Tuesday, December 16

শীতকালীন অ্যালার্জি অবহেলা নয়

অ্যালার্জি এক অসহনীয় ব্যাধি। এতে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, এমনকি শ্বাসকষ্টও হতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে অ্যালার্জি সামান্য অসুবিধা। কারও জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। শীতকালে এর রোগের প্রকোপ বেশি বাড়ে।

অ্যালার্জি হওয়ার কারণ : প্রত্যেক মানুষের শরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেম থাকে। কোনো কারণে এ ইমিউন সিস্টেমে সমস্যা দেখা দিলে তখনই অ্যালার্জি বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আমাদের শরীর সব সময় ক্ষতিকর বস্তু (পরজীবী, ছত্রাক, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া) প্রতিরোধের চেষ্টা করে। রোগ প্রতিরোধের এ প্রচেষ্টার নামই ইমিউন। কখনো কখনো আমাদের শরীর সাধারণত ক্ষতিকর নয়- এমন বস্তুর প্রতি অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে থাকে। ্এর নামই অ্যালার্জি। এটি দুধরনের হয়ে থাকে।

অ্যালার্জিজনিত সর্দি বা অ্যালার্জিক রাইনাইটিস। এর উপসর্গ হচ্ছে অনবরত হাঁচি, নাক চুলকানো,নাক দিয়ে পানি পড়া বা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, কারও কারও চোখ দিয়েও পানি পড়ে এবং চোখ লাল হয়ে যায়।

অ্যালার্জি রাইনাইটিস দুধরনের। যেমন- সিজনাল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস হলে একে বলে সিজনাল অ্যালার্জিকরাইনাইটিস। আরেকটি হলো পেরিনিয়াল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস। সারা বছর ধরে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস হলে একে বলে পেরিনিয়াল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস।

অ্যালার্জির লক্ষণ ও উপসর্গ : সিজনাল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস হলে ঘন ঘন হাঁচি নাক দিয়ে পানি পড়ে, চোখ দিয়ে পানি পড়ে। পেরিনিয়াল অ্যালার্জি করাইনাইটিসের উপসর্গগুলো সিজনাল অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের মতোই। এ ক্ষেত্রে উপসর্গগুলোর তীব্রতা কম হলেও স্থায়িত্ব বেশি হয়।

অ্যাজমা বা হাঁপানি : কাশি, ঘন ঘন শ্বাসের সঙ্গে বাঁশির মতো শব্দ হওয়া বা বুকে চাপ চাপ লাগা, শিশুদের ক্ষেত্রে মাঝে মধ্যে ঠান্ডা লাগা এর প্রধান উপসর্গ। এ ছাড়া বুকের ভেতর বাঁশির মতো শাঁ শাঁ আওয়াজ, শ্বাস নিতে ও ছাড়তে কষ্ট, ঘন ঘন কাশি, বুকে আঁটসাঁট বা দম বন্ধ ভাব, বসা থেকে উঠে বসে থাকা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।

চিকিৎসা : সমন্বিতভাবে অ্যালার্জির চিকিৎসা করা যায়। যেমন- অ্যালার্জেন পরিহার ও ওষুধ প্রয়োগ। এ ক্ষেত্রে যখন অ্যালার্জির সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায়, তখন তা পরিহার করে চললেই সহজ উপায়ে অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অ্যালার্জি ভেদে ওষুধ প্রয়োগ করেও তা থেকে অনেকটাই উপশম পাওয়া যায়। অ্যালার্জি জাতীয় দ্রব্য এড়িয়ে চলা ও ওষুধের পাশাপাশি ভ্যাকসিন গ্রহণ সুস্থ থাকার অন্যতম চিকিৎসা পদ্ধতি। এটা অ্যালার্জি রোগীর দীর্ঘমেয়াদি সুস্থ থাকার একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি।

বর্তমানে চিকিৎসা ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। প্রথম দিকে ধরা পড়লে অ্যালার্জিজনিত রোগ একেবারে সারিয়ে তোলা সম্ভব। অবহেলা করলে এবং রোগ অনেক দিন ধরে চলতে থাকলে নিরাময় করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে আ্যলার্জির ওষুধ চিকিসৎকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া মোটেও উচিত নয়।

লেখক : চর্ম-যৌন ও হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন

সহকারী অধ্যাপক, ত্বক চর্ম যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিভাগ, সোহওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, শেরেবাংলানগর, ঢাকা

Leave a Reply