Friday, April 26

রাবিতে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের দফায় দফায় হামলা

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন পালন করতে গেলে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় হামলা করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
রোববার সকাল দশটার কিছু আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধন শুরু করতে গেলে ছাত্রলীগ এ হামলা চালায়। এসময় কোটা আন্দোলনকারীদের কিল-ঘুষি ও লাথি মেরে তাদের ব্যানার ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ ওঠে। এসময় ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর বেলা সাড়ে এগারোটায় দ্বিতীয় দফায় লাঠি-সোটা নিয়ে হামলা করে রাবি ছাত্রলীগ।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সকাল পৌনে দশটার দিকে কোটা আন্দোলনকারীরা মানবন্ধন কর্মসূচি পালনের জন্য গ্রন্থাগারের সামনে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বর থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমদ রুনুর নেতৃত্বে দলবেঁধে গ্রন্থাগারের সামনে আসেন ছাত্রলীগের ২৫-৩০ জন নেতাকর্মী। সেখানে এসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন রকম গালিগালাজ করে।

এসময় ছাত্রলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু মানববন্ধনের ব্যানার কেড়ে নেয়। ব্যানার নিয়ে দুই দিকে দাঁড়িয়ে থাকা কোটা সংস্কার আন্দোলনের রাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক অনন্ত আহসান ও নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আহ্বায়ক আবদুল্লাহ শুভকে আক্রমণ করেন ছাত্রলীগের সহসভাপতি মিজানুর রহমান সিনহা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহ হিল গালিব। তারা আন্দোলনকারী ওই দুজনকে এলোপাথাড়ি থাপ্পড় ও কিল-ঘুষি মারতে থাকে। আর অন্যদেরকে ধাওয়া দেয় ছাত্রলীগের অন্য নেতাকর্মীরা। এসময় আন্দোলনকারীরা কেউ গ্রন্থাগারের সামনে দিয়ে, কেউ গ্রন্থাগারের পেছন দিয়ে পালিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এগারোটার দিকে লাঠি-সোটা হাতে হামলা করে রাবি ছাত্রলীগের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীরা। এসময় শহীদুল্লাহ কলা ভবনের সামনে উপস্থিত সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

হামলার শিকার নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আহ্বায়ক আবদুল্লাহ শুভ আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা যখন মানববন্ধনে দাঁড়াতে ধরছি তখন ছাত্রলীগ নামের কিছু সন্ত্রাসী আমাদের ওপর হামলা করে। আমরা সেখান থেকে কোনো রকমভাবে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসেছি। তারা আমাদের ব্যানারও কেড়ে নিয়েছে। পালিয়ে না আসলে তারা হয়তো আমাদের খুন করে ফেলতো। আমরা এখন নিরাপদ স্থানে লুকিয়ে আছি। আমাদের শারীরিক অবস্থা ভাল না, অতিদ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।’
তবে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া। তিনি আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা কাউকে হামলা করিনি। আমরা এমনিতেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। এটা দেখেই আন্দোলনকারীরা ভয়ে পালিয়ে গেছে।’

এদিকে আজ আন্দোলন শুরু আগে কয়েকজন আন্দোলনকারী নেতা ডেকে পাঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান। সকাল ৯টা ২০ মিনিটের দিকে কোটা আন্দোলনের আহ্বায়ক মাসুদ মোন্নাফের নেতৃত্বে প্রক্টর দফতের যান ১২-১৫ জন নেতাকর্মী। এরপর ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে প্রক্টর দফতরের একটি ভেতরের কক্ষে মাসুদ মোন্নাফ ও রাশেদুল ইসলাম মুবিনকে নিয়ে যান প্রক্টর। সেখানে সাংবাদিকদের বের করে দিয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার শামসুল আজম, মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন সহকারী প্রক্টরকে নিয়ে আলোচনা করেন তারা।

সেখান থেকে বের হয়ে মাসুদ মোন্নাফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মানববনন্ধন কর্মসূচি পালনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে অনুমতি চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের অনুমতি না দিয়ে হুমকি দিয়েছেন। মানববন্ধনের সময় আমাদেরকে কেউ হামলা করলে তারা দায়ভার নিবে না বলে জানিয়েছেন।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমাদের কাছে খবর আছে, আন্দোলনের নামে একটা চক্র বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে, তাই অনুমতি দেয়া হয়নি।’

Leave a Reply