Friday, April 19

ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক চর্চায় গুরুত্ব দিতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

50347_b2প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে লেখাপড়ার পাশাপাশি ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক চর্চায় সমান গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে আমাদের শিশুদের মেধা ও মননের বিকাশ ঘটে। খেলাধুলা, সংগীত চর্চা, সাংস্কৃৃতিক প্রতিযোগিতা- লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন রচনা, হস্তলেখা প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে আমাদের শিশুদের মেধা ও মনন বিকাশের সুযোগ হয়।
গতকাল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর আয়োজিত ৪৬তম শীতকালীন জাতীয় স্কুল ও মাদরাসা ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আলমগীর ও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন ফেডারেশন ও ক্রীড়া সংস্থার প্রধানগণ এবং অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন স্কুল, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং মাদরাসার শিক্ষার্থীবৃন্দ, শিক্ষক ও অভিভাবকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যুক্ত থাকলে শিক্ষার্থীরা জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ থেকে দূরে থাকবে । সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকাসক্তি থেকে আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে দূরে থাকতে হবে। কাজেই সেইভাবে সচ্চরিত্রের মাধ্যমে আদর্শবান হয়ে বাংলাদেশকে যেন আগামী দিনে নেতৃত্ব দিতে পারে, আমাদের আজকের ছেলেমেয়েদেরকে সেভাবেই নিজেদেরকে গড়ে তোলার জন্য আমি আহ্বান জানাই। প্রধানমন্ত্রী এ সময় শুধু লেখাপড়ায় শিক্ষার্থীদের ব্যস্ত না রাখার জন্য শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘যারা শিক্ষক তাদেরকে আমি বলবো, তারা এদিকে আরো মনোযোগী হবেন। শুধু সারাদিন যদি ঐ-‘পড়’, ‘পড়’, ‘পড়’- বলতে থাকেন তাহলে এটা কারোই ভালো লাগে না।’
আমাদের প্রতিবন্ধীরাও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে অনেক পুরস্কার নিয়ে আসছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পড়াশোনার সময় পড়াশোনাও করতে হবে সেই সঙ্গে খেলাধুলাটাও থাকতে হবে। সংস্কৃতি চর্চাও থাকতে হবে। সেইদিকে মনোযোগ দিয়েই আমি সবাইকে কাজ করার আহ্বান জনাচ্ছি।
এর আগে নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুল এবং বাংলাদেশ গার্ল গাইড অ্যাসোসিয়েশনের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ ডিসপ্লে উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে প্রায় এক বছর ধরে নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে যারা এই জাতীয় পর্যায়ে উঠে এসেছে তাদের সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, আজকে ছাত্রছাত্রীবৃন্দকে একটা কথা বলতে চাই- এই দেশটা আমাদের। আমরাই এদেশটাকে স্বাধীন করেছি- আমাদের মহান নেতা বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। স্বাধীনতার পর তিনি নিজে যেহেতু খেলাধুলা করতেন এবং খেলাধুলার প্রতি তার যথেষ্ট আকর্ষণ ছিল তাই তখনই তিনি বাংলাদেশ জাতীয় স্কুল ও মাদরাসা ক্রীড়া সমিতি গঠন করেন এবং জাতির পিতাই ছিলেন তার প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং ১৯৭২ সাল থেকেই এই খেলাধুলার প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই ’৯৬ সালে যখন আমরা সরকার গঠন করি তখনই আমরা এই খেলাধুলার প্রতি বিশেষভাবে মনোযোগ দেই। ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার সরকারে এসে বিশেষ করে আমাদের দেশীয় খেলাগুলোকে গুরুত্ব দিই এবং তৃণমূল পর্যায়ে জেলা-উপজেলা থেকেই ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, কাবাডি, অ্যাথলেটিক্স, ভলিবল, হ্যান্ডবল, ব্যাডমিন্টন, দাবা, সাঁতারসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আয়োজনের উদ্যোগ নেই। তাই আজকে তৃণমূল পর্যায় থেকে এসব প্রতিযোগীরা উঠে এসেছে। যারা ভবিষ্যতে আরো উন্নত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে সক্ষম হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
প্রধানমন্ত্রী হকিতে ছেলেদের বিভাগে চ্যাম্পিয়ন (পদ্ম অঞ্চল) আরমানীটোলা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় এবং রানার্স আপ শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ স্কুল ও কলেজের অধিনায়ক ও কর্মকর্তার হাতে ট্রফি, প্রাইজমানি ও খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত পুরস্কার তুলে দেন। মেয়েদের হকিতে (পদ্ম অঞ্চল) চ্যাম্পিয়ন আরজত আতরজান উচ্চবিদ্যালয় এবং রানার্স আপ সালন্দর উচ্চ বিদ্যালয়। ক্রিকেটে (পদ্ম অঞ্চল) ছেলেদের বিভাগে চ্যাম্পিয়ন মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় ও রানার্স আপ রংপুর জেলা স্কুল এবং মেয়েদের ক্রিকেটে (পদ্ম অঞ্চল) চ্যাম্পিয়ন আজিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় এবং রানার্স আপ দেবীগঞ্জ রিভারভিউ উচ্চ বিদ্যালয়সহ সকল বিজয়ীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বিজয়ীর ট্রফি, পুরস্কারের অর্থের চেক এবং সনদপত্র গ্রহণ করেন। এছাড়া, ব্যক্তিগত ও অন্যান্য দলগত ইভেন্টের বিজয়ীদের হাতেও পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। অ্যাথলেটিক্সে গোলাপ অঞ্চল জাতীয় চ্যাম্পিয়ন এবং পদ্ম অঞ্চল জাতীয় রানার্স আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করায় বরিশাল ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদ্বয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ট্রফি গ্রহণ করেন।

Leave a Reply