার করেছিল এবং বলেছিল যে সে নিজে থেকেই এই কাজটি করেছে।

২৭শে মে তার ওপর শেষবারের জন্য অত্যাচার করা হয়েছিল তারপর তার হাত পা দঁড়ি দিয়ে চার ঘোড়ার সাথে বেঁধে তাদের চার আলাদা আলাদা দিকে দৌড় করানো হয়, যার ফলে তার শরীর চার টুকরো হয়ে যায়।

প্রাণদণ্ডের আগে তার ডান হাত সালফার দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং প্লাস দিয়ে তার বুক ও উরুর চামড়া জোড় করে টেনে তুলে দেওয়া হয়।

এক উচ্ছৃঙ্খল জনতা তার দেহের অবশিষ্ঠ অংশের কাছে জড়ো হয় এবং সেগুলি কে কেটে আরও টুকরো টুকরো করে দেয়।

৩. বালথাশার জেড়ার্ড

বালথাশার জেড়ার্ড একজন গুপ্তঘাতক ছিল এবং স্প্যানিস সম্রাট তৃতীয় ফিলিপ এর কাছ থেকে ২৫০০০ ক্রাউন পুরষ্কারের লোভে ইংল্যাণ্ডের তৃতীয় উইলিয়ামের হত্যা করে।

জেড়ার্ড কে হাজার চাবুকের ঘা মারা হয়। তার প্রাণদণ্ড খুবই ভয়ঙ্কর ছিল। সে যে ডান হাত দিয়ে উইলিয়ামকে হত্যা করেছিল প্রথমে সেটা গরম লোহার রড দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় তারপর প্লাসের সাহায্যে চামড়া টেনে তুলে ফেলা হয়।

তারপর তার শরীরকে চার টুকরো করে দেওয়া হয় এবং তার প্রাণ থাকা অবস্থাতেই তার হৃদপিণ্ড ছিঁড়ে বার করা হয়। এটা ইতিহাসের অন্যতম নিষ্ঠুর মৃত্যদণ্ডগুলির একটা।

৪. দ্বিতীয় এডওয়ার্ড

এডওয়ার্ড ছিলেন ইংল্যাণ্ডের রাজা। তিনি স্কটল্যাণ্ড আক্রমণ করেছিলেন বলে তাকে অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছিল। ১৩২৭ সালে এডওয়ার্ড কে ক্ষমতাচ্যুত ও বন্দী করা হয় এবং তার পুত্র তৃতীয় এডওয়ার্ড রাজা হন।

১৩২৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একটা গুজব ছড়ায় যে দ্বিতীয় এডওয়ার্ডের ওপর প্রচণ্ড শারীরিক নির্যাতন করে তাকে গোপনে হত্যা করা হয়েছে। বলা হয় যে তাকে মাটিতে উপর করে শুইয়ে তার পিছন দিকে লোহার ফাঁপা রড ঢুকিয়ে তার ভিতর দিয়ে গরম তেল ঢেলে দেওয়া হয় যার ফলে তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ পুড়ে যায়।

অনেক ইতিহাসবিদ মধ্যযুগের ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে সন্দিহান। বিশেষ করে এডওয়ার্ড যখন আবার সমকামী ছিলেন। তবে এডওয়ার্ডের খুন হওয়ায় সত্যি দুঃখজনক।

৫. সেন্ট লরেন্স।

অনেক সেন্টই তাদের ধর্মীয় দৃষ্ঠিভঙ্গির জন্য নিষ্ঠুর মৃত্যুর সম্মুখীন হয়েছেন। ২৫৭ খ্রিঃআঃ রোমান শাসক একটি আইন তৈরি করেন যেখানে বলা হয় যে যারা রোমান দেব দেবী কে পূজো করবেনা তাদের পদ এবং সম্পত্তি কেড়ে নেওয়া হবে।

তারপরেও অস্বীকার করলে প্রাণদণ্ড পর্যন্ত দেওয়া হতে পারে। পোপ দ্বিতীয় সিক্সটাসের বিরোধীতা করলে তাকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এই সময় সেন্ট লরেন্সকে হত্যা করা হয়।

সেন্ট লরেন্সকে গরম কয়লার উপর লোহার পাটাতন রেখে তার উপর বেঁধে দেওয়া হয়। যখন তাকে গরম পাটাতনে সেঁকা হচ্ছিল তখন সে চেঁচিয়ে বলে, “আমার এই দিকটা সেঁকা হয়ে গিয়েছে, আমাকে এবার উলটে দাও!” তার এই হাস্যকর মন্তব্যর জন্য তাকে পরে রান্না বিশেষ্ণজ্ঞ সেঁকা সেন্ট নামে ডাকা শুরু হয়।

৬. তরুণ কাটো

কাটো রোমের একজন কূটনৈতিকবিদ ছিলেন এবং তিনি সবসময় জুলিয়াস সিজারের বিরোধী ছিলেন। তিনি বলেছিলেন জুলিয়াস সিজারের শাসনে বাঁচার থেকে মৃত্যুকে তিনি আগে বেছে নেবেন।

পরবর্তীকালে সিজার রোমের সম্রাট হন এবং কাটো নিজের কথা মত তরোয়াল দিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্ঠা করেন ৪৬ খ্রিঃপূঃ।

যখন কাটোর চাকররা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পায় তারা শীঘ্রই ডাক্তারকে খবর দেয় এবং ডাক্তার এসে তাকে সেলাই করে প্রাণে বাঁচায়।

এরকম অবস্থায় যখন কাটোর জ্ঞান ফেরে এবং বুঝতে পারে যে তার মৃত্যু হয়নি তখন সে হাতে করে তার সেলাই ছিঁড়ে ফেলে এবং অত্যধিক রক্তক্ষরণের ফলে তার মৃত্যু হয়।

৭. গুরু তেগ বাহাদুর

গুরু তেগ বাহাদুর শিখদের নবম গুরু ছিলেন এবং মানবতার অধিকার রক্ষা করার অপরাধে তাকে চরম বলিদান দিতে হয়।

ইতিহাসে অনেক মানুষই নিজের ধর্ম কে রক্ষা করবার জন্য বলিদান দেয় কিন্তু গুরু তেগ বাহাদুর মানবতা কে রক্ষা করার জন্য শহিদ হন।

তিনি মুগল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। কারণ তার শাসনকালে কাশ্মীরে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের জোড় করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করাবার চেষ্ঠা চলছিল। গুরু তেগ বাহাদুর এই জোড় করে ধর্মান্তরের প্রতিবাদ করায় তাকে জেলে বন্দী করে দেওয়া হয়।

১৬৭৫ সালে গুরু তেগ বাহাদুর এবং তার আরও কিছু সঙ্গীকে দিল্লী নিয়ে আসা হয় এবং বলা হয় যে তাদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে হবে না হলে তাদের মৃত্যুদণ্ড হবে।

গুরু তেগ বাহাদুর তা অস্বীকার করলে প্রকাশ্য দিবালোকে পাঁচ দিন ধরে তার ওপর চরম অত্যাচার করা হয়। তারপরেও গুরু তেগ বাহাদুর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে অস্বীকার করলে তার শিরশ্ছেদ করা হয়।

তার এই বলিদানের কথা শুধু শিখরাই নয় সারা ভারত মনে রেখেছে। তার এই আত্মবলিদানের জন্য তাকে “হিন্দ-দি-চাদর” উপাধি দেওয়া হয়েছে, যার মানে ভারতের ঢাল।

এই হল ইতিহাসের ৭টি সবথেকে নিষ্ঠুর মৃত্যুদণ্ড

Leave a Reply